মানুষের জীবনে ভালোবাসা, সম্পর্ক ও স্মৃতি- এই তিনটি বিষয় গভীরভাবে জড়িত। প্রিয়জনের মুখ, হাসি, কথা, ব্যবহার- সবই হৃদয়ের পাতায় গভীর ছাপ ফেলে রেখে যায়। কেউ যখন দুনিয়া ছেড়ে চলে যায়, তখন তার স্মৃতিগুলোই বেঁচে থাকে কাছের মানুষের মাঝে। প্রযুক্তির এই আধুনিক যুগে অনেকেই মৃত আত্মীয় বা প্রিয়জনের ছবি মোবাইল ফোনে সংরক্ষণ করে রাখেন, তাদের স্মরণে মাঝে মাঝে সেই ছবি দেখেন, আবেগে ভেসে যান। এটি যেন এক ধরনের মানসিক শান্তির উৎস হয়ে দাঁড়ায় অনেকের কাছে।
কিন্তু একজন মুসলমানের জীবন শুধুই আবেগ দিয়েই নয়, চলে শরিয়তের বিধান অনুযায়ী। ইসলামে প্রতিটি কাজের আগে দেখা জরুরি- এটি হালাল কি হারাম? জায়েয কি নাজায়েয? আবেগ, ভালোবাসা কিংবা সামাজিক রীতিনীতির চেয়েও বেশি গুরুত্ব পায় আল্লাহর হুকুম এবং রাসুল (সা.)-এর সুন্নাহ।
এই প্রেক্ষাপটে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে- মোবাইলে মৃত ব্যক্তির ছবি রাখা কি ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে অনুমোদিত? এটি কি আত্মার শান্তির মাধ্যম, নাকি কোনো গুনাহের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে? এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত ইসলামি স্কলার শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেছেন, মানুষের ফটোগ্রাফির যে ছবি আছে, অর্থাৎ যা মোবাইল কিংবা অন্য কোনো ডিভাইসে তোলা হয় কিন্তু প্রিন্ট করা হয় না- এটা নিয়ে উলামায়ে কেরামের দুটি মত রয়েছে। এক শ্রেণির উলামায়ে কেরাম জায়েয বলেন। অন্য শ্রেণি নাজায়েযের পক্ষে। অতএব, যারা জায়েযের পক্ষে তাদের ভাষ্য অনুযায়ী মোবাইলে মৃত ব্যক্তির ছবি রাখা যাবে। আর যারা নাজায়েযের পক্ষে, তাদের ভাষ্যমতে মোবাইলে মৃত ব্যক্তির ছবি রাখা যাবে না। তবে প্রিন্ট করা ছবি অথবা তুলিতে আঁকা ছবি নাজায়েয হওয়ার ব্যাপারে কোনো আলেমের দ্বিমত নেই।
এদিকে অনেকে আবার জানতে চান, মোবাইলে রাখা মৃত ব্যক্তির ছবি দেখলে গোনাহ হবে কি না। এ প্রসঙ্গে শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেছেন, কোনো মানুষ মারা গেছেন এবং মোবাইলে তার ছবি আছে- এমন অবস্থায় কেউ যদি তার ছবি দেখতে চান সেক্ষেত্রে পুরুষ মানুষ পুরুষের ছবি এবং নারীরা নারীর ছবি দেখলে গোনাহ হবে না। এ ছাড়া মাহরাম নারীদের ছবি দেখলেও গোনাহ হবে না। তবে, মৃতদের ছবি প্রিন্ট করে টাঙিয়ে রাখলে গোনাহ হবে।
হাদিস শরিফে হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, নবী (সা.) একবার কাবাঘরে প্রবেশ করলেন। সেখানে তিনি ইবরাহিম (আ.) ও মরিয়ম (আ.)-এর ছবি দেখতে পেলেন। তখন তিনি বলেন, তাদের কী হলো? অথচ তারা তো শুনতে পেয়েছে, যে ঘরে প্রাণীর ছবি থাকবে, সে ঘরে ফেরেশতারা প্রবেশ করেন না। এই যে ইবরাহিমের ছবি বানানো হয়েছে, (ভাগ্য নির্ধারক অবস্থায়) তিনি কেন ভাগ্য নির্ধারক তীর নিক্ষেপ করবেন! (বোখারি : ৩৩৫১)
মন্তব্য করুন