বিএনপির জনসমর্থন ক্ষুণ্ণ করতে দুই একটি ইসলামি দল ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
সোমবার (১৪ জুলাই) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ অভিযোগ করেন তিনি।
দেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলির সঙ্গে বিএনপিকে জড়িয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে- এমন অভিযোগ করে রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, কুমিল্লার মুরাদনগরে হিন্দু নারী ধর্ষণ থেকে শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাম্য হত্যা ও মিটফোর্ডের ঘটনায় এমন শক্তি জড়িত, যারা ‘তাবেদার শক্তির এ দেশীয় ধারক ও বাহক’। বিএনপির প্রতি জনগণের সমর্থন ক্ষুণ্ণ করার জন্য এগুলো আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র এবং তাতে যুক্ত হয়েছে দুই একটি ইসলামিক দল।
তিনি বলেন, এর মধ্যে একটি ইসলামি দল আমরা জানি যে, তারা যুগ যুগ ধরে আওয়ামীপন্থি ও পার্শ্ববর্তী দেশেরপন্থি। তারাই সবচেয়ে বেশি ষড়যন্ত্র করছে। কারা এসব করছেন তাদের পরিচয় আমরা জানি।
রিজভী বলেন, রাষ্ট্রের ভেতর ও বাহির থেকে গভীর চক্রান্ত চলছে এবং টার্গেট করা হয়েছে তারেক রহমানকে। জাতীয়তাবাদী শক্তিকে দুর্বল করার লক্ষ্যেই এসব হামলা চালানো হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে একটি গুপ্ত সংগঠন কর্তৃক অপপ্রচার ও অবমাননাকর বক্তব্যের প্রতিবাদে ড্যাব ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার উদ্যোগে এই প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা মহানগর উত্তর ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. সরকার মাহবুব আহমেদ শামীমের সভাপতিত্বে তুমুল বৃষ্টির মধ্যে সমাবেশ শেষে একটি মিছিল বের করা হয়। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ড্যাবের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার ও ড্যাবের সদ্য সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশীদ।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপপ্রচার প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, তারেক রহমান টার্গেট হওয়ার কারণ হলো- তিনি ১০ হাজার মাইল দূরে থেকে বিগত ৫-৬ বছর দেশের মানুষকে সংগঠিত করছেন। গ্রামাঞ্চল থেকে শহর এবং শহরাঞ্চল থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত তিনি মানুষকে সংগঠিত করেছেন। এ জন্যই কয়েকটি রাজনৈতিক দলের যত প্রতিহিংসা। তারেক রহমান কোনো অপরাধীকে প্রশ্রয় দেননি, এখন পর্যন্ত ৫ থেকে ৬ হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছেন। বিএনপি বৃহৎ পরিবার, বিভিন্ন জায়গায় অনেকে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে অপকর্মের চেষ্টা করছে, তবে এসব জানার সাথে সাথে ব্যবস্থা নিচ্ছেন তারেক রহমান। নেতাকর্মীদের প্রতি কোনো উসকানির মুখে প্রতিক্রিয়া না দেখানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
রিজভী বলেন, গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে সমস্ত অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র আমরা সামাল দিতে পারব, কারণ জনগণ আমাদের সাথে আছে। শাসকগোষ্ঠী জনগণকে ভয় পাচ্ছে। যদি জনগণ তাদের সঙ্গে থাকত, তাহলে তারা কখনোই নির্বাচন পেছানোর কথা বা পিআরের কথা বলত না। তারা ধোঁয়াশা তৈরি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, আধিপত্যবাদী শক্তি জাতীয়তাবাদী শক্তিকে কখনোই পছন্দ করে না। কারণ, তারা জানে জাতীয়তাবাদী শক্তি দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকারের প্রশ্নে কোনো আপোস করবে না। এই কারণেই একের পর এক সংঘাতমূলক ও সহিংস ঘটনা এবং রক্তপাত ঘটানো হচ্ছে।
