নারীর প্রতি যৌন নির্যাতনসহ সব ধরনের নির্যাতন একটি ফৌজদারি অপরাধ। এটি কেবল নারীর মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়। এ ধরনের অপরাধে বিচার প্রক্রিয়া বলবৎ করতে হবে। আইন অমান্য করার সংস্কৃতি থেকে সমাজকে মুক্ত করতে হবে। অভিযোগ কমিটির কার্যকারিতা তরান্বিত করাসহ এই কমিটির কার্যক্রম নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে দায়বদ্ধতার ভূমিকা পালন করতে হবে।
বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম এসব কথা বলেন। সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির উদ্যোগে সাম্প্রতিক সময়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত যৌন-নিপীড়নের ঘটনার প্রতিবাদে এ সংবাদ-সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
বক্তারা বলেন, নারীর প্রতি বিদ্বেষের সংস্কৃতি, ঘৃণার সংস্কৃতির বিস্তার ঘটে চলেছে সর্বস্তরে। এটি অত্যন্ত আশঙ্কার বিষয়। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অহরহ যৌন হয়রানি, যৌন উত্ত্যক্তকরণের মতো লজ্জাজনক, চরম নীতিহীনতার ঘটনা ঘটছে। সমাজের চলমান নিরবতার সংস্কৃতি চালু থাকার কারণে জনসমক্ষে আসলেও অনেক ঘটনাই চাপা পড়ে যাচ্ছে। নিরাপত্তার অভাবে, নানা ধরনের অন্যায় আচরণের কারণে, হুমকি-ভয়-ভীতির কারণে অনেক নারী শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা থেকে ঝড়ে পড়ছেন। প্রচণ্ড মানসিক চাপ আর অসহায়ত্বের কারণে আত্মহননের দিকে যেতে অনেক শিক্ষার্থী বাধ্য হচ্ছে।
বক্তারা আরও বলেন, হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখনো যৌন হয়রানি প্রতিরোধের অভিযোগ কমিটি গঠিত হয়নি। কোথাও কোথাও কমিটি গঠিত হলেও সেসব কমিটি সক্রিয় নয়। হাইকোর্টের নির্দেশনা এবং অভিযোগ কমিটি সম্পর্কে শিক্ষাঙ্গনের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের অনেকেই অবহিত নন, সচেতন নন।
কর্মজীবী নারীর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও প্রাক্তন সংসদ সদস্য শিরিন আখতার সুপারিশগুলো তুলে ধরে বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নারীর প্রতি যৌন নির্যাতনের ঘটনা প্রতিরোধে রাষ্ট্রকে জোরালো ভূমিকা পালন বেশি প্রয়োজন। যৌন নিপীড়নের ঘটনা প্রতিরোধ করতে হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সরকার, প্রশাসন ও মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে।
বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের পরিচালক শাহনাজ সুমী বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিরাপদ পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে কিছু দুষ্কৃতিকারীদের দৃষ্টিভঙ্গির কারণে। শিক্ষক নিয়োগের সময় ও তাদের কাজের মূল্যায়নের সময় আচার-আচরণের বিষয়টি মূল্যায়নের উপর গুরুত্ব দিতে হবে।
বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলমান নিপীড়নের ঘটনা প্রতিরোধে হাইকোর্ট প্রণীত নীতিমালা অনুযায়ী মন্ত্রণালয়কে ঘটনাগুলোর মনিটরিং করাসহ প্রতিষ্ঠানে থাকা যৌন নিপীড়ন কমিটির তৎপরতা বৃদ্ধি, ৫-৭ সদস্যবিশ্ষ্টি কমিটি গঠন, দুইমাস পরপর কমিটির পরিবর্তনের উপরগুরুত্বারোপ করেন।
লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন একশন এইডের মরিয়ম নেসা। সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের অ্যাডভোকেসি ও লবি পরিচালক জনা গোস্বামী।
মন্তব্য করুন