

চোটে জর্জরিত শরীর, সামনে অবনমনের শঙ্কা—সব কিছুর মাঝেই যেন ভাগ্যপরীক্ষার রাতে নেমেছিলেন নেইমার। আর ঠিক তখনই নিজের চেনা রূপে ফিরলেন এই ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার। মাত্র ১৭ মিনিটের ঝলকে হ্যাটট্রিক করে সান্তোসকে অবনমন অঞ্চলের বাইরে টেনে তুললেন তিনি, জাগিয়ে রাখলেন ক্লাব ও সমর্থকদের টিকে থাকার স্বপ্ন।
ব্রাজিলিয়ান সিরি আ-তে বুধবার রাতে যুবেন্তুদের বিপক্ষে ৩–০ গোলের জয়ে ম্যাচের নায়ক একাই নেইমার। হাঁটুর চোট নিয়েই মাঠে নামা ৩৩ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড দ্বিতীয়ার্ধে একের পর এক তিনটি গোল করে কার্যত একার কাঁধেই ম্যাচটি শেষ করে দেন। এই জয়ের ফলে অবনমন লড়াইয়ে সান্তোস পেল বড় স্বস্তি।
ইএসপিএন ব্রাজিলের তথ্য অনুযায়ী, মৌসুম শেষে নেইমারের বাঁ হাঁটুর মেনিস্কাস সমস্যায় আর্থ্রোস্কোপিক অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে। তবে ব্যথা সামাল দিতে রক্ষণশীল চিকিৎসা চালিয়েই শেষ দুটি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। সেই ঝুঁকি নিয়েই মাঠে নেমে যে পারফরম্যান্স দেখালেন, তা যেন তাঁর অদম্য মানসিকতারই প্রতিফলন।
ম্যাচে নেইমারের আগুনঝরা শুরু ৫৬তম মিনিটে। দ্রুত কাউন্টার অ্যাটাকে বল পেয়ে ঠান্ডা মাথায় জাল খুঁজে নেন তিনি। দশ মিনিটেরও কম সময়ের ব্যবধানে ইগর ভিনিসিয়ুসের ক্রস থেকে নিখুঁত ফিনিশিংয়ে আরও একবার গোল। এরপর পেনাল্টি থেকে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করে ৮৩তম মিনিটে মাঠ ছাড়েন সাবেক বার্সেলোনা তারকা।
এটাই ২০২২ সালের এপ্রিলের পর নেইমারের প্রথম হ্যাটট্রিক। তখন পিএসজির জার্সিতে ক্লারমঁর বিপক্ষে তিন গোল করেছিলেন তিনি। দীর্ঘ সময় চোটে ভুগে আবার এমন প্রত্যাবর্তন তাই আলাদা তাৎপর্য বহন করছে।
এই জয়ে লিগের এক ম্যাচ বাকি থাকতে অবনমন অঞ্চলের বাইরে দুই পয়েন্টের ব্যবধানে উঠে এসেছে সান্তোস। টেবিলে তাদের নিচে থাকা ভিটোরিয়ার সঙ্গে ব্যবধান এখন নির্ণায়ক পর্যায়ে। শেষ ম্যাচে আগামী রোববার ভিলা বেলমিরোয় ক্রুজেইরোর বিপক্ষে জয় পেলেই প্রথম ডিভিশনে থাকা নিশ্চিত হবে নেইমারের শৈশবের ক্লাবটির।
অন্যদিকে, ম্যাচের আগেই অবনমন নিশ্চিত হয়ে যাওয়া যুবেন্তুদে টানা চতুর্থ হার দেখল মৌসুমের শেষভাগে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বারবার চোটে থমকে গেলেও নেইমার এখনো স্বপ্ন দেখছেন জাতীয় দলের। আগামী গ্রীষ্মের বিশ্বকাপে ব্রাজিলের হয়ে খেলার আশা ছাড়েননি তিনি। কোচ কার্লো আনচেলত্তিও বারবার জানিয়েছেন, পুরোপুরি ফিট থাকলে নেইমারের জন্য জাতীয় দলের দরজা খোলা।
এই হ্যাটট্রিক তাই শুধু সান্তোসকে বাঁচানোর লড়াই নয়—নিজের ক্যারিয়ার, নিজের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখার এক সাহসী ঘোষণা।
মন্তব্য করুন