সংলাপের কথা বলে জনগণের দৃষ্টিকে সরকার ভিন্নদিকে নিয়ে যেতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ও গণতন্ত্র একসঙ্গে যায় না। এরা শুধু মিথ্যা কথা বলে।
আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) মিলনায়তনে এক সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
‘বাংলাদেশে গণতন্ত্রের সংকট উত্তরণ প্রয়াসে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা একটি পর্যালোচনা’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)।
ফখরুল বলেন, নির্বাচনের সময় নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের বিকল্প নেই। সুতরাং আগে পদত্যাগ করুন। তারপর দেখব সেটা (তত্ত্বাবধায়ক সরকার) কীভাবে করতে হয়। দেশের মানুষ সেটা জানে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে আমাদের লড়াই কিন্তু বিএনপিকে ক্ষমতায় নেওয়ার জন্য নয়। মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই করছি আমরা। গোটা দেশের মানুষ আজকে আমাদের সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধভাবে অংশগ্রহণ করছে।
তিনি বলেন, আজকে বলব আমাদের মাঝে কেন যেন সাহসের অভাব। আসুন, আমরা যে যেখানে আছি সাহস করে দাঁড়াই। আজকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বলুন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার বলুন, সবকিছুকে অর্জন করতে হলে শক্তভাবে দাঁড়াতে হবে। আজকে সংকটটা কঠিন। জাতি হিসেবে আমাদের দুর্ভাগ্য যে, এখনো আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারিনি। পাকিস্তান বিভাজনের পর থেকে এখানে গণতন্ত্রের চর্চা হয়নি। বারবার গণতন্ত্র হোঁচট খেয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে যে দলটি ক্ষমতায় আছে, তারা বারবার গণতন্ত্রের কথা বলে। কিন্তু সেই দলটির হাতে গণতন্ত্র বারবার নিহত হয়েছে। গণতন্ত্র আমাদের অস্থিতে মজ্জায় ছিল। যা আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল চেতনা ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ একে একে গণতান্ত্রিক সব অধিকার হরণ করেছে। তারা জরুরি অবস্থা, সামরিক আইন এবং শেষে বাকশাল কায়েম করেছিল।
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ ও গণতন্ত্র একসঙ্গে যায় না। মানুষ যা চায় আওয়ামী লীগ তার উল্টো করে। তাদের চরিত্র হলো ফ্যাসিবাদী, তারা উগ্রবাদী। তারা অন্যকে কথা বলতে দেয় না। গত ১৪ বছর ধরে হিংসাত্মক কথা বলে আসছে। তারা হলো ফ্যাসিবাদী ও সন্ত্রাসী রাজনৈতিক দল। তারা তো আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে মেরে বের করে দিয়েছে। তাদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ হলো ফ্যাসিবাদী ও সন্ত্রাসী।
বিদ্যুৎ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, তাদের নাকি বিদ্যুৎ ফেরি করে বিক্রি করতে হবে। ৩ ঘণ্টাও তো বিদ্যুৎ মিলছে না। হাসপাতালে সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। কৃষিতে সেচ দেওয়া যাচ্ছে না। সবাই তো বিল দিচ্ছি। তাহলে টাকা গেল কোথায়? তারা তো কয়লা আনতে পারে না। আসলে তারা শুধু মিথ্যা কথা বলে। তাদের টাকা নেই, ডলারও নেই। জাতির কাছে তাদের জবাবদিহি করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ ডাইভারশন খুব ভালো পারে। তারা একটি ইস্যু আরেকদিকে নিতে বেশ পটু। সংলাপ নিয়ে আওয়ামী লীগের তিন নেতা তিন রকম কথা বললেন। আসলে আমরা যে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাব না, সেটা এবং বিদ্যুৎ সংকট নিয়ে দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে এসব করছে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সম্পর্কে ফখরুল বলেন, গণমাধ্যম ঠিকমতো স্বাধীনভাবে লিখতে ও বলতে পারেন না। কারণ ফ্যাসিবাদ ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ইতোমধ্যে অসংখ্য মামলা দায়ের করা হয়েছে। অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জাতিসংঘসহ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানিয়েছে।
সভায় উপস্থিত দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, এই সরকারের সময় ফুরিয়ে আসছে। সে জন্যই আজকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমেরিকা যাব না। অন্য মহাদেশে যাব। এখানেই তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে তাকে যেতে হবে। ইনশাআল্লাহ শেখ হাসিনার দুঃশাসন থাকবে না।
ইউট্যাবের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান এবং সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক নুরুল ইসলামের যৌথ পরিচালনায় সভায় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ড. শামসুল আলম সেলিম, অধ্যাপক ড. তৌফিকুল ইসলাম মিথিল ও খান মো. মনোয়ারুল ইসলাম শিমুল।
মন্তব্য করুন