দেশের ক্রীড়াঙ্গণে খেলোয়াড়দের বয়স চুরির ঘটনা নতুন নয়। বিভিন্ন ডিসিপ্লিনে হরহামেশাই এমনটা ঘটে। বয়স চুরির ঘটনাগুলো প্রমাণ করা কঠিন। সেই কঠিন কাজটাই সহজ করে দিয়েছে চকবাজার কিংস।
ক্লাবটি ২০২১-২২ মৌসুমে তৃতীয় বিভাগ লিগে বিকেএসপির চার ফুটবলারকে দলভুক্ত করেছিল। কিন্তু আসরের জন্য খেলোয়াড় নিবন্ধনে বিকেএসপির তিন ফুটবলারের কেবল নামই পরিবর্তন করা হয়নি, কমানো হয়েছে বয়সও। অনূর্ধ্ব-১৭ বয়স বিভাগের প্রতিযোগিতার জন্য তিন ফুটবলারের বয়স কমিয়ে নিবন্ধন করা হয়। পরে ওই ফুটবলারদের প্রকৃত নাম ও বয়স অনুযায়ী দ্বিতীয় বিভাগ লিগে নিবন্ধন করে বিকেএসপি। একই ফুটবলারের নাম ও বয়স ভিন্নতার বিষয়টি সেখানেই ধরা পড়ে।
বিকেএসপির তিন প্রশিক্ষণার্থী—নাইমুর রহমান, মো. হাসান মিয়া ও মো. জিফাতকে নিজ দলে খেলানোর জন্য বিকেএসপির সঙ্গে চুক্তি করে চকবাজার কিংস। কিন্তু তিন ফুটবলারের নাম ব্যবহার করে দলটির হয়ে তৃতীয় বিভাগ লিগে খেলেন তাহসিন সাহেব, ইহসান হাবিব রিদুয়ান ও রিফাত কাজী। যাদের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছিল তারা এক ব্যাচের ফুটবলার, যাদের খেলানো হয়েছে তারা ভিন্ন ব্যাচের।
প্রাথমিক তদন্তে ফুটবলারদের নাম ও বয়স পরিবর্তনের বিষয় ধরা পড়ে। এ জন্য বাফুফের ডিসিপ্লিনারি কমিটি বিকেএসপিকে নিষিদ্ধ ও জড়িমানা করেছিল। একই সঙ্গে বিকেএসপির দুই কোচ শাহীনুল হক ও রবিউল ইসলামকেও এক বছর নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি ২৫ হাজার টাকা জড়িমানা করা হয়। দুই কোচের মধ্যে রবিউল ইসলাম চকবাজার কিংসের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
যদিও আপিলের পর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাইবাছাইয়ের পর সম্প্রতি বিকেএসপির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে। শাহীনুল হকের নিষেধাজ্ঞা ও জড়িমানা প্রত্যাহার করা হলেও বলবৎ আছে রবিউল ইসলামের শাস্তি। নাম ও বয়স পরিবর্তন হয়েছে এটা নিশ্চিত। বিকেএসপি প্রমাণ করেছে সংস্থাটি এ সংক্রান্ত জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত নয়। কারা জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত— খুঁজে বের করতে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে বাফুফে। সে তদন্তে বয়স ও নাম জালিয়াতির কারণে ফেসে যেতে পারে চকবাজার কিংস।
তদন্ত চলমান বলে বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি বাফুফে কর্মকর্তারা। কিন্তু সংস্থাটি থেকে কালবেলাকে নিশ্চিত করা হয়েছে, বয়স ও নাম জালিয়াতির ঘটনায় প্রকৃত দোষী কারা সেটা দ্রুতই বেরিয়ে আসবে। এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে।
বাফুফের দেওয়া শাস্তি প্রত্যাহার করা হলেও ফুটবলারদের নাম পরিবর্তনের বিষয়টি খতিয়ে দেখছে বিকেএসপি। এ জন্য তিন সদস্যর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ১০ জানুয়ারি কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিকেএসপির নবনিযুক্ত মহাপরিচালক সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন গতকাল বিষয়টিকে বাফুফের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
বিকেএসপির একটি সূত্র কালবেলাকে নিশ্চিত করেছে, তদন্তে দোষি প্রমাণিত হলে আরও বড় শাস্তি অপেক্ষা করছে এ কোচের জন্য। সূত্রটি বলেছে, ‘বিকেএসপির মর্যাদা ক্ষুন্ন করার কারণে মহাপরিচালক স্যার প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের কোনোভাবেই ছাড় দিতে নারাজ তিনি। অভ্যন্তরীণ তদন্তের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে।’
মন্তব্য করুন