

দুই দিনেরও কম সময়—টেস্ট ক্রিকেটে সাধারণত যেখানে গল্প ধীরে জমে, সেখানে পার্থে অ্যাশেজের প্রথম টেস্ট হয়ে উঠল পরিসংখ্যানের উন্মাদ এক উৎসব। ইংল্যান্ড গুঁড়িয়ে গেল চার সেশনের মধ্যেই, অস্ট্রেলিয়া দাপট দেখাল ব্যাট–বল দুই বিভাগেই, আর ইতিহাসের পাতায় যোগ হল একগুচ্ছ যুগান্তকারী রেকর্ড।
শত বছরের রেকর্ড ভাঙার দিনে অস্ট্রেলিয়ার দাপট
নির্ধারিত প্রথম দুই দিনের মধ্যেই শেষ হওয়া অ্যাশেজ টেস্ট—এমন ঘটনা ১০০ বছরেরও বেশি সময় দেখা যায়নি। শেষবার হয়েছিল ১৯২১ সালে ট্রেন্ট ব্রিজে। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে তো এ দৃশ্য এবারই প্রথম।
মোট বল
এই ম্যাচে মোট বল বল হয়েছে মাত্র ৮৪৭টি, যা অ্যাশেজ ইতিহাসের তৃতীয়-সর্বনিম্ন। এর চেয়ে কম বল হয়েছিল কেবল ১৮৮৮ সালের দুই ইংল্যান্ড–অস্ট্রেলিয়া লড়াইয়ে (৭৮৮ ও ৭৯২)। অস্ট্রেলিয়ায় এর আগে সবচেয়ে ছোট টেস্ট ছিল ১৮৯৪/৯৫ সালে, যেখানে লেগেছিল ৯১১ বল।
ইংল্যান্ডের ব্যাটিং ধস: ৪০৫ বলেই দুই ইনিংস গুটিয়ে
দুই ইনিংস মিলিয়ে ইংল্যান্ড খেলতে পেরেছে মাত্র ৪০৫ বল—প্রথম ইনিংসে ৩২.৫ ওভার, দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৪.৪। ১৯০৪ (এমসিজি) ও ১৮৮৮ (লর্ডস)-এ দুই ইনিংস মিলিয়ে এর চেয়েও কম বল খেলেছিল ইংল্যান্ড, কিন্তু আধুনিক যুগে এমন ধস বিরলই বলা চলে।
চেজে দানবীয় গতি: নতুন ইতিহাস অস্ট্রেলিয়ার
২০৫ রানের লক্ষ্য দৌড়ে ঠেলে নামতেই অস্ট্রেলিয়া দেখাল টেস্ট চেজে নতুন মাত্রা। তারা রান তুলল ৭.২৩ রান রেটে—২০০ বা তার বেশি লক্ষ্য তাড়ার ইতিহাসে সর্বোচ্চ। মাত্র ২৮.২ ওভারেই তারা শেষ করে দিল ম্যাচ। এর আগে দ্রুততম সফল বড় চেজ ছিল ইংল্যান্ডের (৫.৯৮) ২০২২ সালের নটিংহ্যাম টেস্টে।
ট্রাভিস হেডের তাণ্ডব: ৬৯ বলের শতক
চেজের নায়ক ট্রাভিস হেড। ৬৯ বলের সেঞ্চুরি করে তিনি ছুঁয়ে ফেললেন বিশ্ব ইতিহাসের দ্রুততম ওপেনার সেঞ্চুরির রেকর্ড (ডেভিড ওয়ার্নারের সঙ্গে যৌথ)।
টেস্ট ইতিহাসে ওপেনার হিসেবে এর চেয়ে দ্রুত শতক আর নেই। অ্যাশেজে এর চেয়ে দ্রুত শতক আছে শুধু অ্যাডাম গিলক্রিস্টের ৫৭–বল ইনিংস (২০০৬)।
হেডের শতক আসে ইনিংসের ২১.৩ ওভারেই—টেস্ট ইতিহাসে মাত্র দুই ব্যাটার এর আগে তিন অঙ্কে পৌঁছেছে (রয় ফ্রেডরিক্স, ডেভিড ওয়ার্নার; দু’বারই ওয়াকা গ্রাউন্ডে)।
হেডের ১২৩ রান হলো ২১শ শতকে ওপেনার হিসেবে অ্যাশেজে সর্বোচ্চ স্কোর। এ সময়কালে ওপেনারদের আর মাত্র দুইটি শতক আছে—আলাস্টেয়ার কুক (২০০৬) ও ক্রিস রজার্স (২০১৩)।
স্টার্কের আগুনে ঝলসে গেল ইংল্যান্ড
অ্যাশেজে বহুদিন পর অস্ট্রেলিয়ান বোলার পেলেন ১০ উইকেট। মিচেল স্টার্ক ১০/১১৩ (৭/৫৮ ও ৩/৫৫) নিয়ে শেষ করলেন ম্যাচ—২০০৫ সালের ওভালে শেন ওয়ার্নের পর প্রথম অজি বোলার হিসেবে অ্যাশেজে টেন–উইকেট।
সিমার হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে এর আগের উদাহরণটি ছিল ১৯৯১ সালে ক্রেইগ ম্যাকডারমটের।
ইংল্যান্ডের হতাশা বাড়াল আরেক রেকর্ড
জ্যাক ক্রলি হলো চতুর্থ ইংলিশ ওপেনার, যে অ্যাশেজে ‘পেয়ার’ করলেন (১৯৫৯, ১৯৭৫, ১৯৯৮—তিনজন)। পার্থেও চলল তাদের অদ্ভুত দুর্ভাগ্য—এই শহরে টানা নবম টেস্ট হার ইংল্যান্ডের। প্রথমবার পার্থ স্টেডিয়ামে খেলতে নেমে তারা হলো প্রথম দল, যারা ব্যাটিং শুরু করেও হারল।
বোলান্ডের নতুন মাইলফলক
অস্ট্রেলিয়ার ‘হোম মনস্টার’ স্কট বোলান্ড নিজের দেশে ১৬৩৯ বলেই তুলে নিলেন ৫০ টেস্ট উইকেট—অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সবচেয়ে দ্রুত। বিশ্বে তার চেয়ে দ্রুত তিনজনই—ফিল্যান্ডার, রাবাদা, জানসেন—তিনজনই দক্ষিণ আফ্রিকান।
মন্তব্য করুন