শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৫৫ পিএম
আপডেট : ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ১১:১৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ত্রাণের পরিবর্তে আফ্রিকার প্রয়োজন দুর্লভ খনিজের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ

আফ্রিকা মহাদেশ তার খনিজ সম্পদের পূর্ণ  নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে তার নিজস্ব ভাগ্য নির্মাণ করতে সক্ষম। ছবি : সংগৃহীত
আফ্রিকা মহাদেশ তার খনিজ সম্পদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে তার নিজস্ব ভাগ্য নির্মাণ করতে সক্ষম। ছবি : সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের বিদেশি সহায়তা স্থগিত করা এবং ইউএসএইড সংস্থাটি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত উন্নয়ন খাতে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ৪১ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক সহায়তার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ আফ্রিকায় দেওয়া হয়, যা স্বাস্থ্যসেবা থেকে শুরু করে শিক্ষা ও পয়ঃপ্রণালীসহ বিভিন্ন খাতে খরচ হয়।

কিন্তু যখন পশ্চিমা সহায়তা সংস্থাগুলো বিপদের ঘণ্টা বাজাচ্ছে এবং সরকারি কর্মকর্তারা স্থগিত প্রকল্পগুলো নিয়ে উদ্বিগ্ন, তখন আমরা বৃহত্তর ছবিটি দেখতে ভুল করছি। আফ্রিকার বিদেশি সহায়তার ওপর নির্ভরতা একটি পছন্দ, কোনো অপরিহার্যতা নয়। আফ্রিকা মহাদেশে এমন সব দুর্লভ খনিজের বিশাল ভাণ্ডার রয়েছে, যেগুলো আগামী দিনের প্রযুক্তি ও জ্বালানিতে চালিকাশক্তি হিসেবে ভূমিকা রাখবে। তবুও আমরা অহেতুক সহায়তা নির্ভরতার চক্রে বন্দি হয়ে আছি। এখনই সময় সব পাল্টে দেওয়ার।

যেসব কিছু ঝুঁকিতে আছে, তা স্পষ্টভাবে বোঝা দরকার। ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো (ডিআরসি) বিশ্বে ব্যবহৃত মোট কোবাল্টের ৭০ শতাংশ সরবরাহ করে- যা বৈদ্যুতিক গাড়ির (ইভি) ব্যাটারি তৈরিতে একটি অপরিহার্য উপাদান।

বিশ্বে ব্যবহৃত প্ল্যাটিনামের ৭৫ শতাংশ এবং প্যালাডিয়ামের ৫০ শতাংশ এককভাবে উৎপাদন করে সাউথ আফ্রিকা। মোজাম্বিক ও মাদাগাস্কারে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গ্রাফাইটের ভাণ্ডার রয়েছে। জিম্বাবুয়ে রয়েছে জিপিএস ও ফাইভ-জি প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ ধাতু সিজিয়ামের সবচেয়ে বড় মজুত।

এগুলো শুধু শিলা বা ধাতু নয়, বরং বৈশ্বিক নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে সফলতা অর্জনে মূল চাবিকাঠি। প্রতিটি বৈদ্যুতিক গাড়ি (ইভি), সৌর প্যানেল এবং উইন্ড টারবাইনের পিছনে যে খনিজগুলো দরকার সেই সব খনিজের প্রাচুর্য রয়েছে শুধু আফ্রিকা মহাদেশে।

তবুও, আমরা এখনো উপনিবেশিক শাসনামলের মতো কাঁচামাল রপ্তানি করছি, আর সেই দেশগুলোর কাছ থেকেই সহায়তা চাইছি যারা আমাদের সম্পদ থেকেই লাভবান হচ্ছে।

অর্থনৈতিক শোষণের চক্রের চিত্রটা বেদনাদায়ক। আমরা কাঁচামাল হিসেবে কোবাল্ট বিক্রি করছি প্রতি কেজি ২৬-৩০ ডলারে, যেখানে ব্যাটারি তৈরির উপযুক্ত প্রক্রিয়াজাত কোবাল্ট বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৫০-২০০ ডলারে।

অর্থাৎ, আমরা প্রকৃত মূল্যের ৮০ শতাংশেরও বেশি বঞ্চিত হচ্ছি বিদেশি প্রক্রিয়াজাতকারী ও নির্মাতাদের কারণে। এটা কেবল অলাভজনক এবং বাজে ব্যবসাই নয়- এটা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের পথে আত্মঘাতী। শুধু ব্যাটারির বাজারই ২০৩০ সালের মধ্যে ২৫০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত দ্রুত গতিতে বাড়ছে, যেখানে সৌর বিদ্যুৎ স্থাপন প্রতি বছর ২৬ শতাংশ হারে বাড়ছে।

স্পষ্টতই, আফ্রিকার খনিজ সম্পদ আমাদের প্রজন্মের জন্য বৃহত্তম অর্থনৈতিক সুযোগ। কিন্তু সেই মূল্য ধরার পরিবর্তে আমরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছি স্থগিত হওয়া সহায়তার ঘাটতি পূরণ নিয়ে আলোচনা করতে।

সমালোচকরা বলবেন, আমরা এখনো এসব খনিজ নিজেরাই প্রক্রিয়াকরণে যথাযথ অবকাঠামো, দক্ষতা এবং মূলধন অর্জন করতে পারিনি। তবে এটাও সত্য, এমন শিল্প গড়তে প্রস্তুতি আমাদের নেই। তারা সঠিক অবস্থানে রয়েছে, তবে এই মুহূর্ত পর্যন্ত।

