

বার্সেলোনার ভেতরে এখন যেন এক জরুরি অবস্থা চলছে। ক্লাবের ভাষায়—‘ডেফকন-১’। কারণ ক্লাবের অন্যতম গুরুত্বপুর্ণ ফুটবলার পেদ্রির ইনজুরি। দলের সবচেয়ে সৃজনশীল তরুণ তারকা আবারও পড়েছেন ইনজুরিতে, এবং এবার সেটি এতটাই গুরুতর যে, অন্তত দেড় মাস মাঠের বাইরে থাকতে হবে তাকে। কিন্তু এই ইনজুরি শুধু একজন ফুটবলারের দুঃখ নয়—এটি কাঁপিয়ে দিয়েছে পুরো ক্লাবকেই।
গত এক দশকে যত ঘন ঘন ইনজুরি সংকট পেরিয়েছে বার্সেলোনা, তবু পেদ্রির চোট যেন নতুন এক ভূমিকম্প। ক্লাবের ভেতরে এখন চলছে দায়-দায়িত্বের খোঁজ, প্রশ্ন উঠছে—কোথায় ভুল হচ্ছে? কেন প্রতিবারই একই চিত্র, যেখানে প্রতিভা ঝলমলে, কিন্তু শরীর ভেঙে যাচ্ছে মৌসুমের মাঝপথে?
বিশেষ করে শারীরিক প্রস্তুতির দুই মুখ্য ব্যক্তি—জুলিও তুস (ফিজিক্যাল কন্ডিশনিং প্রধান) এবং রাউল মার্তিনেজ (ফিজিওথেরাপি প্রধান)—এখন আছেন ঝড়ের কেন্দ্রে। দুজনই আসেন হান্সি ফ্লিকের সময়, এবং তাদের নিয়োগের সময় ক্লাবের প্রত্যাশা ছিল বিপুল; খেলোয়াড়দের ফিটনেসে বিপ্লব, ইনজুরি কমপক্ষে অর্ধেকে নামিয়ে আনা।
প্রথম মৌসুমে কিছুটা আশার আলো দেখা গিয়েছিল। ফ্লিকের অধীনে বার্সেলোনা ছিল প্রাণবন্ত, শক্তিশালী, দৌড়ঝাঁপে ভরপুর। কিন্তু ইনজুরি কমেনি—বরং লা লিগায় সর্বোচ্চ ইনজুরির তালিকায় ছিল তারাই। পরিসংখ্যান বলছে, গত মৌসুমে বার্সার ইনজুরির সংখ্যা ছিল ২০, রিয়াল মাদ্রিদের ১৮।
তবু আশাবাদ জেগেছিল কারণ পেদ্রির মতো খেলোয়াড়রা সুস্থ থেকেছিলেন দীর্ঘদিন। বলা হয়েছিল, তুসের নতুন ‘স্ট্র্যাপ-ট্রেনিং’ পদ্ধতি—যেখানে ওজনের বদলে বিশেষ ব্যান্ড ব্যবহার হয়—খেলোয়াড়দের পেশিশক্তি বাড়িয়েছে, ইনজুরি কমিয়েছে। ক্লাব এমনকি এটিকে সাফল্যের মডেল হিসেবে তুলে ধরেছিল।
কিন্তু দ্বিতীয় মৌসুমেই ছবিটা উল্টে গেছে। দলের ফিটনেস কমেছে, ইনজুরির সংখ্যা বেড়েছে, এবং এখন পেদ্রির নতুন চোট যেন সেই সমস্যার প্রতীক। ফ্লিকের সময়ের ‘বৈজ্ঞানিক বিপ্লব’ এখন পরিণত হয়েছে বিভ্রান্তিতে। ইনজুরিতে আছেন লামিনে ইয়ামাল, গাভি, রাফিনিয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ তারকারাও—যাদের অনেকে পুনরায় চোট পেয়েছেন সেরে ওঠার ঠিক পরেই।
দলের প্রধান চিকিৎসক রিকার্ড প্রুনার কাঁধেও এখন বাড়ছে চাপ। একের পর এক নাম যুক্ত হচ্ছে ইনজুরি তালিকায়, ক্লাবের ভেতরে ক্রমশ বাড়ছে উদ্বেগ। বার্সা এখন এমন এক অবস্থায় পৌঁছেছে যেখানে ‘ফিজিক্যাল ম্যানেজমেন্ট’ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বোর্ড সদস্যরাও।
একজন অভিজ্ঞ বার্সা কর্মকর্তার বরাত দিয়ে স্প্যানিশ দৈনিক এস জানায়, ‘আমরা ভেবেছিলাম ফ্লিক যুগে ইনজুরির গল্প শেষ হবে। এখন মনে হচ্ছে, গল্পটা নতুন অধ্যায়ে ঢুকেছে—আরও ভয়ংকর এক অধ্যায়ে।’
হয়তো এজন্যই স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যমের তুলনা—যেন পেন্টাগনের পরিস্থিতি কক্ষে এখন ‘ডেফকন–১’—সর্বোচ্চ সতর্কবার্তা, যখন সংঘর্ষ বাস্তব ও অবশ্যম্ভাবী।
ন্যু কাম্পে তাই এখন নীরব আতঙ্ক। প্রশ্ন একটাই—বার্সেলোনা কি আবারও নিজেদের শরীরেই হেরে যাচ্ছে?
মন্তব্য করুন