কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ৩১ আগস্ট ২০২৫, ০৫:৩৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

মানুষের পালানোর সব পথ বন্ধ করতে শহরের চারপাশে দেওয়া হচ্ছে মাটির দেয়াল

যুদ্ধবিধ্বস্ত এল-ফাশেরের বেশিরভাগ মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে পড়েছেন। ছবি : সংগৃহীত
যুদ্ধবিধ্বস্ত এল-ফাশেরের বেশিরভাগ মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে পড়েছেন। ছবি : সংগৃহীত

সুদানের দারফুর অঞ্চলের এল-ফাশের শহরকে ঘিরে বিশালাকার মাটির বাঁধ বা দেয়াল তৈরি করছে আধাসামরিক বাহিনী র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যানিটারিয়ান রিসার্চ ল্যাব (এইচআরএল) স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করে জানিয়েছে, চলতি বছরের মে মাস থেকে শুরু হওয়া এই নির্মাণকাজে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩১ কিলোমিটার (১৯ মাইল) দীর্ঘ দেয়াল গড়ে তোলা হয়েছে।

প্রায় এক বছর ধরে অবরুদ্ধ এল-ফাশের দারফুরে সেনাবাহিনীর শেষ প্রধান ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে এখানে প্রায় তিন লাখ মানুষ আটকে আছেন, যারা এখন কার্যত মৃত্যুঘেরের ভেতর অবস্থান করছেন।

বেসামরিকদের ওপর ভয়াবহ হামলা

সুদান ডাক্তার্স নেটওয়ার্কের দাবি, আরএসএফ সুপরিকল্পিতভাবে সাধারণ মানুষকে নিশানা করছে। ডা. মোহাম্মদ ফয়সাল হাসান জানান, গতকাল শহরের কেন্দ্রে চালানো গোলাবর্ষণে ২৪ জন নিহত ও কমপক্ষে ৫৫ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে পাঁচজন নারীও রয়েছেন। এর মাত্র তিন দিন আগে শহরের সবচেয়ে বড় হাসপাতাল লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়, যেখানে রোগী ও চিকিৎসকদের ওপর চালানো হয় নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ।

‘কিল বক্স’ বা মৃত্যুঘের

ইয়েলের গবেষকদের ভাষায়, এটি কেবল প্রতিরক্ষামূলক বাঁধ নয়, বরং একেবারে একটি ‘কিল বক্স’ বা মৃত্যুঘের। তারা জানান, সবুজ রেখা : ৯ কিমি, ১৪-২৪ জুলাইয়ের মধ্যে নির্মিত, নীল রেখা : ৭ কিমি, ৫ মে-১২ জুলাইয়ের মধ্যে, হলুদ রেখা : ৬ কিমি, ৩-১৯ আগস্টের মধ্যে এবং লাল রেখা : ৯ কিমি, ১৩-২৭ আগস্টের মধ্যে নির্মাণাধীন।

স্যাটেলাইট ছবিতে এল ফাসোর শহরে ঘিরে দেওয়া মাটির বাঁধ।

শহর ঘিরে এই দেওয়ালের ফলে শহর থেকে বের হওয়ার প্রায় সব পথ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে খাদ্য, ওষুধ ও মানবিক সহায়তা প্রবেশ করাও কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

স্থানীয়দের অসহায় অবস্থা

৩৭ বছর বয়সী স্কুলশিক্ষক হালিমা হাশিম এএফপিকে বলেন, “এখানে থাকা মানে ধীরে ধীরে মৃত্যুবরণ করা। কিন্তু পালিয়ে যাওয়াটাও মৃত্যুর সমান ভয়ঙ্কর। আমাদের কাছে পালানোর মতো সামর্থ্য নেই।”

স্যাটেলাইট চিত্রে আরও দেখা গেছে, আলসেন গ্রামে নির্মাণাধীন বাঁধের কারণে ২০ মে থেকে ৬ জুলাইয়ের মধ্যে প্রায় পুরো গ্রাম ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া বিমানবন্দরের কাছে সেনাদের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি পানি সরবরাহ কেন্দ্রকেও আরএসএফ হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

ভয়াবহ ভবিষ্যৎ সংকটের আশঙ্কা

বিশ্লেষকদের মতে, যদি এল-ফাশের পতন ঘটে, তাহলে আরএসএফ পুরো পশ্চিম দারফুরকে দখল করে নেবে। এতে দেশটি দুই ভাগ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হবে, কারণ সেনাবাহিনী ও আরএসএফ উভয়ই ইতোমধ্যে পৃথক সরকার গঠন করেছে।

সেন্ট্রাল দারফুরের সাবেক গভর্নর আদিব আব্দেল রহমান ইউসুফ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে জরুরি হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এল-ফাশেরের সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বড় মূল্য দিচ্ছে। তাদের বাঁচানোর জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

সূত্র : বিবিসি

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

অবশেষে হাত মেলালেন ভারত-পাকিস্তানের খেলোয়াড়েরা

যে উপায়ে পেঁয়াজ কাটলে চোখের পানি ঝরবে না

‍‌‌‘রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে নির্ভয়ে সংবাদ প্রকাশ করছে কালবেলা’

‘বস্তুনিষ্ঠ সংবাদের মাধ্যমে কালবেলা জনগণের মুখপত্র হিসেবে কাজ করছে’

চমক রেখে ওয়ানডে দল ঘোষণা বাংলাদেশের

মেট্রোরেল চলাচলের নতুন সময়সূচি প্রকাশ

যশোর বোর্ডে ২০ প্রতিষ্ঠানে পাস করেনি কেউ

সাদ হত্যা মামলায় ছাত্রলীগ নেতা হাবিব গ্রেপ্তার

স্ত্রীসহ সাবের হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুদকের ২ মামলা 

উপদেষ্টাদের কল রেকর্ড কোনো ব্যক্তির কাছে থাকাটা ‘বেআইনি ও ব্লাকমেইলিং’ : রিজভী

১০

জাতীয় বেতন স্কেল কবে থেকে, জানালেন শিক্ষা সচিব

১১

ময়মনসিংহে ১৫ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাস করেনি কেউ

১২

আবারও একসঙ্গে রাজ-মানজুর-রুমি

১৩

রাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন

১৪

আর্জেন্টিনা-মরক্কো ফাইনাল কবে কোথায়

১৫

চট্টগ্রামে ফল বিপর্যয়, পাসের হার কমেছে ১৮ শতাংশ

১৬

এইচএসসির ফলাফল খারাপ হওয়ায় শিক্ষার্থীর কাণ্ড

১৭

জুলাই জাতীয় সনদে যা রয়েছে

১৮

শিক্ষকদের ‘মার্চ টু যমুনা’ নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত

১৯

চট্টগ্রাম ইপিজেডে কারখানায় ভয়াবহ আগুন

২০
X