বুধবার, ২৭ আগস্ট ২০২৫, ১২ ভাদ্র ১৪৩২
রিকার্ডো হাউসম্যান
প্রকাশ : ১৪ নভেম্বর ২০২৩, ১১:৫৩ এএম
আপডেট : ১৪ নভেম্বর ২০২৩, ১১:৫৯ এএম
অনলাইন সংস্করণ

অর্থনৈতিক উন্নয়নে চ্যাটজিপিটি

চ্যাটজিপিটি
চ্যাটজিপিটি

সতর্কতা : চ্যাটজিপিটির কাছে অর্থনৈতিক উন্নয়নের উপায় সম্পর্কে জানতে চাইলে সেটি কী প্রতিক্রিয়া দেখায়, সে ব্যাপারে বলতে চাচ্ছি না। চ্যাটজিপিটি মূলত বিশ্লেষণ না করেই জবাব দেয় এবং প্রশিক্ষণের সময় তাকে যে ধারণা দেওয়া হয় তা-ই বারবার জাহির করে। তবে চ্যাটজিপিটির নকশা এমনভাবে করা হয়েছে, নির্মাতারা যা প্রত্যাশা করেছিলেন এটি তার চেয়েও বেশি ক্ষমতা দেখিয়ে ফেলেছে। সেই সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নয়নে জটিল সমস্যা মোকাবিলায়ও এটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা দিয়ে থাকে।

এক দশকের বেশি সময় ধরে ডিপ নিউরাল নেটওয়ার্ক (ডিএনএন) অন্যান্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রযুক্তিকে ছাড়িয়ে গেছে। সেই সঙ্গে কম্পিউটারের দৃষ্টিকে আরও তীক্ষ্ণ করাসহ বক্তব্য শনাক্ত এবং অনুবাদেও অগ্রগতি দেখিয়েছে। এর রেশ ধরেই চ্যাটজিপিটির মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) চ্যাটবটের আবির্ভাব।

কোনো কিছু শিখতে এআই অ্যালগরিদমগুলোর প্রশিক্ষণ প্রয়োজন, যা দুটি প্রধান পদ্ধতির মাধ্যমে অর্জন করা যেতে পারে। এর একটি পরিচালন এবং অপরটি অপরিচালন পদ্ধতি। পরিচালন পদ্ধতির ক্ষেত্রে কম্পিউটারে কিছু ছবি দেওয়া হয়, যেমন—কুকুর, বিড়াল, হ্যামবার্গার, গাড়ি ইত্যাদি। এর সঙ্গে লেবেল যুক্ত করা থাকে। এরপর পরীক্ষা করা হয়, অ্যালগরিদমটি লেবেলযুক্ত ছবি কত ভালোভাবে চিনতে পারছে।

পরিচালন পদ্ধতির সমস্যা হলো—এর জন্য প্রতিটি ছবিতে নিজে থেকে লেবেল যুক্ত করতে হয়, যা অনেক ক্লান্তিকর। অন্যদিকে, অপরিচালন পদ্ধতি লেবেলযুক্ত তথ্যের ওপর নির্ভর করে না। কিন্তু লেবেল না থাকলে অ্যালগরিদম কী শিখবে—এমন প্রশ্ন থেকেই যায়। এর উত্তরে বলা যায়, অ্যালগরিদমকে যে লেখাটি প্রশিক্ষণের জন্য দেওয়া হয়, সেই লেখার একটি শব্দের পরের শব্দ যেন বাছাই করতে পারে, অ্যালগরিদমকে সেই শিক্ষা দেয় চ্যাটজিপিটি। পরবর্তী শব্দ বাছাই করাকে খুব ছোট বিষয় মনে হতে পারে, যা কিনা গুগল সার্চের স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির মতো। কিন্তু চ্যাটজিপিটি বিভিন্ন জটিল কাজও করতে পারে। যেমন আইন পরীক্ষায় মেধাবী ছাত্রদের চেয়েও ভালো ফলাফল করে উত্তীর্ণ হওয়া। পরবর্তী সম্ভাব্য শব্দ বাছাই করার জন্য অ্যালগরিদমকে প্রাসঙ্গিক বিষয়, ব্যাকরণ, বাক্য গঠন ও শৈলীসহ বিভিন্ন কিছু বুঝতে বাধ্য করা হয়। এরই মধ্যে ফলাফলের যে নমুনা এটি দেখিয়েছে, তা এর নির্মাতাসহ সবাইকে অবাক করেছে। এদিকে, কয়েক দশক ধরে ভাষাবিদরা যেসব তত্ত্ব তৈরি করেছেন, সেগুলো না শিখেই ডিপ নিউরাল নেটওয়ার্ক (ডিএনএন) আরও ভালোভাবে কাজ করতে সক্ষম বলে প্রমাণিত হয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের শিক্ষা হলো—নীতিনির্ধারকদের এমন একটি কাজের দিকে মনোনিবেশ করা উচিত, যা সাধারণ বলে মনে হলেও দক্ষতা অর্জন করলে তারা আরও জটিল চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে জানতে বাধ্য হবেন। অন্যদিকে, উন্নয়ন অর্থনীতির ক্ষেত্রে প্রচলিত পদ্ধতি হলো—সম্ভাব্য কারণ এবং প্রবৃদ্ধির গভীর নির্ধারকগুলোর মধ্যে পার্থক্য করা এবং পরে মনোনিবেশ করা। এ পদ্ধতির ক্ষেত্রে বলা যায়, ‘পরবর্তী শব্দ বাছাই না করে বইয়ের প্রাসঙ্গিক বিষয় এবং অর্থ বোঝা।’

