কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:০৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

গণতন্ত্র চাইলে ‘মব ভায়োলেন্স’ থেকে সরে আসতে হবে : ফখরুল

গণতন্ত্র চাইলে ‘মব ভায়োলেন্স’ থেকে সরে আসতে হবে : ফখরুল
ছবি : সংগৃহীত

দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে ‘মব ভায়োলেন্স’ থেকে সরে আসতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বুধবার (১৯ নভেম্বর) দুপুরে গুলশানের একটি হোটেলে ‘চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে বিএনপি’ শীর্ষক সংকলিত গ্রন্থের প্রকাশনা উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রের প্রধানতম কথা হচ্ছে, আপনাকে অন্যের মত সহ্য করতে হবে… টলারেন্স আমি কথা বলব, আপনার কথা সহ্য করব না, পিটিয়ে দেব, মব ভায়োলেন্স তৈরি করব, কিছু মানুষ জড়ো করে বলব যে ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও, তাকে মেরে ফেল পিটিয়ে… দিস ইজ নট ডেমোক্রেসি।

মির্জা ফখরুল বলেন, ডেমোক্রেসির মূল কথাটা হচ্ছে, আমি তোমার সঙ্গে একমত না হতে পারি, কিন্তু তোমার মত প্রকাশের যে স্বাধীনতা তাকে আমি আমার জীবন দিয়ে হলেও রক্ষা করব। দ্যাট ইজ ডেমোক্রেসি। দুর্ভাগ্যক্রমে আমরা এখানে অন্যের মতকে সহ্য করতে চাই না, আমরা তাকে উড়িয়ে দিতে চাই। এই জায়গা থেকে আমাদের সরে আসতে হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে সত্যিকার অর্থেই যদি আমরা টেকসই একটা ব্যবস্থা তৈরি করতে চাই, ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হতে না চাই তাহলে গণতন্ত্রকে আমাদের এখানে প্রতিপালন করতে হবে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্মাণ করতে হবে। কোন দল কে জিতল, কে হারল… এটা জরুরি নয়। জরুরি হচ্ছে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানটা শক্তিশালী হলো কিনা, আমাদের জুডিশিয়ারি ইন্ডিপেন্ডেন্ট কিনা, আমাদের মিডিয়া ইন্ডিপেন্ডেন্ট কিনা, আমাদের পার্লামেন্ট ইফেক্টিভ কিনা, আমাদের দেশ আইনের শাসনে চলছে কিনা, সুশাসন চলছে কিনা, মানুষের সামাজিক মর্যাদা, সুরক্ষা এবং মানবাধিকার আমরা রাখতে পারছি কিনা। এই বিষয়গুলোকে নিয়েই আমাদের ভবিষ্যতে কাজ করতে হবে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্বাচন আসছে। বিএনপির উপরে দায়িত্ব বেশি পড়ছে। বিএনপিকে সত্যিকার অর্থেই এমন একটি মোর্চা গড়ে তুলতে হবে, যে মোর্চা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে অতীতে, লড়াই করবে এবং গণতন্ত্রকে এখানে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেবে। এই মোর্চাই আমাদের এখানে গড়তে হবে। আমাদের নেত্রী দেশ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া … তার দিকে তাকালেই তো আমরা উত্তরটা পেয়ে যাই। একজন নেত্রী যিনি গণতন্ত্রের জন্যে, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্যে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে আনার জন্য কত নির্যাতন সহ্য করেছেন এবং দীর্ঘ ছয় বছর কারা অন্তরীণ থেকেছেন। এখনো অসুস্থ অবস্থায় তিনি কিন্তু এই গণতন্ত্রের কথাই বলছে।

তিনি বলেন, ৫ আগস্ট তিনি (খালেদা জিয়া) একটা খুব ছোট্ট একটা বিবৃতি দিয়েছিলেন। ওই বিবৃতিতে খুব সুন্দর করে বলেছিলেন, প্রতিশোধ নয়, প্রতিহিংসা নয়। আসুন আমরা গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করতে সবাই একযোগে কাজ করি। এই যে ধারণা এটাকে আমাদের মূলত কাজে লাগাতে হবে। আমি আন্তরিকভাবে মনে করি, আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব তিনি নির্যাতিত হয়েছেন, তাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে, অত্যাচার করা হয়েছে। তারপরেও বিদেশে থেকে তিনি শুধু আমাদের দলকে নয়, গোটা জাতিকে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন, তিনি উজ্জীবিত করেছেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমার মাঝে মাঝে একটু হতাশ লাগে। হতাশ লাগে যখন দেখি, একদিকে ফ্যাসিস্ট হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্যে রায় দেওয়া হচ্ছে কোর্টে। অন্যদিকে দেখি মব ক্রেসি, মব ভায়োলেন্স চলছে। এটা কীসের আলামত আমি জানি না। আমি তো মনে করি, ওই রায়ের যে গুরুত্ব সেটাকে কমিয়ে দেওয়ার জন্য একটি বিশেষ মহল ভিন্ন খাতে বিশ্ব দৃষ্টিকে নেওয়ার জন্য এই কাজগুলো করেছে। এই বিষয়গুলো আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। আমরা যারা গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করি, লড়াই করি, আমাদের ছেলেরা যারা প্রাণ দিয়েছে- আজকে কোনো একটা মহল অত্যন্ত সচেতনতার সঙ্গে, চালাকির সঙ্গে সেটাকে বিভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে কিনা এটা আমাদের দেখা উচিত। এর মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করছে কিনা?

