বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে উত্তাপ ক্রমেই বাড়ছে। সাবেক দুই জাতীয় অধিনায়ক তামিম ইকবাল ও আমিনুল ইসলামের দ্বন্দ্ব এখন প্রকাশ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে। রাজধানীর ফারস হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তামিম সরাসরি আক্রমণ করলেন বোর্ড সভাপতি আমিনুলকে। তার ভাষায়, ‘তিনি নাকি নির্বাচন বোঝেন না। তাহলে এমন চিঠি কীভাবে দিলেন! এই নোংরামিটা করা উচিত নয়।’
৬ অক্টোবরের নির্বাচনকে সামনে রেখে কাউন্সিলর মনোনয়ন নিয়ে চলছে তীব্র টানাপোড়েন। জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার কাউন্সিলর মনোনয়নে সরকারি হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলে তামিম ও তার সহযোগীরা আজ সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে তামিম অভিযোগ করেন, সরকারের বিভিন্ন দপ্তর থেকে চিঠি পাঠিয়ে নির্বাচনকে প্রভাবিত করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমি খুব অবাক হয়েছি, ক্যাবিনেট সেক্রেটারির অফিস থেকে চিঠি যাওয়া! এনএসসি থেকেও হস্তক্ষেপ হয়েছে। তাহলে নির্বাচনটা হচ্ছে কীভাবে?’
অভিযোগের কেন্দ্রে আমিনুল ইসলাম, যিনি যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এবং সরকার সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন। নির্বাচিত হলে সভাপতি পদের জন্যও লড়বেন তিনি। অন্যদিকে তামিমকে বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে দেখা হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে তার পাশে ছিলেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনসহ দলীয় পরিচিত মুখ।
তামিম স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মনোনীত কাউন্সিলরদের পরিবর্তন করা হলে তা সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিপন্থী হবে। তার অভিযোগ, ‘যখন যাকে ইচ্ছা অ্যাডহক কমিটিতে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, তখন সেটা নির্বাচন নয়, সিলেকশন।’
অন্য কাউন্সিলররাও একে একে অভিযোগ তুলেছেন সরকারের হস্তক্ষেপ নিয়ে। জামালপুরের আবদুল্লাহ আল ফুয়াদ রেদওয়ান বলেন, মন্ত্রণালয় ও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে চিঠি দিয়ে নির্বাচন প্রভাবিত করার চেষ্টা হচ্ছে, যা বোর্ডের গঠনতন্ত্র বিরোধী। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি সিরাজউদ্দিন আলমগীর তো সতর্ক করে দেন—এভাবে চলতে থাকলে আইসিসির নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকিতে পড়তে পারে বাংলাদেশ ক্রিকেট।
অভিযোগের জবাবে বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম অবশ্য সব অস্বীকার করেছেন। তার দাবি, ‘আমরা গঠনতন্ত্রের মধ্যেই আছি। অনেক কাউন্সিলরের যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন আছে। সভাপতি হিসেবে সেসব দেখার দায়িত্ব আমার।’
সব মিলিয়ে বিসিবি নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক ছায়াযুদ্ধ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। একপাশে সরকার সমর্থিত আমিনুল, অন্যপাশে বিএনপি-সমর্থিত তামিম। ক্রিকেট প্রশাসনের এই দ্বন্দ্ব দেশের ক্রিকেটকে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত করবে, এখন সেটাই বড় প্রশ্ন।
মন্তব্য করুন