২০১২ সালে ‘হোয়াই নেশনস ফেইল’ নামে একটি বই প্রকাশিত হয়। এর লেখক ড্যারন অ্যাসেমোগ্লু এবং জেমস এ রবিনসন যুক্তি দেন, যেসব প্রতিষ্ঠান সমাজে প্রণোদনার কাঠামোকে প্রভাবিত করে, সেসব প্রতিষ্ঠান অর্থনৈতিক ফলাফলের চূড়ান্ত নির্ধারক। অন্যদিকে ব্রাউন ইউনিভার্সিটির অর্থনীতিবিদ ওডেড গ্যালোর ভিন্ন কথা বলছেন। তিনি জটিল জনসংখ্যাগত ও প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের দিকে জোর দিয়েছেন, যা মানবতাকে ম্যালথুসিয়ান ভারসাম্য থেকে বের করে এনেছে। সেই সঙ্গে দীর্ঘায়ু, শিক্ষায় উচ্চ বিনিয়োগের দিকে জোর দিয়েছে।

কিন্তু এসব তত্ত্বের সঙ্গে কি বাস্তবতার মিল রয়েছে? ওডেড গ্যালোরের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, গত চার দশকে উন্নয়নশীল বিশ্বের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। প্রয়াত চিকিৎসক হ্যান্স রোজলিংয়ের পর্যবেক্ষণ বলছে—আয়ু, শিশুমৃত্যু, শিক্ষা, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ, শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ এবং নগরায়নের ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশগুলোর মধ্যে ব্যবধান অনেক কমেছে। ড্যারন অ্যাসেমোগ্লু ও জেমস এ রবিনসন বলছেন, উন্নয়নশীল দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো যদি অনেক ক্ষেত্রে অগ্রগতি করতে পারে, তাহলে সেগুলোর পিছিয়ে পড়ার কারণ নেই। গ্যালোরের কাঠামো অনুযায়ী, এসব জায়গায় অগ্রগতির বিষয়ে ব্যাখ্যা করা উচিত—কেন উন্নয়নশীল দেশগুলো আয়ের ক্ষেত্রে এতটা এগিয়ে গেল।

এদিকে, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নগরায়ন এবং নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে ব্যবধান কম থাকা সত্ত্বেও মধ্যম অবস্থানের দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আয়ের ব্যবধান বেশি, যেখানে চার দশক আগেও এসব দেশের আয়ের অবস্থা একই রকম ছিল। এমন অসামঞ্জস্য ফলাফল কেন হলো, তা বুঝতে হলে জানতে হবে অর্থনীতিবিদরা এ ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত ব্যবধানকে কারণ হিসেবে দেখছেন। এ ক্ষেত্রে ব্যাখ্যা দেওয়ার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো গাণিতিক বিষয়। যেমন কোনো ক্ষেত্রে অনেক বেশি কার্যক্রম থাকা সত্ত্বেও যদি ফলাফল কম হয়, তাহলে বুঝতে হবে কিছু বিষয় সে কার্যক্রমকে দুর্বল করে তুলছে। এমন অপ্রত্যাশিত ফলাফলের ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য এটি লক্ষ্য করা জরুরি—যে কয়টি দেশ এ সমস্যা উতরে যেতে পেরেছে, তাদের দুটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন জিডিপির তুলনায় তাদের রপ্তানি অনেক দ্রুত বেড়েছে এবং তারা বিভিন্ন জটিল পণ্যের দিকে না ঝুঁকে বরং রপ্তানিকেই বৈচিত্র্যময় করে তুলেছে।