তিনি বলেন, আমি খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই, বিএনপি কোনো বিপ্লবী দল নয়। বিএনপি একটা লিবারাল ডেমোক্রেটিক পার্টি। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি এবং গণতন্ত্রের জন্যই আমরা সারাজীবন ধরে লড়াই করেছি। এই দেশের মানুষ বাংলাদেশের মানুষও তার গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্যই শত শত বছর ধরে লড়াই করেছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, এখানে নিঃসন্দেহে যারা বিভিন্ন মতবাদে বিশ্বাস করেন, করতে পারেন। কিন্তু আমরা বিএনপি, খুব পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, উই আর লিবারেল ডেমোক্রেটস। এতে আমাদেরকে কেউ ভুল বোঝার কোনো সুযোগ আমি দিতে চাই না। আমি বিপ্লবী নই। আই এম এ লিবারেল ডেমোক্রেট। আমরা এই ভূখণ্ডে বাস করি তাদের সবাইকে নিয়ে, সব ধর্ম, বর্ণ, মত সবাইকে একসাথে করে আমরা একটা রেইনবো স্টেট নির্মাণ করতে চাই, এটা আমাদের ঘোষিত নীতি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, যুগ্ম মহাসচিব শহীদউদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, যুবদলের আবদুল মোনায়েম মুন্না, গ্রন্থের সম্পাদক বাবুল তালুকদার, প্রকাশক অধ্যাপক বিএম নাগিব হোসেন বক্তব্য দেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

যে কথা বলতে গিয়ে আল্লাহ ৭ বার শপথ করেছেন!

জাতিসংঘ প্রতিবেদনকে ঐতিহাসিক ঘোষণা দিয়ে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ

গারো পাহাড়ের জঙ্গলে অজ্ঞাত নারীর অর্ধগলিত মরদেহ

জুলাই যোদ্ধা ও শহীদদের কাছে আমি আজীবন কৃতজ্ঞ : নুরুদ্দিন আহাম্মেদ অপু

বিশ্বমঞ্চে জামদানিতে মিথিলার চমক

গণতন্ত্র চাইলে ‘মব ভায়োলেন্স’ থেকে সরে আসতে হবে : ফখরুল

মঞ্চে মোদিকে পা ছুঁয়ে প্রণাম করলেন ঐশ্বরিয়া

হেফাজতে থাকা আসামির বক্তব্য প্রচারের ব্যাখ্যা দিলেন আরএমপি কমিশনার

ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম, বিক্রিও চড়া

মুশফিককে প্রশংসায় ভাসিয়ে যা বললেন দুবারের বিশ্বকাপজয়ী পন্টিং

১০

জকসু নির্বাচন / শহীদ সাজিদের কবর জিয়ারত করল ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল

১১

জকসু উপলক্ষে ৯ ডিসেম্বর থেকে বন্ধ থাকবে উন্মুক্ত লাইব্রেরি

১২

ভাঙল শতরানের জুটি, শততম টেস্টে হাসল মুশফিকের ব্যাট

১৩

যে কারণে বাংলাদেশের পরবর্তী ম্যাচ খেলতে পারবেন না রাকিব-তপু

১৪

আজ বিশ্ব পুরুষ দিবস

১৫

দীনেশ চন্দ্র পালের আত্মার চিরশান্তি কামনায় প্রার্থনা সভা

১৬

একটানে জালে উঠল ২০০ মণ ইলিশ

১৭

এত বড় তারকা হয়েও হামজার মধ্যে বিন্দুমাত্র অহংকার নেই : পাপ্পু

১৮

ঘরে বসেই মেট্রোরেলের কার্ড রিচার্জ করবেন যেভাবে

১৯

বিএনপিসহ ৬টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ইসির বৈঠক চলছে

২০
X