আইসিসি ফাইনাল মানেই অস্ট্রেলিয়ার জয়—এটা যেন নিত্যনিয়মে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু লর্ডসে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হেরে সেই নিয়মে এবার ছেদ পড়ল। ১৯৯৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত দশটি আইসিসি ফাইনালে মাত্র একবার হার দেখেছিল অস্ট্রেলিয়া—২০১০ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। কিন্তু এবারের বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ (ডব্লিউটিসি) ফাইনালে হারের গুরুত্ব ভিন্ন। শুধু শিরোপাই হাতছাড়া হয়নি, ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনাও হয়ে পড়েছে অনিশ্চিত।
লর্ডসে স্পেশাল কন্ডিশনে প্রথম ইনিংসে ৬৭ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ধসে পড়ে অস্ট্রেলিয়া। দ্বিতীয় ইনিংসে তো ১০২ রানে এগিয়ে থেকেও ৭ উইকেট হারায় মাত্র ৪৫ রানে। এমন ধস থেকে আর ঘুরে দাঁড়ানো যায়নি। কামিন্সরা শেষ পর্যন্ত হার মানে ৫ উইকেটের ব্যবধানে।
প্যাট কামিন্স ম্যাচ শেষে বলেন, ‘এই ম্যাচের কন্ডিশন ছিল ব্যতিক্রমী। কিন্তু আমরাও জানতাম এটা এক ধরনের ‘ওয়ান-অফ’ ফাইনাল। এমন ম্যাচে অনেকে আরও কিছু করতে পারত বলে মনে করছে। বিশেষ করে টপ থ্রি ব্যাটারদের পারফরম্যান্স ছিল হতাশাজনক।’
দলের সামনে এখন এক ধরণের রূপান্তরের সময়। তবে পুরোপুরি পুনর্গঠন নয়, বরং কিছু জায়গায় বিচক্ষণ পরিবর্তন হতে পারে। সামনে শুরু হচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর, যার মধ্য দিয়েই নতুন ডব্লিউটিসি চক্র শুরু করবে অস্ট্রেলিয়া। কামিন্স জানালেন, ‘এটা এক ধরনের রিসেট। হয়তো সময় এসেছে ভাববার, আমরা কি একই দলের ওপর আস্থা রাখব, নাকি নতুনদের সুযোগ দেব।’
এই নতুনদের তালিকায় উঠে আসছে স্যাম কনস্তাস–যিনি ভারতের বিপক্ষে দুটি টেস্ট খেলার পর দলের বাইরে। আরেকজন সম্ভাব্য নাম জশ ইংলিশ, যিনি উইকেটকিপার হিসেবে ৩০ বছর বয়সেও পাকা বিকল্প হতে পারেন।
তবে বড় পরিবর্তনের সম্ভাবনা এখনই কম। রিজার্ভ পেসার হিসেবে আছেন ৩৬ বছর বয়সী স্কট বোল্যান্ড ও ৩১ বছরের ব্রেন্ডন ডগেট। ফলে ঘূর্ণায়মান ব্যবস্থায় মূল তিন পেসারকে বিশ্রাম দিয়ে বোলিং লাইনআপ ঘোরানোর দিকেও যেতে পারে অস্ট্রেলিয়া।
কামিন্স আরও বললেন, ‘সাদা বলের ক্রিকেটে আমরা চার বছরের সাইকেল ধরে দল গড়ি। টেস্টেও হয়তো এবার সে সুযোগ এসেছে।’
তবে একটা প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—এই হারের দায়টা কোথায়? প্রস্তুতির ঘাটতিতে, না কি ব্যাটিংয়ের ধসেই ডুবেছে দল? লর্ডসে নামার আগে প্রস্তুতি ম্যাচ না খেলে শুধু নেট ও সেন্টার উইকেটে অনুশীলনই করেছিল অস্ট্রেলিয়া, যেটা তারা ২০২৩ ফাইনালের আগেও করেছিল, সেবার ফল এসেছিল দারুণভাবে।
অবশ্য কামিন্স প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্নে আত্মবিশ্বাসী, ‘আমি মনে করি আমরা ঠিকঠাকই প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। বোলাররা একেবারে শুরু থেকেই দুর্দান্ত ছিল। তবে এবার আমাদের সেরা খেলাটা হয়নি।’
এখন অপেক্ষা ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের। জুন ২৫ থেকে শুরু হওয়া এই সফর হতে পারে নতুন চক্রের সূচনা, হতে পারে অস্ট্রেলিয়ান টেস্ট দলের জন্য এক নতুন অধ্যায়ের শুরু।
শেষতক, লর্ডসের হাওয়া কেবল এক ম্যাচ হারায় নয়, কাঁপিয়ে দিয়ে গেল অস্ট্রেলিয়ার ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনাকেই।
মন্তব্য করুন