কেরানীগঞ্জের টোটাইল খাল, খাল সংলগ্ন নিচু কৃষিজমি ও জলাশয় ভরাট করে গড়ে ওঠা মিলেনিয়াম সিটি নামক অবৈধ আবাসন প্রকল্পের সব কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন হাইকোর্ট। আজ সোমবার (২২ জানুয়ারি) মহামান্য হাইকোর্ট এই নির্দেশনা দেন।
একইসাথে টোটাইল খাল, খাল সংলগ্ন নিচু কৃষিজমি ও জলাশয়ের বর্তমান অবস্থা তদন্ত করতে, মিলেনিয়াম হাউজিং লিমিটেড কর্তৃক মাটি ভরাটের ফলে টোটাইল খালের যে ক্ষতি সাধিত হয়েছে তা নিরূপণ করতে এবং হাউজিং কোম্পানি কর্তৃক টোটাইল মৌজায় অবস্থিত জলাশয়, বন্যাপ্রবাহ অঞ্চল ও নিচু কৃষিজমির শ্রেণি পরিবর্তন প্রতিরোধ করতে ও আদালত কর্তৃক প্রদত্ত এ নির্দেশসমূহ প্রতিপালন বিষয়ে প্রতিবেদন আদালতে দাখিলের জন্য রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং ঢাকা জেলার জেলা প্রশাসককে নির্দেশ প্রদান করেছেন আদালত।
সেইসাথে মিলেনিয়াম হাউজিং লিমিটেড কর্তৃক অবৈধ ও অননুমোদিত আবাসন প্রকল্পের জন্য মাটি ভরাট থেকে বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (DAP) এ চিহ্নিত ‘জলাভূমি’, টোটাইল খাল, খাল সংলগ্ন নিচু কৃষিজমি ও জলাশয় রক্ষা ও সংরক্ষণে বিবাদীগণের ব্যর্থতা সংবিধান ও দেশে প্রচলিত আইনের পরিপন্থি বিধায় কেন তা অবৈধ এবং জনস্বার্থবিরোধী ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন মহামান্য আদালত। রুলে আইন ও বিধি অনুযায়ী টোটাইল খাল, খাল সংলগ্ন জলাশয় ও কৃষিজমি পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে এবং সংরক্ষণে বিবাদীগণকে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তাও জানতে চেয়েছেন মহামান্য আদালত।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ), এসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি), বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)- কর্তৃক দায়েরকৃত একটি জনস্বার্থমূলক (নং ৫১৩/২০২৪) মামলার প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম এবং বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বিভাগের ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ প্রদান করেন।
উল্লেখ্য, ঢাকা জেলাধীন কেরানীগঞ্জ উপজেলাধীন তারানগর ইউনিয়নের টোটাইল মৌজায় প্রায় ১০ একর আয়তনের স্থানীয়ভাবে পরিচিত ‘টোটাইল বিল’ অবস্থিত। বিলটি সিএস ১ ও ১০ দাগে খাল হিসেবে রেকর্ডভুক্ত। বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (DAP) এ উল্লিখিত মৌজাসমূহ জলাভূমি (water body) হিসেবে চিহ্নিত। নির্বিচারে এ খালের জলাশয় ও সংলগ্ন কৃষি উপযোগী নিচু জমি ভরাট করা হচ্ছে আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য। ইতোমধ্যে মিলিনিয়াম হাউজিং লিমিটেড নামক আবাসন প্রকল্পের নামে খালটি ভরাট করা হয়েছে এবং কোম্পানিটির সাইনবোর্ডসহ নানা স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট কোনো কর্তৃপক্ষের বৈধ অনুমোদন ছাড়াই চলছে তাদের কার্যক্রম। বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় জলাভূমি হিসেবে চিহ্নিত ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন এবং জলাশয় মাটি/বালু দ্বারা ভরাট করে উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণের সুযোগ নেই। আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়নের পূর্বে পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ করার ও পরিবেশগত ছাড়পত্র গ্রহণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট আইনি বাধ্যবাধকতার তোয়াক্কা না করে কোনোরূপ অনুমোদন ও পরিবেশগত ছাড়পত্র গ্রহণ ব্যতিরেকে খাল, জলাশয় ও নিচু কৃষি জমি ভরাট করে মিলেনিয়াম হাউজিং লিমিটেড নামক আবাসন প্রকল্পটি প্রকল্পের কাজ অব্যাহত রাখায় টোটাইল বিল যথাযথভাবে সংরক্ষণে ও প্রকল্পটির অবৈধ কার্যক্রম বন্ধে বেলাসহ ৪টি পরিবেশবাদী সংগঠন উল্লিখিত মামলা দায়ের করে।
মামলার বিবাদীগণ হলেন- ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ঢাকা জেলার জেলা প্রশাসক, ঢাকার পুলিশ সুপার, রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ, পরিবেশ অধিদপ্তর, ঢাকা জেলার উপপরিচালক, কেরানীগঞ্জ উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, কেরানীগঞ্জের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও মিলেনিয়াম হাউজিং লি.-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
বেলার পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন এডভোকেট মিনহাজুল হক চৌধুরী ও তাকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট এস হাসানুল বান্না। রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আযাদ সরকার।
মন্তব্য করুন