রিজভী আরও অভিযোগ করেন, বিভিন্ন ইসলামি সংগঠন প্রোপাগান্ডা ও কন্টেন্ট তৈরি করে ফেসবুকে ছড়াচ্ছে। কুমিল্লার মুরাদনগরে এক হিন্দু মেয়ে ধর্ষণের ঘটনায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে যুবদলকে দায়ী করা হয়েছে। যদিও ভুক্তভোগীর স্বামী নিজেই বলেছেন, এতে বিএনপির কেউ জড়িত ছিল না; বরং স্থানীয় এক উপদেষ্টার লোকজন জড়িত ছিল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মোবাইল চুরির দায়ে এক মানসিক ভারসাম্যহীন যুবককে পিটিয়ে হত্যা এবং ছাত্রদলের সাম্যকে হত্যার ঘটনা উল্লেখ করে রিজভী প্রশ্ন তোলেন, এগুলো কিসের আলামত? তিনি বলেন, লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে ড. ইউনূসের বৈঠক ও একটি যুক্ত বিবৃতি প্রকাশের পর থেকেই বাংলাদেশে পিআর (সংখ্যানুপাতিক) পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবি শুরু হয়েছে। এর উদ্দেশ্য এখন পরিষ্কার।
মিটফোর্ডের সামনে ব্যবসায়ী সোহাগকে হত্যার প্রসঙ্গ টেনে রিজভী বলেন, এ ঘটনা দুই দিন পরে ভাইরাল হলো কেনো? ভিডিওতে যাদের ছবি দেখা গেছে তাদের অনেকের নাম মামলায় নেই তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অনুরোধ, তারা যেন সত্য তথ্য উদঘাটন করে।
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, আধিপত্যবাদী শক্তি এবং আধিপত্যবাদী শক্তির দালালরা গভীর চক্রান্ত করছে। তাদের পাতানো ষড়যন্ত্রের জালে আমাদের নেতাকর্মী বা আমাদের পক্ষের সমর্থক, পেশাজীবী সংগঠন কাউকে পা দেওয়া যাবে না।
ড্যাবের সদ্য সাবেক সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ডা. মো. মেহেদী হাসান ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ড্যাবের সাধারণ সম্পাদক ডা. নিয়াজ শহীদ রানার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন ও বক্তব্য রাখেন ড্যাব নেতা ডা. এম এ সেলিম, ডা. মো. মোসাদ্দেক হোসেন বিশ্বাস ডাম্বেল, ডা. মোস্তাক রহিম স্বপ্নন, ডা. সফিউল্লাহ ঝিন্টু, ডা. মুজিবুল হক দোয়েল, ডা. এরফানুল হক সিদ্দিকী, ডা. শেখ ফরহাদ, ডা. আদনান হাসান মাসুদ, ডা. হাসনুল শামীম, ডা. মো. সামছুল আলম, ডা. শহিদুল হাসান বাবুল, ডা. জাফর ইকবাল, ডা. সায়িদ মেহবুব কাদির, ডা. আতিকুর রহমান সুজন, ডা. ইমতিয়াজ হোসেন সাজিদ, ডা. শহিদুল হক রাহাত, ডা. এনামুল হক এনাম, ডা. আশফাক কনক, ডা. আরেফিন সুমন, ডা. জাহিদ ইকবাল, ডা. জালাল উদ্দিন রুমী, ডা. রুস্তম আলী মধু, ডা. মাহমুদুল আলম তারেক, ডা. আল আমিন, ডা. শাওন বিন রহমান, ডা. জাহানারা লাইজু, ডা. রাকিবুজজামান, ডা. নুরুল্লাহ মাসুদ, ডা. সালাহউদ্দিন আল আজাদ সোহাগ, ডা. আতিক, ডা. শাকিল, ডা. মারুফ, ডা. গালিব হাসান, ডা. লাবিদ রহমান, ডা. ইব্রাহিম রহমান বাবু, ডা. সাইফ, ডা. ইরাজ, ডা. বাসেদুর রহমান সোহেল, ডা. রাকিবুল ইসলাম আকাশ, ডা. আমিরুল ইসলাম পাভেল, ডা. মীর রাসেখ অভি, ডা. মাসুম, ডা. রুদ্র, ডা. মনজুর রশীদ, কামরুল ইসলাম, ডা. মোহাম্মদুল হক জনি, ডা. শেখ মাহাবুব, ডা. মোতাহার, নার্স নেত্রী বিলকিস জাহান চৌধুরী, এ্যামট্যাবের মহাসচিব বিপ্লবুজ্জামান বিপ্লব সহ কয়েক শ’ চিকিৎসক।
মন্তব্য করুন