কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০৫:৪৮ পিএম
আপডেট : ২৫ জানুয়ারি ২০২৪, ১১:২৬ এএম
অনলাইন সংস্করণ

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বদলেছে ১৭ শতাংশ চাষাবাদ : এমজেএফ

কৃষকরা ধান লাগাচ্ছে। পুরোনো ছবি
কৃষকরা ধান লাগাচ্ছে। পুরোনো ছবি

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে চর, হাওর, পাহাড় ও উপকূলীয় এলাকায় ১৭.১ শতাংশ কৃষকের চাষাবাদের ধরন বদলে গেছে বলে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের (এমজেএফ) এক জরিপে উঠে এসেছে। বুধবার (২৪ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় ভার্চুয়ালি আয়োজিত গবেষণা ফল উপস্থাপন অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সুইডেন দূতাবাসের সহায়তায় এমজেএফ চার বছরব্যাপী (সেপ্টেম্বর ২০২২ থেকে আগস্ট ২০২৬) ‘কমিউনিটিভিত্তিক জলবায়ু সহনশীলতা ও নারীর ক্ষমতায়ন কর্মসূচি (ক্রিয়া)’ নামক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পটির আওতায় ১৪টি জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ জেলার ১৪ উপজেলার ২৮টি ইউনিয়নে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় ঝুঁকিপূর্ণ সম্প্রদা‍য়গুলোর আর্থ-সামাজিক অবস্থা এবং বিশেষ করে নারী ও মেয়ে শিশুদের যে কোনো প্রয়োজনে সরকারি সংস্থাগুলো কীভাবে সাড়া দেয় তা মূল্যায়নের জন্য অ্যাসোসিয়েটস ফর ইনোভেটিভ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এআইআরডি) লিমিটেডের সহযোগিতায় এই বেসলাইন জরিপ পরিচালিত হয়।

এই জরিপে ৩৫৩ জন পুরুষ ও ৬৫৭ জন নারী ও ১২ জন হিজড়া অংশ নেন। কৃষির সঙ্গে জড়িত ১৭.১ শতাংশ অংশগ্রহণকারী জানান, কৃষিতে জলবায়ু পরিবর্তনের নানা প্রভাব পড়েছে। প্রভাব মোকাবিলায় তারা চাষাবাদের ধরন বদলে ফেলেছে। যেমন, উচ্চ ফলনশীল জাতের চারা/বীজ ব্যবহার করছেন, ফসল কাটার সময় বদলে ফেলছেন, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বীজ সংরক্ষণ করছেন, জমিতে দিচ্ছেন কেঁচো সার ও জৈব সার।

জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৭৫.৭ শতাংশ বিবাহিত। তাদের দেওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, পুরুষদের বিয়ের গড় বয়স ২৬ ও নারীদের ১৬। গুণগত বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট দারিদ্র্য ও সামাজিক রীতি-নীতি মেয়েদের কম বয়সে বিয়ের মূল কারণ।

এই জরিপে আরও উঠে এসেছে অংশগ্রহণকারীদের ৩০.৭২ শতাংশ (২২৭ জন নারী, ৮৩ জন পুরুষ ও ৫ জন হিজড়া) গত এক বছরে বিভিন্ন ধরনের সহিংসতার (শারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিক ও যৌন) শিকার হয়েছেন কিন্তু অভিযোগ জমা দিয়েছেন ১৫.৬ শতাংশ। চর এলাকায় অভিযোগ করার হার সর্বোচ্চ এবং পাহাড়ি এলাকায় সহিংসতার শিকার হলেও কেউ অভিযোগ জমা দেয়নি।

