অন্য অনেক ক্রিকেটারের মতো প্রাক্তন ইংল্যান্ড অধিনায়ক মাইকেল ভনও টেস্ট ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। সম্প্রতি তিনি টেস্ট ক্রিকেট বাঁচানোর জন্য পাঁচটি বড় প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন। ভনের মতে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) তার প্রস্তাবগুলোকে গ্রহণ করা উচিত, কারণ টেস্ট ক্রিকেটের জন্য এসব প্রস্তাব দরকার বলে তিনি মনে করেন।
টেস্ট ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা দিন দিন কমছে এবং টি-টোয়েন্টি লিগের ক্রমবর্ধমান প্রভাব টেস্ট ক্রিকেটের ভবিষ্যৎকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। অনেক ক্রিকেটপ্রেমী দীর্ঘমেয়াদি টেস্ট ক্রিকেটের পরিবর্তে ছোট ফরম্যাটের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটকেই বেশি পছন্দ করছেন। উদাহরণস্বরূপ, সম্প্রতি লর্ডসে ইংল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার টেস্ট ম্যাচে ফাঁকা আসনগুলো চোখে পড়েছে, আর রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যকার টেস্ট সিরিজেও পুরো স্টেডিয়াম প্রায় খালি ছিল।
এই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মাইকেল ভন। তিনি টেলিগ্রাফে তার কলামে উল্লেখ করেছেন যে, এই ফাঁকা আসনগুলো টেস্ট ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য একটি সতর্কবার্তা হওয়া উচিত। তিনি আরও বলেন, তুলনামূলক দুর্বল দলের বিপক্ষে ম্যাচে দর্শকের সংখ্যা কম, তবে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচগুলোতে স্টেডিয়াম থাকে দর্শকে ভরপুর। এই কারণে ভন ৫ প্রস্তাব দিয়েছেন।
মাইকেল ভনের পাঁচটি প্রস্তাব:
দুই বিভাগে টেস্ট ক্রিকেট বিভাজন: ভনের প্রথম প্রস্তাব হলো টেস্ট ক্রিকেটকে দুইটি বিভাগে ভাগ করা। প্রতি বিভাগে ছয়টি দল থাকবে, এবং নির্দিষ্ট সময়ের পরে দ্বিতীয় বিভাগ থেকে শীর্ষ দলগুলোকে প্রথম বিভাগে উন্নীত করা হবে এবং প্রথম বিভাগের তলানির দলগুলোকে অবনমন করা হবে। ভনের মতে এটি প্রতিযোগিতায় প্রণোদনা যোগ করবে।
আইসিসি তহবিলের সমবণ্টন: ভন মনে করেন, আইসিসি যদি সমানভাবে তহবিল ভাগ করে, তাহলে প্রতিটি দেশের খেলোয়াড় উন্নয়নে সহায়তা হবে। বর্তমানে, ইংল্যান্ড, ভারত, ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোর ভালো মানের খেলোয়াড় তৈরি হচ্ছে, কিন্তু শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো দলগুলো এখনো কাঁচা প্রতিভার উপর নির্ভর করছে।
টেস্ট ক্রিকেটের জন্য আলাদা উইন্ডো: ভনের তৃতীয় প্রস্তাব হলো, প্রতি বছর তিনটি এক মাসব্যাপী উইন্ডোতে শুধুমাত্র টেস্ট ক্রিকেট খেলা হবে। এই সময়কালে কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট হবে না এবং সব দল একে অপরের বিপক্ষে খেলবে।
চার দিনের টেস্ট ও গোলাপি বল: ভন আরও প্রস্তাব করেছেন, প্রয়োজন হলে চার দিনের টেস্ট ম্যাচ খেলা যেতে পারে, যেখানে প্রতিদিন ৯৬ ওভার বোলিং হবে। খারাপ আলোয় ম্যাচ বন্ধ না করে গোলাপি বল ব্যবহার করা যেতে পারে।
দ্বিপাক্ষিক সাদা বলের ক্রিকেট সীমাবদ্ধকরণ: ভনের সর্বশেষ প্রস্তাব হলো, দ্বিপাক্ষিক সাদা বলের ক্রিকেট সীমিত করে শুধু বিশ্বকাপের সময়কালে খেলা হবে। তিনি মনে করেন, প্রতিটি দেশের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ চালানোর জন্য এটি প্রয়োজন।
এই প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করা হলে ভন মনে করেন, টেস্ট ক্রিকেটের পুনর্জন্ম হতে পারে এবং এটি নতুন প্রজন্মের কাছে আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে।
মন্তব্য করুন