শুল্কযুদ্ধে রাশ টেনে এবার সংঘর্ষ বিরতির পথে হাঁটল যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। দীর্ঘ আলোচনার পর সোমবার অবশেষে ৯০ দিনের জন্য শুল্ক কমাতে সম্মত হলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এ সিদ্ধান্তে পৌঁছায় দুই দেশ। এর ফলে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছিল, তা সাময়িকভাবে প্রশমিত হওয়ার আশ্বাস মিলেছে।
সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, এই চুক্তি অনুযায়ী ১২৫ ও ১৪৫ শতাংশ পারস্পরিক শুল্কের পরিবর্তে আগামী ৯০ দিনের জন্য চীন মার্কিন পণ্যে ১০ শতাংশ ও যুক্তরাষ্ট্র ১৪৫ শতাংশের পরিবর্তে মাত্র ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে।
মার্কিন রাজস্ব সচিব স্কট বেসেন্ট জানান, চুক্তি অনুযায়ী আমেরিকা ও চীন ৯০ দিনের জন্য পরস্পরের উপর আরোপিত শুল্ক গড়ে ১১৫ শতাংশ কমাবে। আগামী ১৪ মে থেকে শুরু হওয়া এই শুল্ক হ্রাসের ফলে আমেরিকা চীনা পণ্যে শুল্ক ১৪৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩০ শতাংশে আনবে এবং চীন মার্কিন পণ্যে শুল্ক ১২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ ধার্য করবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে চীনা পণ্যের উপর অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপের ফলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছিল। মার্কিন বন্দরগুলিতে চীন থেকে আগত জাহাজের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে যায়। অপরদিকে, চীনের অর্থনীতিতেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে—কারখানার উৎপাদন কমে যায়, এবং বহু শ্রমিক ছাঁটাইয়ের মুখে পড়ে।
চুক্তির পর বেসেন্ট জানান, ‘উভয় দেশের প্রতিনিধিদের ঐকমত্য হয়েছে যে, আমরা বিচ্ছিন্নতা চাই না। অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ প্রায় এক প্রকার বাণিজ্যিক অবরোধের রূপ নিয়েছিল, যা কেউই চায় না।’
এই চুক্তিকে দুই দেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কের ভিত্তি বলেই মনে করা হচ্ছে। যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়ে নিয়মিত আলোচনার জন্য একটি স্থায়ী মেকানিজম গঠন করা হবে, যার নেতৃত্বে থাকবেন মার্কিন রাজস্ব সচিব স্কট বেসেন্ট এবং চীনের ভাইস প্রিমিয়ার হি লিফেং।
চুক্তির খবর প্রকাশের পর শেয়ারবাজারে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচক ৩ শতাংশ বেড়ে যায় এবং ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারেও ঊর্ধ্বগতি দেখা যায়। তবে নিরাপদ বিনিয়োগের মাধ্যম হিসেবে পরিচিত সোনার দাম ৩ শতাংশ কমেছে।
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একে দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব নিরসনের পথে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে বর্ণনা করেছে এবং বলেছে—এটি সহযোগিতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে ভবিষ্যতের সম্পর্ককে সুদৃঢ় করবে।
মন্তব্য করুন