গুণগত বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গ্রামীণ নারীদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতা সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারণা ও করণীয় বিষয়ে ঘাটতি আছে। তারা সহিংসতার শিকার হলে সামাজিক অপবাদের ভয়ে ঘটনাগুলো প্রকাশ করেন না। অনেকেই মনে করেন এ ধরনের সহিংসতা অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব লুবনা ইয়াসমীন বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন এখন একটা বৈশ্বিক সমস্যা। বাংলাদেশের মতো দুর্যোগপ্রবণ দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের বড় ধরনের প্রভাব মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় দীর্ঘমেয়াদি কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। যেমন, জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা, ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন (এনডিসি), মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্ল্যান। জলবায়ুর পরিবর্তন ঠেকাতে আমরা আমাদের পরিকল্পনার মাধ্যমে কার্বন নিঃসরণ কমানোর প্রতিজ্ঞা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এগুলো খুবই উচ্চভিলাষী পরিকল্পনা। এগুলো বাস্তবায়নে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। ২৭ বছর মেয়াদি জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে লাগবে ২৩০ মিলিয়ন ডলার। মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্ল্যানে লাগবে ৮০ মিলিয়ন ডলার। এনডিসিতে লাগবে ১২৭ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ গড়ে প্রতি বছর প্রয়োজন ১১ মিলিয়ন ডলার। এজন্য আমাদের আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সাহায্য নিতে হচ্ছে। তারা বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে খুবই আগ্রহী। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের উন্নয়ন নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। যা অন্যদের আগ্রহী করে তুলছে আমাদের সঙ্গে কাজ করতে।’

তিনি আরও বলেন, ‘নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আমরা নারীর ক্ষমতায়ন ও জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কাজ করছি। তবে নারী ও কিশোর-কিশোরীদের ওপর যেহেতু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, তাই তাদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের আওতায় নিয়ে আসাটা বেশি জরুরি।

সমাপনী বক্তব্যে অনুষ্ঠানের সভাপতি মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, ‘আমাদের এই বেসলাইন সার্ভেতে নারীর প্রতি সহিংসতার বিষয়টিও উঠে এসেছে। এ প্রসঙ্গে আমরা বারবার হোঁচট খাই। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে বেশকিছু বিষয় একসঙ্গে কাজ করতে হয়। যেমন, আইন ও নীতিমালার বাস্তবায়ন, নারীদের দক্ষতা বাড়ানো, তার অবদান স্বীকার করা। এভাবেই নারীর অবস্থা ও অবস্থানের উন্নয়ন ঘটাতে হবে।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কেমন আছেন ইমরান খান, সাক্ষাতের পর জানালেন বোন উজমা

মোদিকে ধন্যবাদ জানাল বিএনপি

৮ কুকুরছানা হত্যায় মামলা প্রস্তুতি, বাসভবন ছাড়লেন অভিযুক্ত কর্মকর্তা

নারায়ণগঞ্জ-৫ / মাসুদুজ্জামানের ক্যানভাসে জনতার প্রত্যাশা

শিক্ষকদের কর্মবিরতি স্থগিত, বার্ষিক পরীক্ষা চলবে বুধবার

নরসিংদীতে স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা

টিউলিপের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না পাওয়ার দাবি ‘সম্পূর্ণ অসত্য’: দুদক

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ১০৬ মামলায় চার্জশিট দিল পুলিশ

খালেদা জিয়াকে দেখে এসে যা বললেন জামায়াত আমির

ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে ছিনতাই

১০

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ডিভাইডারের গ্রিল ভেঙে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার

১১

৮ কুকুরছানাকে হত্যা, ইউএনও কার্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে মা কুকুর

১২

অন্তঃসত্ত্বা নারীসহ ৬ ভারতীয় নাগরিকের জামিন

১৩

খালেদা জিয়া ভারতের চোখে চোখ রেখে কথা বলা শিখিয়েছেন : রাশেদ

১৪

২১৫ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন সভাপতি

১৫

নতুন বেতন কমিশন বাস্তবায়ন নিয়ে কর্মসূচি ঘোষণা

১৬

‘যারা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে, তারা দেশপ্রেমিক হতে পারে না’

১৭

খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় ঢাকা উত্তর ছাত্রদলের দোয়ার আয়োজন

১৮

জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আলী হোসাইন, মহাসচিব মোস্তাফিজুর

১৯

সাতক্ষীরায় শিক্ষকদের কর্মবিরতি, সংঘর্ষের ছবি নেওয়ায় শিক্ষার্থীদের মারমুখী আচরণ

২০
X