স্মার্টফোন নতুন হোক বা পুরাতন সবার একটি সমস্যা দেখা দেয়। ফোন হাতে নেওয়ার আগেই ফুরিয়ে যায় মোবাইল ফোনের ডেটা আর ব্যাটারি। ফোন সম্পূর্ণ চার্জ করে রাখার কয়েক মিনিট পর কমতে থাকে ব্যাটারি পার্সেন্টেজ।
এর জন্য দায়ী অ্যাপ—যেগুলো চুপিচুপি খেয়ে নেয় চার্জ ও ইন্টারনেট। এই অ্যাপগুলো ব্যাকগ্রাউন্ডে চলে, ব্যবহারকারীর অজান্তেই। কিছু অ্যাপে আবার থাকে নকশাগত ত্রুটি। স্বয়ংক্রিয় আপডেট, লোকেশন চালু থাকা, অতিরিক্ত পুশ নোটিফিকেশন—এসব মিলে বাড়ায় খরচ।
প্রযুক্তিবিদদের ভাষায়, এরা ব্যাটারির ‘ভ্যাম্পায়ার’। এখন জেনে নিন, কী কী কারণে এত দ্রুত ফুরিয়ে যায় ফোনের শক্তি।
ব্যাকগ্রাউন্ডে সচল থাকা অ্যাপ
অনেক অ্যাপ আছে, যেগুলো সরাসরি ব্যবহার না করলেও ব্যাকগ্রাউন্ডে চুপচাপ চালিয়ে যায় নানা কাজ। বিশেষ করে যেসব অ্যাপ সার্ভারের সঙ্গে বারবার তথ্য বিনিময় করে বা রিয়েলটাইম আপডেট দেয়, তাদের ডেটা খরচ বেশি। যেমন—সোশ্যাল মিডিয়া, নিউজ অ্যাপ বা ই-মেইল সেবা। কিছু অ্যাপ আবার ক্যাশে ডেটা জমিয়ে রাখে, যাতে পরেরবার দ্রুত লোড হয়। আবার ‘প্রিফেচিং’ নামে এক পদ্ধতিতে কিছু অ্যাপ আগেভাগেই তথ্য ডাউনলোড করে নেয়। এসব সবই বাড়ায় ব্যাকগ্রাউন্ডে ডেটা খরচ।
লোকেশনভিত্তিক অ্যাপ বেশি সক্রিয়
গুগল ম্যাপস বা ওয়েজের মতো নেভিগেশন অ্যাপ চালু রাখতে লোকেশন নিয়মিত আপডেট হয়। এই আপডেটের জন্য স্যাটেলাইট বা মোবাইল টাওয়ারের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান করতে হয়। এতে ডেটা খরচ যেমন বাড়ে, তেমনি দ্রুত কমে যায় ব্যাটারি। রাস্তায় যানজট বা দুর্ঘটনার খবর তাৎক্ষণিক পেতে হলে অ্যাপ সব সময় সক্রিয় রাখতে হয়। আর এই সক্রিয়তাই ডেটা খরচ বাড়িয়ে তোলে।
ভিপিএন চালু থাকলে বাড়ে ডেটা ব্যয়
অনেকে ব্যক্তিগত তথ্য নিরাপদ রাখতে মোবাইলে ভিপিএন ব্যবহার করেন। তবে ভিপিএন চালু থাকলে ডেটা খরচ ৪ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়। কারণ প্রতিটি তথ্য প্যাকেট এনক্রিপ্ট করে পাঠাতে হয়, যাতে নিরাপদ সংযোগ নিশ্চিত হয়। এই এনক্রিপশনের কাজেই লাগে বাড়তি ডেটা।
বারবার পুশ নোটিফিকেশন পাঠানো
ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম বা মেসেঞ্জারের মতো অ্যাপ নিয়মিত নোটিফিকেশন পাঠায়। ব্যবহার না করলেও এসব অ্যাপ ব্যাকগ্রাউন্ডে সক্রিয় থাকে। এতে ডেটা তো খরচ হয়ই, প্রসেসরও চাপে পড়ে। জিমেইল কিংবা নিউজ অ্যাপেও দেখা যায় একই চিত্র।
ভিডিও ও মিউজিক স্ট্রিমিং অ্যাপে ডেটা খরচ বেশি
ইউটিউব, নেটফ্লিক্স, ডিজনি+ ও স্পটিফাইয়ের মতো স্ট্রিমিং অ্যাপ ডেটা খরচে দৌড়ে সবার আগে। বিশেষ করে স্পটিফাই ব্যাকগ্রাউন্ডে চালু থেকে লাইব্রেরির সঙ্গে সিঙ্ক রাখে, যা গোপনে বাড়িয়ে দেয় ডেটার ব্যবহার। গানের মান অনুযায়ী প্রতিটি গান ০.৭২ এমবি থেকে ৯.৭ এমবি পর্যন্ত ডেটা খেয়ে ফেলে। তবে ‘ডেটা সেভার’ মোড চালু রাখলে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় এই খরচ।
ক্ষতিকর অ্যাপও খরচ বাড়াতে পারে
গুগল প্লে স্টোরে নিরাপত্তা জোরদার থাকলেও কখনো সখনো ম্যালওয়্যার বা ক্ষতিকর অ্যাপ চোখ এড়িয়ে ঢুকে পড়ে। শুরুতে এসব অ্যাপ সাধারণ মনে হলেও পরে চুপিসারে ব্যাকগ্রাউন্ডে ডেটা খরচ শুরু করে। ব্যবহারকারীর অজান্তেই চলে এই অপারেশন।
মন্তব্য করুন