শুক্রবার, ২৯ আগস্ট ২০২৫, ১৪ ভাদ্র ১৪৩২
কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৪ আগস্ট ২০২৫, ০৪:৫২ পিএম
আপডেট : ১৪ আগস্ট ২০২৫, ০৬:২২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

শিক্ষা সংস্কার প্রস্তাবনা জানাল ছাত্রশিবির

সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম। ছবি : কালবেলা
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম। ছবি : কালবেলা

শিক্ষা সংস্কার প্রস্তাবনা তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ প্রস্তাবনা তুলে ধরেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম।

সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল ইসলাম সাদ্দাম, দপ্তর সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ সিবগা, প্রচার সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষা সংস্কারে ৩০ দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। তাদের দেওয়া প্রস্তাবনার একটি দফায় বলা হয়েছে, শিক্ষা কারিকুলামে নির্দিষ্ট শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য সামরিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকতে হবে। যা শারীরিক শিক্ষা, শিক্ষার্থীদের শারীরিক সুস্থতা, শৃঙ্খলা, আত্মবিশ্বাস ও দলগত কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি করবে এবং তাদের সামগ্রিক ব্যক্তিত্ব উন্নয়ন ও আত্মরক্ষায় সহায়ক হবে। এক্ষেত্রে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে বিভিন্ন স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে হবে।

জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘চতুর্থ শিল্পবিপ্লব (4IR) উপযোগী বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত (STEM) শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রযুক্তিনির্ভর, উদ্ভাবনমূলক ও গবেষণাভিত্তিক পাঠ্যক্রম প্রণয়ন করতে হবে। বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হলে STEM শিক্ষার সম্প্রসারণ, আকর্ষণীয় পাঠ্যক্রম, প্রযুক্তিনির্ভর প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা, শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবনী দক্ষতা, প্রযুক্তি- সচেতনতা ও বিজ্ঞানভিত্তিক জ্ঞান অপরিহার্য। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পদার্থ বিজ্ঞান, গণিত ও রসায়নের মতো মৌলিক বিষয়গুলোকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে হবে। পাশাপাশি মৌলিক বিভাগগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষক এবং গবেষক নিযুক্ত করতে হবে।’

লিখিত বক্তব্যে ছাত্রশিবির সভাপতি বলেন, ‘জাতীয় শিক্ষাক্রমে অবশ্যই বাংলা, ইংরেজি এবং আরবি-(উপজাতিদের/ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের জন্য তাদের পছন্দ অনুযায়ী ভাষা) তিনটি ভাষা শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। পৃথিবীর অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ভাষা যেমন, চাইনিজ, জাপানিজ, স্প্যানিশ, জার্মান ইত্যাদি ভাষা শিক্ষা উৎসাহিত করতে হবে। শিক্ষার মানোন্নয়ন, বৈশ্বিক যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধি, সাংস্কৃতিক সমঝোতা, আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে অংশগ্রহণ, উচ্চশিক্ষা এবং কূটনৈতিক সক্ষমতা অর্জনের জন্য শিক্ষার্থীদের মাতৃভাষা বাংলা, আন্তর্জাতিক ভাষা ইংরেজি এবং ইসলামী ও মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক যোগাযোগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আরবি ভাষায় দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। ইংরেজি ও আরবি ভাষায় দক্ষ শিক্ষকের সংকট দূর করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ভাষা শিক্ষায় শুধু পঠন-পাঠন নয়, বরং শ্রবণ (Listening) ও কথন (Speaking) দক্ষতা উন্নয়নের ওপর জোর দিতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা বাস্তব জীবনে কার্যকর ভাষা-দক্ষতা অর্জন করতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘শিক্ষা বাজেটকে জিডিপির ন্যূনতম ৬ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে হবে, যা গবেষণা, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং প্রযুক্তির জন্য ব্যবহার করা হবে। শিক্ষা খাতে ২০% বাজেট বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে এবং বরাদ্দ করা বাজেটের অর্থ পরিকল্পিতভাবে গবেষণা ও অবকাঠামো উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করতে হবে। আমাদের বর্তমানে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড বেশি। যার ফলে, আমরা চাইলে এই সুবিধা কাজে লাগিয়ে দক্ষ ও যোগ্য সুনাগরিক তৈরি করতে পারব।’

