দেশের মূলধারার গণমাধ্যমে ২০২৩ সালে ছড়ানো ভুয়া খবরের পরিসংখ্যান নিয়ে অন্যান্য বছরের মতো এবারও বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বুম বাংলাদেশ। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, আগের বছরগুলোর তুলনায় ২০২৩ সালে গণমাধ্যমে ভুয়া খবর প্রকাশের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। গত বছর গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের মধ্যে রেকর্ড সংখ্যক ৪৪টি ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর খবর চিহ্নিত হয়েছে এবং গণমাধ্যমগুলো তাদের ফেসবুক প্ল্যাটফর্মে রেটিংয়ের মুখে পড়েছে। আগের তিন বছরের তুলনায় এই সংখ্যা অনেক বেশি।
বুম বাংলাদেশের পরিসংখ্যানে সর্বোচ্চসংখ্যক ভুয়া খবর প্রচার করেছে সময় টিভি, দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে আরটিভি ও বাংলানিউজ।
বুম বাংলাদেশের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভুয়া খবর প্রচারে টানা চতুর্থবারের মতো শীর্ষে রয়েছে বেসরকারি টেলিভিশন ‘সময় টিভি’। ২০২৩ সালে গণমাধ্যমটি এককভাবে সর্বোচ্চ ৯টি ভুয়া খবর প্রচার করেছে। এ ছাড়া ৭টি ভুয়া খবর প্রচার করে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে আরেক বেসরকারি টেলিভিশন আরটিভি এবং ৬টি ভুয়া খবর প্রকাশ করে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলানিউজ২৪।
এ ছাড়া ৫টি করে ভুয়া খবর প্রচার করেছে ঢাকা পোস্ট, আজকের পত্রিকা, সমকাল, আমাদের সময় ও দৈনিক ইত্তেফাক। ৪টি করে ভুয়া খবর প্রচার করেছে চ্যানেল ২৪, কালের কণ্ঠ, যুগান্তর, বাংলা ট্রিবিউন ও প্রথম আলো। ৩টি করে ভুয়া খবর প্রচার করেছে ডিবিসি নিউজ, বিডিনিউজ২৪, জাগোনিউজ২৪, জুম বাংলা, ডেইলি বাংলাদেশ, যমুনা টিভি, রাইজিং বিডি, একাত্তর টিভি ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশন। ২টি করে ভুয়া খবর প্রচার করেছে চ্যানেল আই, নাগরিক টিভি, ইনকিলাব, নয়া দিগন্ত, মানবকণ্ঠ, কালবেলা, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, নিউজ ২৪, মানবজমিন, বাংলা ভিশন, সংবাদ প্রকাশ, সারাবাংলা ডট নেট ও বাংলাদেশ জার্নাল। ১টি করে ভুয়া খবর প্রচার করেছে বৈশাখী টিভি, দৈনিক আমাদের সময়, সাম্প্রতিক দেশকাল, ঢাকা মেইল, দেশ টিভি, নিউ ন্যাশন, দেশ রুপান্তর, বাংলাদেশ টুডে, ভোরের কাগজ, সময়ের আলো, নিউজবাংলা, দৈনিক বাংলা, যায়যায়দিন, দৈনিক সংগ্রাম, ভোরের ডাক, প্রতিদিনের বাংলাদেশ, এনটিভি, নয়া শতাব্দী, বায়ান্ন টিভি ও বিবিএস বাংলা।
বুম বাংলাদেশের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে দেশীয় মূলধারার গণমাধ্যমে মোট ৪৪টি ঘটনায় ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর খবর প্রচার হতে দেখা গেছে। এই ৪৪টি ঘটনার মধ্যে কোনো ঘটনায় একটি গণমাধ্যমে ভুয়া খবরটি প্রচার হয়েছে, আবার কোনো কোনো ঘটনায় একটি ভুয়া খবর একাধিক গণমাধ্যমে জায়গা করে নিয়েছে। এমনও দেখা গেছে, তথ্য যাচাই না করে অন্যের খবর কপি করে প্রকাশের কারণে কোনো কোনো ঘটনায় ১৫ এর অধিক মূলধারার গণমাধ্যম একই ভুয়া খবরের ফাঁদে পা দিয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
বুম বাংলাদেশ পর্যবেক্ষণ করে দেখেছে, অধিকাংশ ভুয়া খবরই গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক খবরকে যাচাই না করে ভিন্ন দেশের স্থানীয়, অখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য নয় এমন গণমাধ্যম থেকে অসতর্কভাবে সংবাদ নেওয়ার ফলে। এছাড়া আন্তর্জাতিক সংবাদের ক্ষেত্রে পার্শ্ববর্তী দেশের গণমাধ্যমকে অনুসরণ করা, যাচাই না করে তাদের বরাতে সংবাদ প্রকাশ করাও অন্যতম কারণ।
বুম বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু পর, ২০২০ সালে দেশের মূলধারার গণমাধ্যমে মোট ২৩টি ভুয়া খবর চিহ্নিত করে ফেসবুকে তাদেরকে রেটিং করেছে। পরের বছর ২০২১ সালে ১১টি এবং ২০২২ সালে ১৬টি ভুয়া খবর চিহ্নিত করেছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ফেসবুকের ফ্যাক্ট চেক পার্টনার হিসেবে বুম বাংলাদেশ দেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত সেসব ভুয়া খবর নিয়ে কাজ করেছে, যেসব ভুয়া খবর গণমাধ্যমগুলো তাদের ফেসবুক প্ল্যাটফর্মে প্রচার করেছে। পরিসংখ্যানে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সেসব ভুয়া খবরের হিসেবই উঠে এসেছে, যেসব ভুয়া খবরকে খণ্ডন করে বুম বাংলাদেশ প্রতিবেদন তৈরি করেছে এবং গণমাধ্যমগুলোর সংশ্লিষ্ট ফেসবুক পোস্টকে রেট করেছে। তাই এই পরিসংখ্যানে বাংলাদেশে গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভুয়া খবরের পুরো চিত্র ফুটে উঠবে না বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
মন্তব্য করুন