বহু ফজিলত ও মর্যাদা দিয়ে অভিষিক্ত মাস রমজান। মুমিন জীবনে আত্মগঠন ও প্রশিক্ষণের জন্য মাসটি অনন্য। রমজান মাসের শেষ ১০ দিন নাজাতের। যদিও রাসুলুল্লাহ (স.) উম্মতদের উদ্দেশ করে বলেন, রমজান পুরোটাই বরকত আর বরকত। এই মাসে অতীতের সব পাপ ক্ষমা করিয়ে নেওয়ার অবারিত সুযোগ রয়েছে।
আল্লাহর অনুগ্রহে পেতে রমজানের এ শেষ দশকে অনেকেই বিশেষ ইবাদত-বন্দেগিতে রত থেকে অতিবাহিত করেন। এ শেষ দশকেই আসে সেই সৌভাগ্যের রাত লাইলাতুল কদর। রমজানের শেষ দশকে ফরজ আমলের পাশাপাশি বিশেষভাবে কতগুলো আমল করেছিলেন নবীজি।
হজরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘সৎ কর্মশীলতার দিক দিয়ে আল্লাহর দৃষ্টিতে রমজানের শেষ দশকের চেয়ে মহৎ ও প্রিয় আর কোনো দিন নেই।’ (মুসনাদ আহমদ)।
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, একবার আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম- হে আল্লাহর রাসুল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি বলে দিন, আমি যদি লাইলাতুল কদর কোন রাতে হবে তা জানতে পারি, তাতে আমি কী (দোয়া) পড়ব?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি বলবে- ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুন তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নি।’
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালোবাস অতএব আমাকে ক্ষমা করে দাও।’ (মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)
নাজাতের এ দশকে বেশি বেশি দোয়া পড়া যাবে জরুরি। বিশেষ করে কোরআনের এ দোয়াগুলোও বেশি বেশি পড়া উচিত- ‘রাব্বানা মা খালাক্বতা হাজা বাতিলাং সুবহানাকা ফাক্বিনা আজান্নার।’
অর্থ ‘হে আমাদের প্রভু! তুমি এ (বিশ্বকে) বৃথা সৃষ্টি করোনি। তুমি পবিত্র। সুতরাং তুমি আমাদের আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা কর।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৯১)
‘রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনইয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়াক্বিনা আজাবান্নার।’ অর্থ : ‘হে আমাদের প্রভু! আমাদের দুনিয়া এবং পরকালেও কল্যাণ দান কর আর আমাদের আগুনের আজাব থেকে রক্ষা কর।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২০১)
‘রাব্বি ইন্নি জ্বালামতু নাফসি ফাগফিরলি।’
অর্থ: ‘হে আমার প্রভু! নিশ্চয় আমি আমার আত্মার ওপর অত্যাচার করেছি। সুতরাং তুমি আমাকে ক্ষমা কর।’ (সুরা কাসাস: আয়াত ১৬)
‘রাব্বানা ওয়াসিতা কুল্লা শাইয়ির রাহমাতাও ওয়া ইলমাং ফাগফির লিল্লাজিনা তাবু ওয়াত্তাবাউ সাবিলাকা ওয়াক্বিহিম আজাবাল ঝাহিম।’
অর্থ : ‘হে আমাদের প্রভু! তুমি প্রত্যেক বস্তুকে নিজ কৃপা ও জ্ঞান দ্বারা পরিবেষ্টন করে রেখেছ। সুতরাং যারা তওবা করে এবং তোমার পথ অনুসরণ করে তুমি তাদের ক্ষমা কর ও দোযখের শাস্তি থেকে রক্ষা কর।’ (সুরা আল-মুমিন : আয়াত ৭)
‘রাব্বানা আমান্না ফাগফিরলানা ওয়ারহামনা ওয়া আংতা খাইরুর রাহিমিন।’
অর্থ : ‘হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছি। অতএব তুমি আমাদের ক্ষমা কর ও আমাদের প্রতি রহম কর। তুমি তো দয়ালুদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দয়ালু।’ (সুরা মুমিনুন : আয়াত ১০৯)
‘রাব্বানাগফিরলানা ওয়ালি ইখওয়ানিনাল্লাজিনা সাবাকুনা বিল ঈমানি ওয়া লা তাঝআল ফি কুলুবিনা গিল্লাল লিল্লাজিনা আমানু রাব্বানা ইন্নাকা রাউফুর রাহিম।’
অর্থ : ‘হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের এবং ইমানে আগ্রহী আমাদের ভাইদের ক্ষমা কর এবং ইমানদারদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে কোনো বিদ্বেষ রেখো না। হে আমাদের পালনকর্তা! আপনি দয়ালু, পরম করুণাময়।’ (সুরা হাশর: আয়াত ১০)
মন্তব্য করুন