

ঢাকা টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে সংবাদ সম্মেলন কক্ষে বসা মুশফিকুর রহিম যেন শুধু ক্যারিয়ারের শততম ম্যাচ উদযাপন করছিলেন না—এ ছিল তার জীবনের দীর্ঘ দুই দশকের সংগ্রাম, শৃঙ্খলা ও ব্যক্তিগত ত্যাগের এক নীরব স্বীকারোক্তি। সেঞ্চুরির পরের উচ্ছ্বাস যে তাকে ছাপিয়ে যাবে—তা হয়তো অনেকে ভেবেছিলেন। কিন্তু দিনের সত্যিকারের আবেগঘন মুহূর্তটি এল তখনই, যখন তিনি স্বীকার করলেন—এই বিশাল পথচলার সবচেয়ে বড় অবদান তার স্ত্রীর।
দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে ৩৭৮ রানের লিড নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন মুশফিক। সেখানেই খুলে দেন মনের বহুদিনের গোপন কথা।
মুশফিক বলেন, “সবচেয়ে বড় সাপোর্ট সবসময় আমার স্ত্রী দিয়েছে। আমি যতটা প্র্যাকটিস করি—ওই রুটিনটা সম্ভবই হতো না যদি ঘরে এমন পরিবেশ না পেতাম।” যৌথ পরিবারে দায়িত্ব সামলানো, প্রতিটি জরুরি পরিস্থিতিতে নিজে এগিয়ে আসা, আর দুই সন্তানের দেখাশোনার পুরোটা দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়গুলো তিনি ‘বড় ত্যাগ’ হিসেবেই দেখছেন।
তার কথায় উঠে আসে আরও গভীর কৃতজ্ঞতা—“রাতে ছোট বাচ্চারা ঘুমায় না। আমার এক রাতও নির্ঘুম যেতে দেয়নি স্ত্রী। পুরোটা সময় সে জেগেছে, যাতে আমার পরের দিনের প্রস্তুতি ঠিক থাকে। এগুলো বলা হয় না কখনোই। আজ তাই বলতে পেরে ভালো লাগছে।”
১১ বছরের সংসারজীবন পেরিয়ে ক্রিকেটার হিসেবে নিজের গ্রাফ যেভাবে বদলে গেছে, সেটার কৃতিত্বও দেন স্ত্রীকে। ২০১৪ সালের পর তার পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা ও পরিপক্বতা তিনি সংসারের স্থিতির সঙ্গে জুড়ে দেখেন।
মাঠে উপস্থিত ছিলেন মুশফিকের স্ত্রী, দুই সন্তান এবং বাবা-মা। বিসিবির বিশেষ আয়োজনে শততম টেস্ট স্মরণীয় করে রাখার মুহূর্তগুলো কাছ থেকে দেখেছে তার পরিবার। সেই প্রসঙ্গেও কৃতজ্ঞতা ঝরে তার কণ্ঠে—“এমন স্বীকৃতি যেকোনো ক্রিকেটারের জন্য বড় অনুপ্রেরণা। যুব খেলোয়াড়রা দেখলে স্বপ্ন দেখবে—এভাবেই সামনে এগোতে হয়।”
বাংলাদেশ এখন দুই ম্যাচের সিরিজে ১–০ ব্যবধানে এগিয়ে। তবে এই টেস্টে সেঞ্চুরি বা লিডের চেয়েও বড় খবর—মুশফিকের মুখেই উঠে আসা এক নীরব নায়কের গল্প, যিনি ছিলেন তার সবচেয়ে বড় শক্তি, তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সহযোদ্ধা—তার স্ত্রী।
মন্তব্য করুন