প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ঝরে পড়া রোধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বিশেষত, শিশুদের জন্য স্কুল ফিডিং প্রকল্প সম্প্রসারণ, আর্থিক সহায়তা, খেলাধুলার উপর্যুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতকরণ এবং অনগ্রসর অঞ্চলগুলোতে ইনসেনটিভ প্যাকেজ (উচ্চ বেতন, বাড়ি ভাড়া, পরিবহন ভাতা) দিয়ে দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ প্রদান করতে হবে বলেও প্রস্তাবনায় জানানো হয়।

অপর একটি দফায় জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার সর্বজনীনতা নিশ্চিত করতে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা আবশ্যক। কারণ, BANBEIS অনুযায়ী ২০২২ সালে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণিতে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর হার ছিল প্রায় ৩১ শতাংশ। সরকারি অর্থায়ন ও আইনগত বাধ্যবাধকতা ছাড়া এই সংকট নিরসন সম্ভব নয়। ১৯৯০ সালে প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। এর ৩৫ বছর হতে চললেও সেটি উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত উন্নীত করা হয়নি। যা জাতি হিসেবে শিক্ষার প্রতি আমাদের উদাসীনতার বহিঃপ্রকাশ। অন্যদিকে প্রথম শ্রেণি থেকে পর্যায়ক্রমে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা বিদ্যমান রয়েছে। সেটিকে খুব দ্রুত পর্যায়ক্রমে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষাব্যবস্থার প্রতিটি স্তরে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ এবং মেধাবীদের প্রাধান্য নিশ্চিত করতে একটি স্বাধীন ও স্বতন্ত্র শিক্ষা নিয়োগ কমিশন (এডুকেশন সার্ভিস কমিশন) গঠন করতে হবে, যা বিভিন্ন স্তরের নিয়োগ পরীক্ষা, মূল্যায়ন, নিয়োগ, পদায়ন ও পদোন্নতি পরিচালনার নীতিমালা প্রণয়ন ও পরিচালনা করবে। এর অধীনে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য আলাদা পে-স্কেল ঘোষণা করতে হবে।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে নারীদের জন্য বিশেষ কোটা বাতিল 

আন্তর্জাতিক ফেলোশিপে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন ছাত্রদলের ঊর্মি

স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে বাসায় ফিরেছেন খালেদা জিয়া

সাতক্ষীরার পুলিশ সুপারের মায়ের মৃত্যুতে প্রেস ক্লাবের শোক

প্রকৌশলীদের মর্যাদা রক্ষায় আইইবি’র ৫ দফা দাবি

পুলিশের গাড়িতে হামলা চালিয়ে আসামি ছিনতাই

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের লিগপর্বের ড্র অনুষ্ঠিত, রিয়াল-বার্সার প্রতিপক্ষ কারা?

সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ভিডিওটি ভুয়া

আজীবন থাকা, কাজ ও ব্যবসার সুযোগ দেবে সৌদি, কত টাকা লাগবে

ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক

১০

এবার যুক্তরাজ্য থেকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের 

১১

ফিফা কোয়ালিফায়ারে শেষবারের মতো নামছেন মেসি, জানালেন নিজেই

১২

অপারেশন থিয়েটারে রোগীকে রেখে স্বাস্থ্যকর্মীর টিকটক, অতঃপর...

১৩

গকসু নির্বাচন : রেকর্ডসংখ্যক মনোনয়ন বিতরণ 

১৪

চট্টগ্রামে হবে আইইসিসি মাল্টিডেস্টিনেশন এডুকেশন এক্সপো 

১৫

চব্বিশের বিজয়ীদের কার্যকলাপে দেশের মানুষ অতিষ্ঠ : কাদের সিদ্দিকী

১৬

ঢাকার মার্কিন দূতাবাসে হামলার আশঙ্কা নিয়ে যা বললেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

১৭

প্যানেলে তন্বির জন্য পদ শূন্য রাখলেও একই পদে লড়ছেন বাগছাসের এক নেতা

১৮

বিশ্বকাপ বাছাইয়ের শেষ দুই ম্যাচের জন্য আর্জেন্টিনা দল ঘোষণা

১৯

আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে নতুন রাজনৈতিক জোট

২০
X