কিন্তু এটাই সেই জায়গা যেখানে আমাদের সম্পদ বিনিয়োগ করতে হবে, আমাদের রাজনৈতিক সদিচ্ছা একীভূত করতে হবে। চীন বহু আগেই তা বুঝেছিল এবং তারা আফ্রিকাজুড়ে গুরুত্বপূর্ণ খনিজের সরবরাহ লাইনে নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রায় ৫৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। তারা আমাদের খনিজের অভাবনীয় সম্ভাবনা এবং ভবিষ্যৎ অনুধাবন করতে পারছিল, যখন আমরা ত্রাণ-সহায়তা পেতে আবেদনপত্র পূরণে ব্যস্ত ছিলাম।

খনিজ সম্পদে নিয়ন্ত্রণের জন্য পরিকল্পনা জটিল নয়, তবে এটি চ্যালেঞ্জিং : শুধু খনন আর খনির ক্ষেত্র করে রাখলেই হবে না, আমাদের দরকার প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে তোলা। এমন বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলতে হবে যেখানে খনিজ সম্পদের মানোন্নয়ন হবে, কেবল রপ্তানির জন্য টার্মিনাল নয়। দরকার গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র- যেখানে নতুন প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, আমাদের আঞ্চলিকভাবে চিন্তা ও কাজ করতে হবে।

ভাবুন, একটি ‘দক্ষিণাঞ্চলীয় আফ্রিকান ব্যাটারি উৎপাদন উদ্যোগ’ যেখানে অঞ্চলভিত্তিক দেশগুলো সম্পদ ও দক্ষতা একত্রিত করে একটি সমন্বিত মূল্য নির্ধারণ করবে। ভাবুন, ‘পূর্ব আফ্রিকান রেয়ার আর্থ এলিমেন্ট সহযোগিতা কাঠামো’, যা আমাদের খনিজ সম্পদকে উচ্চ-প্রযুক্তি উৎপাদনে রূপান্তর করছে। এগুলো অলীক কল্পনা নয়- এসব সুযোগ প্রতিনিয়ত আমাদের হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে।

খনিজ নিয়ে পরিবেশবিদরা বলবেন, খনন প্রক্রিয়া নোংরা ও পরিবেশের জন্য ধ্বংসাত্মক। তারা ঝুঁকি নিয়ে ভুল বলছেন না, তবে সমাধান নিয়ে ভুল করছেন। আমাদের দুর্লভ খনিজ মাটির নিচে রেখে দেওয়াই সমাধান নয়, বরং আমাদেরই উচ্চমানের টেকসই খনন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ নীতি তৈরি করা উচিত।

আমরা এমন শিল্প গড়ে তুলতে পারি যা পরিবেশ রক্ষা করে এবং স্থানীয় জনগণের উপকারে আসে। আমাদের অবশ্যই তা করতে হবে। তা না করতে পারলে বিকল্প হিসেবে যা করতে হবে তা হলো, বিদেশি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের মতো করে সব করবে, আর ক্ষতিটা আমাদেরই সামাল দিতে হবে।

অতএব, আফ্রিকার ভবিষ্যৎ শুধু ত্রাণ সহায়তার ওপর নির্ভরশীল না হয়ে, তার খনিজ সম্পদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে থাকার মধ্যে নিহিত। যদি আমরা আমাদের সম্পদের যথাযথ ব্যবহার ও প্রক্রিয়াজাতকরণ শুরু করি, তাহলে আফ্রিকা এক নতুন অর্থনৈতিক যুগে প্রবেশ করবে, যেখানে বিদেশি সাহায্য হবে শুধুই অতীতের ইতিহাস। আফ্রিকা তার খনিজ সম্পদের মাধ্যমে তার নিজস্ব ভাগ্য নির্মাণ করতে সক্ষম।

ম্যাক্সওয়েল গোমেরা রুয়ান্ডায় জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির প্রতিনিধি আল-জাজিরায় প্রকাশিত কলাম থেকে অনুবাদ

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সিরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা কমাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র   

আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ৪২ জনকে স্ট্যান্ড রিলিজ

 ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ‘তুই’ বলায় তুমুল সংঘর্ষ, শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা বর্জন

আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের বিকল্প নেই : গণতন্ত্র মঞ্চ 

চার দেশে বন্যায় ১৫০০ মৃত্যুর পর নতুন আতঙ্ক

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ স্থগিত

শাহজালালে ‘এয়ারপোর্ট মিনি ফায়ার এক্সারসাইজ-২০২৫’ সম্পন্ন

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম

ইউএনও হলেন লাক্স সুন্দরী সোহানিয়া

তারেক রহমানের ৩১ দফায় বদলে যাবে শরীয়তপুর : নুরুদ্দিন আহাম্মেদ অপু

১০

এরশাদ-হাসিনা কারও সঙ্গেই আপস করেননি খালেদা জিয়া : মিল্লাত

১১

মান্নাকে ইসলামী ব্যাংকের চূড়ান্ত নোটিশ, আইনি ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি

১২

সব দল ইসলামের পতাকাতলে সমবেত হবে ইনশাআল্লাহ : অধ্যাপক মুজিবুর

১৩

মনোনয়নের খবর শুনে উচ্ছ্বাস, কিছুক্ষণ পর বিএনপি নেতার মৃত্যু

১৪

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হত্যা / সাবেক বিচারপতি-হুইপসহ ১৫৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট

১৫

ইসলামের বিষয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে : ধর্ম উপদেষ্টা

১৬

ববি উপাচার্য দপ্তরে ‘মুলা’ ঝুলিয়ে প্রতীকী প্রতিবাদ

১৭

ধেয়ে আসছে তীব্র শীত, দফায় দফায় শৈত্যপ্রবাহ

১৮

‘বাকসু’ নিজেদের রাখতে বিএম কলেজ শিক্ষার্থীদের হুঁশিয়ারি

১৯

নিবন্ধন পেতে যাচ্ছে ২ রাজনৈতিক দল

২০
X