

সংবিধানে রাষ্ট্রপতির আদেশ জারির কোনো বিধান নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির এখন কেবল অধ্যাদেশ প্রণয়নের ক্ষমতা রয়েছে, তবে ‘প্রেসিডেন্ট অর্ডার’ জারি করার কোনো সাংবিধানিক বিধান আর নেই।
তিনি বলেন, বিএনপি জুলাই জাতীয় সনদের বাইরে যায়নি এবং দলটি এখনো সেই সনদের নীতিমালার সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত অবস্থানে আছে। তবে সনদের বাস্তবায়ন সংক্রান্ত সরকারের প্রস্তাবনায় ‘নোট অব ডিসেন্ট’ অংশটি বাদ দেওয়ায় প্রশ্ন তোলেন তিনি।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, জুলাই জাতীয় সনদ ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে স্বাক্ষরিত হয়েছে। সেই সনদে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন দফায় কিছু নোট অব ডিসেন্ট আছে, সেই নোট অব ডিসেন্টগুলোর ক্ষেত্রে বলাও আছে সনদে যে, দলগুলো যদি নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখ করে জনগণের ম্যান্ডেট পায়, নোট অব ডিসেন্টগুলো তারা সেভাবে বাস্তবায়ন করতে পারবে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, এখানে আমরা শতভাগ একমত, এখনো আমরা সেই জায়গায় আছি এবং আমরা স্বাক্ষরিত সনদের বাইরে নেই। কিন্তু যেভাবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সরকারের কাছে সনদ বাস্তবায়নের উপায় সংক্রান্ত যে সুপারিশ প্রদান করেছে তার মধ্যে নোট অব ডিসেন্টের অংশগুলো উল্লেখ নেই…, একদম নেই। শুধু প্রস্তাবগুলোর ব্যাপারে ৪৮টি দফা দিয়ে তারা একটা তফসিল করেছে। সেই তফসিলে প্রস্তাবগুলো সম্পর্কে গণভোটের প্রস্তাব করেছে।
তিনি বলেন, গণভোটের বিষয়ে আমরা একটা জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে একই দিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনে গণভোটের মাধ্যমে জনগণের সম্মতি নেওয়ার জন্য জুলাই জাতীয় সনদের ওপরে আমরা রাজি হয়েছিলাম…, সেই জায়গায় আমরা আছি।
সালাহউদ্দিন বলেন, এখন এই স্বাক্ষরিত সনদের বাইরে গিয়ে কোনো কোনো রাজনৈতিক দল জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য যে অযৌক্তিক এবং নতুন নতুন ইস্যু নিয়ে আন্দোলন করছে সে ব্যাপারে তারা বক্তব্য প্রদান করতে পারেন। সনদের স্বাক্ষরিত যে বিষয়গুলো আছে তার বাইরে যদি সরকার কোনো সিদ্ধান্ত নিতে যায়, সেটা কোনো রাজনৈতিক দল যারা সনদে সই করেছে তাদের ওপরে কোনো দায়-দায়িত্ব বর্তাবে না বা মানতে বাধ্য নয়।
রাষ্ট্রপতির আদেশ জারির বিধান সংবিধানে নেই জানিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, আদেশের বিষয়ে আমরা স্পেসিফিক কোনো প্রস্তাব এরকম দেইনি যে, আদেশ কে জারি করবে। আমরা একটা সংবিধানের মধ্যে আছি। সাংবিধানিকভাবে এই সরকার শপথ নিয়েছে, সবকিছু আইনানুগভাবে চলছে। এখন কোনো অধ্যাদেশ জারি করার ক্ষমতা এই সংবিধান অনুসারে রাষ্ট্রপতির নেই। যদি কোনো আদেশ জারি করতে হয়, সেই আদেশের মর্যাদা যদি আইনি হয়, সেই আদেশ জারি করার মতো কোনো সাংবিধানিক অবস্থা বাংলাদেশে নেই।
তিনি বলেন, কারণ প্রেসিডেন্ট অর্ডারটা জারি করার একটা বিধান একসময় ছিল যতদিন পর্যন্ত বাংলাদেশের সংবিধান গৃহীত হয়নি। আপনারা সবাই জানেন, সেরকম ‘পিও’ অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট অর্ডার নিয়ে তখন রাষ্ট্র চলত। সংবিধান গৃহীত হয়ে যাওয়ার পরে রাষ্ট্রপতির আদেশ জারির আর কোনো বিধান রইলো না। সেটা বিলুপ্ত হয়েছে। এখন কী রকম আদেশ দেবে, সেই আদেশের মর্যাদা কি আইনি মর্যাদা হবে? সেটা এখনো সরকার নির্ধারণ করেনি। একমাত্র অধ্যাদেশ প্রণয়ন করা ছাড়া রাষ্ট্রপতির অন্য কোনোভাবে আইন প্রণয়ন করার ক্ষমতা এখন নেই। আদেশ জারি করার কোনো বিধান বর্তমান সংবিধানে নেই। তবে, এখন কোনো প্রজ্ঞাপনকে আদেশ নামকরণ করতে চায় এবং সেটার আইনি মর্যাদা না থাকে সেটা প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরকার প্রকাশ করতে পারে গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে। আইন হবে না সেটা। যোগ করেন তিনি।
গণভোট ইস্যুতে আলোচনার সুযোগ রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, সেটা সরকার যদি আলোচনার জন্য আহ্বান জানায় সেক্ষেত্রে আলোচনার সুযোগ থাকতে পারে। রাজপথে তো নয়।
মন্তব্য করুন