ঘুম মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সারাদিনের পরিশ্রম, দৌড়ঝাঁপ আর মানসিক চাপ থেকে মুক্ত হয়ে মানুষ ঘুমের মধ্যে প্রশান্তি খুঁজে পায়। ইসলামে ঘুমকে শুধু শরীরের বিশ্রাম নয়, বরং আল্লাহর এক বিশেষ নেয়ামত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘আর আমি তোমাদের নিদ্রাকে করেছি ক্লান্তি দূরকারী, রাত্রিকে করেছি আবরণ’। (সুরা নাবা : ৯-১০)
মানুষ যখন ঘুমিয়ে পড়ে, তখন তার আত্মা দেহ থেকে একপ্রকার বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং এক রহস্যময় জগতে প্রবেশ করে। সেখানেই মানুষ স্বপ্নের মাধ্যমে অনেক কিছু দেখে, অনুভব করে, আবার ভুলেও যায়।
ইসলামী শিক্ষায় স্বপ্নকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথমটি হলো, আর-রু’ইয়া বা কল্যাণকর ও সত্য স্বপ্ন। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে সুসংবাদ বা সতর্কতা হিসেবে আসে। আর দ্বিতীয়টি হলো, আল-হুলম বা দুঃস্বপ্ন। এটি শয়তানের পক্ষ থেকে আসে এবং মানুষকে ভয় দেখানো বা বিপথে নেওয়ার জন্য সৃষ্টি হয়।
স্বপ্নে সাপ দেখলে কী হয়?
আমাদের আশপাশের অনেকে অনেক সময় ভয়ংকর স্বপ্নের কথা শোনান। বিশেষ করে অনেকে স্বপ্নে সাপ দেখার কথা বলে থাকেন। তাই কেউ কেউ জানতে চান, স্বপ্নে সাপ দেখলে কী হয়। এতে ভয়াবহ কোনো ক্ষতি আছে কি না, বুঝতে চান তারা।
এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত ইসলামি স্কলার শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, স্বপ্নে সাপ বা হিংস্র কোনো জীবজন্তু দেখলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সেটা আপনার শত্রুতা বোঝায়। অর্থাৎ আপনার শত্রু আছে। আবার অনেক সময় যখন হিংস্র কোনো জন্তু আপনাকে দৌড়াচ্ছে, সাপে দৌড়াচ্ছে, বাঘে দৌড়াচ্ছে এরকম কোনো দৃশ্য দেখেন, সেগুলো দুইটার একটা হতে পারে— প্রথমত, শয়তান মানুষকে পেরেশানি করার জন্য, নাজেহাল করার জন্য এই স্বপ্নগুলো দেখায়। এগুলো ব্যাখ্যাহীন। আবার অনেক সময় কারও ওপর যদি কালো জাদু করা হয়, দুষ্ট জিন ভর করে, তখন সে এজাতীয় স্বপ্ন দেখে।
যা বলা হয়েছে হাদিসে
হাদিসে বলা হচ্ছে, ভালো স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে, আর খারাপ স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে আসে । দুঃস্বপ্ন বা খারাপ স্বপ্ন দেখলে নবীজি (সা.) উম্মতদের আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করতে বলেছেন। আবার কোনো কোনো হাদিসে খারাপ স্বপ্ন দেখলে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনার পাশাপাশি বাম দিকে তিনবার থুথু ফেলার কথাও এসেছে। (তিরমিজি : ৩৪৫৩)
আবু সালামা (রহ.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে এসেছে, আমি আবূ কাতাদাকে (রা.) বলতে শুনেছি, আমি এমন স্বপ্ন দেখতাম যা আমাকে রোগাক্রান্ত করে ফেলত। অবশেষে আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ভালো স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। তাই যখন কেউ পছন্দনীয় কোনো স্বপ্ন দেখে তখন এমন ব্যক্তির কাছেই বলবে, যাকে সে পছন্দ করে। আর যখন অপছন্দনীয় কোনো স্বপ্ন দেখে, তখন যেন সে এর ক্ষতি ও শয়তানের ক্ষতি থেকে আল্লাহর আশ্রয় চায়, তিনবার থু থু ফেলে এবং কারও কাছে বর্ণনা না করে। তাহলে এ স্বপ্ন তার কোনো ক্ষতি করবে না। (বোখারি : ৬৫৬৮)
কালো জাদুর ক্ষতি থেকে বাঁচার ৫ আমল
এক. উসমান ইবনে আফফান (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় যে ব্যক্তি তিনবার নিচের দোয়াটি পাঠ করবে, কোনো কিছুই তার অনিষ্ট করতে পারবে না। দোয়াটি হলো, بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
উচ্চারণ : বিসমিল্লাহিল্লাজি লা-ইয়াদুররু মাআস্মিহি শাইয়্যিন ফিল আরদি ওয়ালা ফিস-সামায়ি ওয়া-হুয়াস-সামিউল আলিম।
অর্থ : আমি আল্লাহর নাম নিচ্ছি। জমিন ও আসমানের কোনোকিছুই যাঁর নামের বরকতে ক্ষতি সাধন করতে পারে না। তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (তিরমিজি : ৩৩৮৮)
দুই. সকাল-সন্ধ্যার আরেকটি দোয়া أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ
উচ্চারণ : আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিনশাররি মা খালাকা।
অর্থ : আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ বাণীর অসিলায় তিনি যা সৃষ্টি করেছেন, তার মন্দ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। এই দোয়াটি সন্ধ্যার সময় পড়লে ওই রাতে কোনো সাপ-বিচ্ছু ইত্যাদি কষ্ট দিতে পারে না। (তিরমিজি : ৩৪৩৭)
তিন. জাদু দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেলে জিবরাইল আলাইহিস সালাম নবীজিকে (সা.) এই দোয়া পড়ে ফুঁ দিয়েছিলেন। بِاسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ مِنْ كُلِّ شَىْءٍ يُؤْذِيكَ مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ اللَّهُ يَشْفِيكَ بِاسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ
উচ্চারণ : বিসমিল্লাহি আরক্বিকা মিন কুল্লি শাইয়্যিন ইয়্যুজিকা মিন শাররি কুল্লি নাফসিন আও আইনিন হা-সিদিন, আল্লাহু ইয়াশফিকা বিসমিল্লাহি আরক্বিকা।
অর্থ : আল্লাহর নামে আমি আপনাকে ঝাড়-ফুঁক করছি, সকল কষ্টদায়ক বিষয় থেকে। প্রত্যেক আত্মা ও ঈর্ষাপরায়ণ চক্ষুর অনিষ্ট থেকে। আল্লাহ আপনাকে আরোগ্য করুন। আল্লাহর নামে আমি আপনাকে ঝাড়-ফুঁক করছি। (মুসলিম ২১৮৬, তিরমিজি ৯৭২)
চার. সুরা ফালাক ও নাস এক্ষেত্রে অনেক বেশি উপকারী। সকাল-সন্ধ্যা সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস প্রতিটি তিনবার করে পড়ার পরামর্শ দেন আলেমগণ।
পাঁচ. সুরা ফাতিহার অন্য নাম হলো সুরা শিফা অর্থাৎ আরোগ্য লাভের সুরা। এই সুরাও পড়া যেতে পারে।
মন্তব্য করুন