এমন সাফল্যের জন্য এসব দেশ অবশ্যই উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে, গড়ে উঠতে থাকা শিল্পকে গ্রহণ করতে জনসাধারণের ব্যবহার্য পণ্য এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ম-নীতির সামঞ্জস্যতা বজায় রেখেছে এবং উৎপাদন বাড়ানোসহ কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন ও ব্যয় কমাতে পেরেছে। চ্যাটজিপিটি থেকে অনুপ্রাণিত উন্নয়ন কৌশল মূলত কিছু সাধারণ লক্ষ্যের দিকে জোর দেয়, যেমন প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান, বৈচিত্র্য এবং রপ্তানির ক্ষেত্রে জটিল সমস্যা সমাধানে আরও উন্নতি ঘটানো। এ কাজগুলো কীভাবে করা সম্ভব, তা বের করার তাড়না নীতিনির্ধারকদের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করতে বাধ্য করে; যেভাবে একটি শব্দের পরবর্তী শব্দ কী হতে পারে, তা জানার জন্য চ্যাটজিপিটিকে প্রাসঙ্গিক বিষয়, ব্যাকরণ, বাক্য গঠন এবং বাক্যশৈলী সম্পর্কে জানতে হয়। শুরুর দিকের এআই প্রোগ্রামাররা ভাষাবিদ ও তাদের জটিল তত্ত্বের জন্য পেছনে পড়ে গিয়েছিলেন। নীতিনির্ধারকরাও জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের মতো অনেক বেশি উদ্দেশ্যের জন্য বিভ্রান্ত হয়েছিলেন।

কিন্তু অর্থনৈতিক উন্নয়নে চ্যাটজিপিটির পদ্ধতির প্রয়োগ বিষয়গুলোকে সহজ করতে পারে, ঠিক যেমন ভাষার মডেলগুলো পরবর্তী সম্ভাব্য শব্দ বাছাইয়ের চেষ্টা করে এবং নীতিনির্ধারকরা পরবর্তী রপ্তানি সুবিধার দিকে মনোনিবেশের চেষ্টা চালান। এটিকে ছোট পদক্ষেপের মতো মনে হলেও তা উল্লেখযোগ্য ফলাফল নিয়ে আসতে পারে।

রিকার্ডো হাউসম্যান : ভেনেজুয়েলার সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী, ইন্টার-আমেরিকান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জন এফ কেনেডি স্কুল অব গভর্নমেন্টের অধ্যাপক এবং হার্ভার্ড গ্রোথ ল্যাবের পরিচালক ৷

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ডাকসুর ভিপি প্রার্থী জালালের বিরুদ্ধে ছুরিকাঘাতের অভিযোগ

ডাকসু নির্বাচন / ছাত্রলীগ সম্পৃক্ততার দায়ে বাদ জুলিয়াস সিজার

ধর্ষণসহ হত্যায় ফুফাতো ভাইয়ের যাবজ্জীবন

কাজী নজরুলের কবিতা দেশের মুক্তিকামী মানুষকে সাহস যুগিয়েছে : তারেক রহমান

‘রোহিতকে সরানোর জন্যই ব্রঙ্কো টেস্ট এনেছে বিসিসিআই’

অভিনেত্রী হিমুর আত্মহত্যা, প্রেমিক রাফির বিচার শুরু

ভারতে প্রয়াত ক্রিকেটারদের স্ত্রীরা পাবে অনুদান

রাজধানীতে একক ব্যবস্থায় বাস চলবে : প্রেস উইং

ভিনিকে বিক্রি করে দিতে বললেন রিয়াল কিংবদন্তি

নতুন বিচারপতিদের মধ্যে সংখ্যালঘু নেই, ঐক্য পরিষদের ক্ষোভ

১০

বিসিবির হাতে বিপিএলের স্পট ফিক্সিং তদন্ত প্রতিবেদন

১১

ফেসবুকের বিরুদ্ধে জিডি করেছেন মাওলানা মামুনুল হক

১২

চুল পড়া রোধ করবে যে জিনিস

১৩

ডাকসু নির্বাচনে সাত সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন

১৪

সাদাপাথরকাণ্ডে এবার পুলিশে বড় রদবদল

১৫

৪৫ বছর ধরে ঝুপড়ি ঘরে থাকা সেই দম্পতির পাশে ইউএনও

১৬

শুনানিতে বিএনপি-এনসিপির মারামারির ঘটনায় ইসির জিডি

১৭

পাঁচ মাসে ১২ হাজার ২০০ কোটি টাকার প্রস্তাব পেল বিডা

১৮

নির্বাচন পিআর পদ্ধতিতেই হতে হবে : চরমোনাই পীর

১৯

৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণসহ হত্যায় ফুফাতো ভাইয়ের যাবজ্জীবন

২০
X