ব্যারন ডি কুবেরত্যাঁ অলিম্পিকের হকি ম্যাচ দেখতে এলেন ইয়েভেস-ডু-মনোয়ার স্টেডিয়াম; ম্যাচ দেখলেন, মাঠ প্রদক্ষিণ করলেন, দর্শকদের সঙ্গে সেলফিও তুললেন!
১৯৩৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর দুনিয়া ছেড়ে যাওয়া এ ব্যারন ডি কুবেরত্যাঁ কীভাবে ফিরলেন—হয়তো অবাক হচ্ছেন! আসলে আধুনিক অলিম্পিকের জনক সাজিয়ে একজনকে বিভিন্ন গ্রাউন্ডে ঘোরানো হচ্ছে। প্যারিস গেমসে বৈচিত্র্যের যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তার অন্যতম ছিল অতীতে সামনে টেনে আনার এমন উদ্যোগ।
ব্যারন ডি কুবেরত্যাঁ পরিচিত চার্লস পিয়ের ডি ফ্রাডি নামেও। ফরাসি এ শিক্ষক ও ইতিহাসবিদ আধুনিক অলিম্পিকের জনক। তিনি ছিলেন আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির (আইওসি) প্রতিষ্ঠাতা। গোটা বিশ্বে অলিম্পিক মুভমেন্ট ছড়িয়ে দেওয়া আইওসির দ্বিতীয় সভাপতি ছিলেন ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে জন্ম নেওয়া ব্যারন ডি কুবেরত্যাঁ। বর্তমান প্রজন্মের সামনে অতীতকে হাজির করার দারুণ এ উদ্যোগ জার্মানি-ভারত হকি সেমিফাইনাল ম্যাচে দেখা গেল। ঝাঁকরা গোঁফ নিয়ে হেঁটে বেড়ালেন, দর্শকদের বিনোদনে রসদ যোগ করেছিল এ উদ্যোগ।
ব্যারন ডি কুবেরত্যাঁ যে ভেন্যু ঘুরে দর্শকদের সঙ্গে মজা করলেন, সেই ইয়েভেস-ডু-মনোয়ার স্টেডিয়ামও ইতিহাসের অংশ হয়ে আছে। ১৯২৪ সালের প্যারিস অলিম্পিকের গুরুত্বপূর্ণ ভেন্যু ছিল এটা। যেখানে উদ্বোধন অনুষ্ঠান এবং অ্যাথলেটিকসের মতো ইভেন্ট আয়োজন করা হয়েছিল।
দুটি অলিম্পিক আয়োজন করা বিরল ভেন্যুগুলোর একটি হচ্ছে স্থপতি লুই ফাউরে-ডুজারিকের ডিজাইন করা স্টেডিয়ামটি। ১৫ হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ঐতিহাসিক এ স্টেডিয়ামে আধুনিক অলিম্পিকের জনক এসেছিলেন, এলেন মেয়েদের অলিম্পিকের জননী এলিস মিলিয়াতও। জার্মানি-ভারত ম্যাচে গ্যালারির এক কোণে আবিষ্কার করা গেছে ১৯৫৭ সালের মে মাসে দুনিয়া ছেড়ে যাওয়া এলিস মিলিয়াতের আদলে সাজানো এক নারীকেও।
১৯০০ সালের গেমসে প্রথমবারের মতো অংশ নিয়েছিলেন নারী ক্রীড়াবিদরা। ১২৪ বছর পরের আসরে এসে মিলিত হলেন আধুনিক অলিম্পিকের জনক এবং নারীদের অলিম্পিকের জননী। খেলাধুলায় নারীদের অধিকারের জন্য লড়াই করা এলিস মিলিয়াত এবং ব্যারন ডি কুবেরত্যাঁর স্মৃতি ফেরানো আসরে একটা সংখ্যাও দারুণ মিলে গেছে। এবারের আয়োজনে নারী ও পুরুষ অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা সমান, যা অলিম্পিক ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দেখা গেল।
প্যারিস অলিম্পিকে ৩২ ডিসিপ্লিনের ইভেন্ট সংখ্যা ৩২০টির বেশি। পদকের লড়াই শুরুর আগে দারুণ বৈচিত্র্য দেখিয়েছে প্যারিস গেমসের উদ্বোধন। খোলা আকাশের নিচে স্যেন নদীর প্রায় ৬ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছিল ব্যতিক্রমী এ আয়োজন। যেখানে বিভিন্ন দেশের ক্রীড়াবিদরা নৌযানে করে জাতীয় পতাকা হাতে উদ্বোধনী মার্চপাস্ট করেছেন।
সাহিত্য ও প্রেমের নগরী হিসেবে খ্যাত প্যারিসে বৈচিত্র্য ছড়াচ্ছেন ক্রীড়াবিদরাও। চীনের লিউ ইউ চেন স্বর্ণজয়ের পর মিশ্র দ্বৈত ইভেন্টের পার্টনার হুয়াং ইয়া কিয়োংকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। আর্জেন্টিনার হ্যান্ডবল খেলোয়াড় পাবলো সিমোনেট দীর্ঘদিনের প্রেমিকা ও ফিল্ড হকি খেলোয়াড় মারিয়া ক্যাম্পোয়কে প্রস্তাব করেও শিরোনামে এসেছেন।
নিরাপত্তা শঙ্কা, নানা বিতর্ক, দর্শকদের মারমুখী আচরণ মিলিয়ে নানা নেতিবাচক খবরের শিরোনাম হয়েছিল প্যারিস গেমস। এ আয়োজন বৈচিত্র্যের দিক দিয়েও আলোচিত, সবার মনে রাখার মতো।
মন্তব্য করুন