শারজাহে শুরুতেই হোঁচট। সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে ২-১ সিরিজ হারে বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দল। নামমাত্র প্রতিপক্ষ ভেবে যাত্রা শুরু করলেও সিরিজের শেষে এসে আত্মবিশ্বাস, পরিকল্পনা ও পারফরম্যান্স—সব কিছুতেই দেখা গেল বড় রকমের ভাটা। কেন ব্যর্থ হলো বাংলাদেশ? ইএসপিএন ক্রিকইনফো বের করেছে এরকম পাঁচটি কারণ। দেখে নেওয়া যাক সেগুলো—
ভুল দৈর্ঘ্যে বল, উইকেট তুলে নিতে ব্যর্থ বোলাররা
তিন ম্যাচে বাংলাদেশ ছক্কা হাঁকিয়েছে বেশি, কিন্তু বাউন্ডারি খেয়েছে বেশি। আর সেই ‘বাউন্ডারি ক্লাস্টার’-ই ম্যাচ ঘুরিয়ে দিয়েছে ইউএই-র পক্ষে। মোহাম্মদ ওয়াসিম ও আসিফ খান স্পষ্টতই বলার আগেই বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন কোন দিকে খেলতে চান। কিন্তু তারপরও মেহেদী হাসান, তানভীর ইসলাম কিংবা নাহিদ রানারা বারবার শর্ট বা ওয়াইড ডেলিভারিতে সুযোগ করে দিয়েছেন ব্যাটারদের জন্য।
শরীফুল ইসলাম ভালো শুরু করলেও ইনিংসের মাঝপথে ছন্দ হারিয়ে ফেলেছেন। তানজিম হাসান আবার বল ধরতেই পারছিলেন না, অতিরিক্ত স্লিপ নিয়েও কোনও লাভ হয়নি।
শিশির সামলেছে ইউএই, অভিযোগেই ব্যস্ত বাংলাদেশ
আরব আমিরাত স্পিনার হায়দার আলী জানিয়েছেন যে ইউএই বোলাররা শিশিরে বল করার অনুশীলন করেন নিয়মিত। বাংলাদেশ এই বাস্তব প্রস্তুতিটুকুও নেয়নি। বরং প্রতি ম্যাচের পর লিটন দাসের শিশির-অভিযোগই শিরোনামে এসেছে।
২০২৩ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৩-০ হারানোর সময় শিশির ছিল না, কন্ডিশন ছিল বাংলাদেশের অনুকূলে। সেই সুবিধা শারজাহতে না থাকায় দলের দুর্বলতা প্রকটভাবে ধরা পড়েছে।
ব্যাটিং-এ চমক, তবে ধারাবাহিকতা ছিল না
বাংলাদেশ দুই ম্যাচে ১৯১ ও ২০৫ রান তুললেও ব্যাটিংয়ে ছিল মারাত্মক অস্থিরতা। পারভেজ ইমন দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করলেও ধারাবাহিক ছিলেন না। তানজিদ হাসান তিন ম্যাচেই শুরুটা ভালো করেছিলেন, কিন্তু ফিনিশিংয়ে ঘাটতি ছিল।
লিটন দাস ধীরে ধীরে ছন্দে ফিরছেন, কিন্তু তৌহিদ হৃদয় তৃতীয় ম্যাচে দলের বিপর্যয় ঠেকাতে পারেননি। নাজমুল হোসেন শান্ত পেলেন শুধু এক ম্যাচে সুযোগ। অন্যদিকে মাহেদী ও শামীম হোসেন নামের পাশে শুধুই ‘হিট অ্যান্ড মিস’।
মোস্তাফিজের অনুপস্থিতি বড় ধাক্কা
প্রথম ম্যাচে ২/১৭—এই মোস্তাফিজকেই দ্বিতীয় ও তৃতীয় ম্যাচে পাওয়া যায়নি, কারণ তিনি রওনা দেন আইপিএল-এ দিল্লি ক্যাপিটালসের হয়ে খেলতে। দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ বোলার চলে যাওয়ার পর দেখা গেছে অভাবনীয় ধস। বাকি পেসাররা চাপে ভেঙে পড়েছেন।
পাকিস্তান সফরের আগে আত্মবিশ্বাসে বড় দাগ
বাংলাদেশের চিন্তা ছিল পাকিস্তান সফর নিয়ে। কিন্তু তার আগেই টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ে ১৫ নম্বরে থাকা ইউএই-এর বিপক্ষে হার দলকে মানসিকভাবে চূর্ণ করে দিয়েছে।
গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষেও সিরিজ হার—এমন খারাপ স্মৃতি নিয়ে এবার খেলতে হচ্ছে লাহোরে, আরও কঠিন কন্ডিশনে। পাকিস্তান, ইউএই নয়—তাদের বিপক্ষে এমন ভুলের কোনো জায়গা নেই।
বাংলাদেশের ক্রিকেটে এখন প্রশ্ন একটাই: এই ধাক্কা সামলে উঠবে কীভাবে? শারজাহতে হারের দায় কার, পরিকল্পনার অভাব কোথায়, আর বাস্তবতা মেনে নিজেদের গুছিয়ে নিতে কতটা প্রস্তুত বাংলাদেশ—এই উত্তরগুলোর খোঁজ এবার লাহোরে দিতে হবে।
মন্তব্য করুন