সলামি শরিয়া অনুযায়ী সামর্থ্যবান মুসলিমদের ওপর কোরবানি ফরজ করা হয়েছে। সামর্থ্য থাকার পরও যারা কোরবানি করে না রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তবে এ ইবাদত কবুলের জন্য তা যথাসময়ে সঠিক পদ্ধতিতে করা আবশ্যক।
কোরবানির সময়কাল হলো জিলহজ মাসের ১০ তারিখ থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত। এই তিন দিনের যে কোনো দিন কোরবানি করা জায়েজ।
তবে প্রথম দিন কোরবানি করা সর্বাপেক্ষা উত্তম। তারপর দ্বিতীয় দিন। তারপর তৃতীয় দিন। জিলহজ মাসের ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পর কোরবানি করা শুদ্ধ নয় (ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি : ৫/২৯৬)। একইভাবে ঈদুল আজহার নামাজের আগে কোরবানি করা বৈধ নয়। (কুদুরি, পৃষ্ঠা ১৯৮)
কোরবানি পশু জবেহ করার জন্য রয়েছে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার নিজের কোরবানির পশু নিজ হাতে জবাই করেছেন।
যার যার কোরবানির পশু তাদের নিজ হাতে জবাই করার কথাও এসেছে হাদিসে। কোরবানির পশু জবাইয়ের রয়েছে নিয়ম-পদ্ধতি ও দোয়া।
অধিকাংশ মানুষ কোরবানি নিয়ম-পদ্ধতি ও দোয়া না জানার কারণেই নিজের কোরবানি নিজেরা করেন না। অথচ কোরবানির নিয়ম-পদ্ধতি ও দোয়া খুবই সহজ। তবে পশু জবাইয়ের সময় সুন্নাতের অনুসরণে জবাই করাই উত্তম। তাহলো-
এক. পশু জবেহ করার সময় ‘بِسْمِ الله: বিসমিল্লাহ’ বলে জবেহ করা। অর্থাৎ বিসমিল্লাহ বলেই ছুরি চালানো শুরু করা। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে যেন পশু জবেহ করা না হয় সে বিষয়টি খেয়াল রাখা।
দুই. পশু জবেহ করার সময় একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, পশুর খাদ্যনালি, শ্বাসনালি আর দুই পাশে থাকা দুটি নালি কেটে দেওয়া। এ নালিগুলে কাটা হয়ে গেলেই পশু জবেহ বিশুদ্ধ হয়ে যায়।
তিন. পশু জবেহ করার জন্য ছুরি ভালোভাবে ধার দিয়ে নিতে হবে। যাতে জবেহ করার সময় পশুর কষ্ট না হয়। অনেকে একটি ছুরি দিয়ে একাধিক পশু কোরবানি করে থাকেন। সেক্ষেত্রে শেষ দিকে ছুরির ধার কমে যায়। তাই ছুরিতে ধার দিয়ে নেওয়া উত্তম।
হাদিসে এসেছে- ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘পশু জবেহ করার আগে ছুরি-চাকুতে ভালোভাবে ধার দিয়ে নেওয়া উত্তম।’ (মুসলিম)
চার. একটি পশুর সামনে অন্য পশুর জবেহ না করা। পশুর সামনে ছুরি-চাকুতে ধার না দেওয়া। এতে পশু ভয় পেয়ে যায়। এটি পশুকে কষ্ট দেওয়ারও শামিল।
পাঁচ. কোরবানি করার সময় পশুকে পশুর বাম কাতে শোয়ানো। সে সময় পশুর পাগুলো পশ্চিম দিকে থাকবে।
কোরবানির পশু জবেহ করার জন্য শোয়ানোর পর দোয়া পড়া। দোয়াটি হাদিসের বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে। যদিও অনেকে দোয়াটির সনদের ব্যাপারে মতপার্থক্য করেছেন। তবে এ দোয়াগুলো পড়ে কোরবানি করা উত্তম। তবে কেউ শুধু বিসমিল্লাহ বলে নালিগুলো কেটে দিলেই কোরবানি শুদ্ধ হয়ে যাবে। দোয়াটি হলো-
اَللَّهُمَّ إِنِّي وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ عَلَى مِلَّةِ اِبْرَاهِيْمَ حَنِيفًا وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ - إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ - لَا شَرِيكَ لَهُ وَبِذَٰلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ - بِسْمِ اللهِ اَللهُ اِكِبَر - اَللَّهُمَّ مِنْكَ وَ لَكَ
বাংলা উচ্চারণ- ‘ইন্নি ওয়াঝঝাহতু ওয়াঝহিয়া লিল্লাজি ফাতারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা আলা মিল্লাতি ইবরাহিমা হানিফাও ওয়া মা আনা মিনাল মুশরিকিন।
ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়ায়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। লা শারিকা লাহু ওয়া বি-জালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমিন। বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা মিনকা ও লাকা।’
যদি কেউ এ দোয়াটি না পারেন তবে ছোট্ট এ অংশটুকু পড়বেন-
بِسْمِ اللهِ اَللهُ اِكِبَر - اَللَّهُمَّ مِنْكَ وَ لَكَ
বাংলা উচ্চারণ : ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়া লাকা।’
নিজের পশু নিজে কোরবানি করলে পশু জবেহ করার পর এ দোয়া পড়া-
اَللهُمَّ تَقَبَّلْ لَهُ مِنِّى كَمَا تَقَبَّلْتَ مِنْ حَبِيْبِكَ مَحَمّدٍ وَّ خَلِيْلِكِ اِبْرَاهِيْم
বাংলা উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা তাকাব্বালহু মিন্নি কামা তাকাব্বালতা মিন হাবিবিকা মুহাম্মাদিও ওয়া খালিলিকা ইবরাহিম।’
অন্য কেউ কোরবানি বা অন্য কারো কোরবানি করলে এ দোয়া পড়া-
اَللهُمَّ تَقَبَّلْ لَهُ مِنِكَ-مِنْكُمْ كَمَا تَقَبَّلْتَ مِنْ حَبِيْبِكَ مَحَمّدٍ وَّ خَلِيْلِكِ اِبْرَاهِيْم
বাংলা উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা তাকাব্বালহু মিনকা-মিনকুম’ কামা তাকাব্বালতা মিন হাবিবিকা মুহাম্মাদিও ওয়া খালিলিকা ইবরাহিম।’
উল্লেখ্য, যদি কেউ একাকি কোরবানি দেয় এবং নিজে জবাই করে তবে বলবে মিন্নি; আর অন্যের কোরবানির পশু জবাই করার সময় ‘মিনকা-মিনকুম’ বলে যারা কোরবানি আদায় করছে তাদের নাম বলা।
মন্তব্য করুন