আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনের নতুন মুখ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন রোজেল আহমেদ। ছোটবেলায় দেখা স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়ে নিজের স্বপ্নপূরণের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ক্রীড়া অঙ্গনে ধারাভাষ্যের অভিষেক ঘটেছে রোজেল আহমেদের।
মায়ের তৈরি কাঠের ব্যাট দিয়ে ক্রিকেটে হাতে খড়ি হয় এ তরুণের। ক্রিকেটের প্রতি গভীর ভালোবাসা থেকে শুরু হয় ধারাভাষ্যের প্রয়াস। ছোটবেলায় টেলিভিশনে ক্রিকেট ম্যাচ চলাকালে খুব মনোযোগী হয়ে ধারাভাষ্য শুনতেন রোজেল। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে ধারাভাষ্যের অনুশীলন শুরু করেন তিনি। খুব অল্প সময়ে বন্ধুমহল থেকে শুরু করে সর্বত্র প্রশাংসা পেতে শুরু করে তিনি। বিভিন্ন ছোট ছোট ক্রিকেট টুনামেন্টের ধারাভাষ্যের মধ্য দিয়ে অভিষেক হয় তার।
দেশের তরুণ এ আন্তর্জাতিক ধারাভাষ্যকার ১৯৯৮ সালে ময়মনসিংহ জেলা সদরের জন্মগ্রহণ করেন। ওই এলাকার জসিম উদ্দীনের ছেলে তিনি। তার শৈশব কেটেছে নিজ জেলা শহরে। স্কুল জীবন শেষ করেছেন ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে। পরে ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকের পড়াশোনা শেষ করে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পূর্ণ করেন।
এতদিন ধরে ধারাবাহিকভাবে ওয়াল্টন করপোরেট টি-টুয়েন্টি টুর্নামেন্ট অর্গানইজড বাই টিকে স্পোর্টস, লাইফ স্প্রিংস ডমিনেটরস কাপ, বঙ্গবন্ধু ফর নেশন্স ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ক্রিকেট টুর্নামেন্ট, প্র বক্সিং দ্য আলটিমেট গ্লোরি, ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ, বঙ্গবন্ধু আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় সাঁতার চ্যাম্পিয়নশিপ, হকি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, বসুন্ধরা কিংস ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপে ধারাভাষ্য দিয়ে ক্রীড়া মহলে বেশ পরিচিতি লাভ করেন। ২০২১, ২০২২ এবং ২০২৩ সালে টানা তিনবার তিনি ‘বিজিএমইএ কাপ’ ফুটবল টুর্নামেন্টে খেলোয়াড়দের নিলাম পরিচালনা করেছেন।
যে স্বপ্ন ছোটবেলা থেকে তিনি দেখতেন একদিন আন্তর্জাতিক ধারাভাষ্যকার হবেন সেই দিনটা এলো ২০২৪ সালের ৩১ মার্চ ‘বাংলাদেশ উইমেন বনাম অস্ট্রেলিয়া উইমেন’ টি-টোয়েন্টি সিরিজে । আর এ সুযোগটা করে দেন অস্ট্রেলিয়া ট্যুর অব বাংলাদেশের ব্রডকাস্টার ‘সাইলেন্ট মিডিয়া’-এর সিইও রবি হোসাইন নীরব এবং প্রখ্যাত ধারাভাষ্যকার কুমার কল্যাণ। এই সিরিজের দুইটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে রোজেল ধারাভাষ্য দেন। ভবিষ্যতে মেন্স ইন্টারন্যাশনাল, আইসিসির টুর্নামেন্টসহ অ্যাশেজ সিরিজে ধারাভাষ্য দেওয়ার স্বপ্ন দেখেন তিনি।
রোজেল আহমেদের বাবা জসিম উদ্দীন বলেন, আমার ছেলে ছোটবেলা থেকে পড়াশোনার পাশাপাশি ক্রিকেট খেলার প্রতি গভীর মনোযোগ ছিল। টেলিভিশনে যখন বিভিন্ন ক্রিকেট টুনামেন্ট অনুষ্ঠিত হতো তখন মনোযোগ সহকারে সেই ধারাভাষ্য শোনতো সে। ধারাভাষ্য শোনার পাশাপাশি অনুশীলন করে প্রতিবেশীসহ সহপাঠীদের সামনে শোনাতো। তার ধারাভাষ্য শোনে রীতিমতো হতবাক হয়ে যেত অনেকে। পরে পরিবার থেকে তাকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করা হয় তাকে। ধারাভাষ্যের প্রতি গভীর আকর্ষণ তাকে আজকে আন্তর্জাতিক ধারাভাষ্যের গণ্ডিতে পৌঁছাতে সহযোগিতা করেছে। সে একদিন দেশের ইতিহাস আরও গৌরবান্বিত করবে এটাই আশা।
রোজেল আহমেদ বলেন, শৈশবের টিভিতে দেখা ক্রিকেট টুনামেন্টে সেই ধারাভাষ্য থেকে স্বপ্ন বুনতে শুরু করি। লেখাপড়ার পাশাপাশি নিজে নিজে ধারাভাষ্য দেওয়ার চেষ্টা করতাম। সেই চেষ্টা আজ আলোর মুখ দেখেছে। এরইমধ্য দেশের আভ্যন্তরীণ উল্লেখ্যযোগ্য বেশ কিছু ক্রিকেট ম্যাচের ধারাভাষ্য দেওয়ার সুযোগ হয়েছে। মেন্স ইন্টারন্যাশনাল আইসিসির টুর্নামেন্টসহ অ্যাশেজ সিরিজে ধারাভাষ্য দেওয়ার অভিপ্রায় প্রকাশ করেছেন। সব কিছু ঠিক থাকলে এ ধরনের ইন্টারন্যাশনাল ম্যাচেও ধারাভাষ্যের সুযোগ হবে আশা করি।
তিনি বলেন, যার যার অবস্থান থেকে নিজ দেশের সুনাম ও পরিচিতি বৃদ্ধির জন্য কাজ করা উচিত। চেষ্টা কখনো বৃথা যায় না। ছোট্ট চেষ্টা এক সময় সফলতার দ্বারা প্রান্তে নিয়ে যায়। দেশের সুনাম অর্জনে আগামীতে আমার ধারাভাষ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদী।
মন্তব্য করুন