মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম শক্তিশালী দেশ ইরান এপ্রিল মাসে ৩০০-এর বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন দিয়ে ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছিল। এর পর পরই ইরানের তেল রপ্তানির ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আলোচনায় আসে। যে তেলের ওপর নির্ভর করছে দেশটির অর্থনীতি।
ইরান তাদের তেল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে যেতে পেরেছে একটি কৌশলে। এ ক্ষেত্রে তেহরানের সবচেয়ে বড় ক্রেতা চীন তাদের সাহায্য করেছে।
ইরানের মোট তেল রপ্তানির ৮০ ভাগই যায় চীনে, ইউএস হাউস ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস কমিটির এক প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রতিদিন ইরান প্রায় ১.৫ মিলিয়ন ব্যারেল তেল চীনে রপ্তানি করে থাকে।
ইরানের সঙ্গে বাণিজ্যের যথেষ্ট ঝুঁকি আছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের নানা নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলা করতে হয়।কিন্তু তারপরও বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রেতা চীন কেন ইরান থেকে তেল কিনে?
কারণটা খুবই সহজ, ইরানের তেল মানে ভালো এবং দামে সস্তা। নানা আন্তর্জাতিক সংঘর্ষের কারণে বিশ্বে তেলের দাম বেড়েই চলেছে, কিন্তু নিষেধাজ্ঞায় থাকা ইরান যেহেতু তাদের তেল বিক্রিতে মরিয়া, তারা অন্যদের চেয়ে কম দাম অফার করে থাকে।
২০২৩ সালের প্রথম ৯ মাসে চীন অন্তত ১০ বিলিয়ন ইউএস ডলার বাঁচিয়েছে ইরানের। অপরিশোধিত তেলের যে বৈশ্বিক মানদণ্ড তা পরিবর্তিত হয়, তবে সাধারণ প্রতি ব্যারেল ৯০ ডলারের নিচে থাকে।
এ বিষয়ে ডেটা ও অ্যানালেটিক্স ফার্ম কেপিএলআরের সিনিয়র অ্যানালিস্ট হুমায়ুন ফালাকশাহি বলেন, ইরান তাদের ক্রুড তেল ব্যারেল প্রতি ৫ ডলার কমে বিক্রি করে। গত বছর ব্যারেলপ্রতি যেটার দাম সর্বোচ্চ ১৩ ইউএস ডলার পর্যন্ত কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পুরো বিষয়টির ভূরাজনৈতিক দিক আছে বলে মনে করেন ফালাকশাহি। কারণ চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যে বিরাট খেলা চলছে ইরান তার একটা অংশ।
ইরানের অর্থনীতিকে সহায়তার মাধ্যমে চীন মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামনে একটা ভূরাজনৈতিক ও সামরিক চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছে, বিশেষ করে যখন ইসরায়েলের সঙ্গে উত্তেজনা চলমান।
বিশ্লেষকদের বিশ্বাস, ইরান ও চীন কয়েক বছর ধরে একটা সূক্ষ্ণ পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে তেহরানের নিষিদ্ধ তেল আমদানি-রপ্তানির জন্য।
এই বাণিজ্য কৌশলের প্রধান উপকরণ হলো চাইনিজ চায়ের পাত্র অর্থাৎ ছোট স্বাধীন রিফাইনারিজ। এই ছোট রিফাইনারিগুলোতে চীনের জন্য কম ঝুঁকি থাকে, কারণ রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত কোম্পানিগুলো আন্তর্জাতিকভাবে পরিচালিত হয়ে থাকে এবং এতে ইউএস ফিন্যান্সিয়াল সিস্টেমের প্রবেশাধিকার থাকে।
ছোট প্রাইভেট রিফাইনারিগুলো দেশের বাইরে চালিত হয় না, ডলারেও লেনদেন করে না এবং বিদেশি ফান্ডিংয়ের দরকার পড়ে না।
তেলের ট্যাংকারগুলো বিশ্বজুড়ে সমুদ্রে ট্র্যাক করা হয়, বিভিন্ন সফটওয়্যার তাদের অবস্থান, গতি ও রুট পর্যবেক্ষণ করে।
এই ট্র্যাকিং এড়ানোর জন্য ইরান ও চীন একটা অস্পষ্ট মালিকানা ধরনের ট্যাংকার্স নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে, যেটা সঠিক অবস্থান দেখায় না। তারা খুব সহজেই পশ্চিমা ট্যাংকার্স, নানা শিপিং সার্ভিস সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে যেতে পারে। ফলে তাদের পশ্চিমা নীতি, নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়তে হয় না।
মন্তব্য করুন