বৈষম্যমূলক পারিবারিক আইন পরিবর্তন করে সকল নাগরিকের সমঅধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অভিন্ন পারিবারিক আইন চালু করাসহ সম্পদ-সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকার ও সম অংশীদারিত্ব নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা।
রোববার (৩ মার্চ) বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস)-এর উদ্যোগে ‘বৈষম্য দূর করার জন্য উত্তরাধিকারে নারীর সমান অধিকার চাই’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে বিশিষ্টজনেরা এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীরের সভাপতিত্বে প্যানেল আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন- সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সাবরিনা জারিন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভানেত্রী ডা. ফওজিয়া মোসলেম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. এসএম মাসুম বিল্লাহ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর।
বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান এবং ল কমিশনের প্রতিনিধি আবেদা সুলতানা। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন বিএনপিএস-এর পরিচালক শাহনাজ সুমী।
স্বাগত বক্তব্যে রোকেয়া কবীর বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী-পুরুষ সমানাধিকার দিয়েছে। নারীসমাজকে এখনো ব্যাপক বৈষম্য ও নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। নারীর প্রতি বিদ্যমান সর্বব্যাপী বৈষম্যের মূল স্তম্ভ উত্তরাধিকারে সমান অধিকার না থাকা, যা বাল্যবিয়ে ও নারী নির্যাতনসহ সমাজ-রাষ্ট্রে চলমান বিভিন্ন উপসর্গের মূল কারণ। এই মূল কারণে হাত না দেওয়ায় সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগ সত্ত্বেও কিছুতেই এসব উপসর্গের রাশ টেনে ধরা যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, এগুলো রোগের উপসর্গ, মূল কারণে হাত না দিলে এই সংকট সমূলে উৎপাটন করা যাবে না। উত্তরাধিকারসহ সকল সম্পদ ও সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা, যা পরিবার, সমাজ ও রাজনীতিতে নারীর অবস্থান সুদৃঢ় করবে।
সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর বলেন, সংবিধান হচ্ছে সর্বোচ্চ আইন যেখানে জাতি, বর্ণ, ধর্ম নির্বিশেষে সকল নাগরিকের সমান অধিকারের বিষয়টি স্বীকৃতি পেয়েছে। সংবিধানে বলা হয়েছে, যদি কোনো আইন সংবিধান পরিপন্থি হয় তবে সেই আইন বলবৎ থাকবে না।
তিনি উল্লেখ করেন, ধর্মীয় অনুসরণ অনুযায়ী পারিবারিক আইনটি প্রণীত হয়েছে। তা এখনো কার্যকর আছে যা নারীর জন্য বৈষম্য ও নির্যাতনের উৎসে পরিণত হয়েছে। সর্বজনীন পারিবারিক আইন প্রণয়ন করা রাষ্ট্রের কর্তব্য।
সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সাবরিনা জারিন বলেন, বৈষম্যমূলক উত্তরাধিকার আইনটি সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক হওয়া সত্ত্বেও পরিবর্তন না হওয়ার পেছনে পুরুষতান্ত্রিক মন মানসিকতাই দায়ী। আইনে যেটুকু আছে সেটুকুও নারীকে প্রদান করা হয় না। নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি বৈষম্য ও নির্যাতন সরাসরি পারিবারিক সম্পত্তিতে নারীর সমঅধিকার না থাকার বিষয়টি জড়িত।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ড. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, সব আইন সংবিধানের আলোকে তৈরি ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। শুধু এই আইনটি সংশোধন করা হচ্ছে না নারীদের পশ্চাদপদ করে রাখার জন্য। অবিলম্বে অভিন্নও সার্বজনীন পারিবারিক আইন প্রণয়ন ও চালু করে নারীর প্রতি বৈষম্য ও নির্যাতন বন্ধ করার পথ সুগম করতে হবে।
মন্তব্য করুন