ইউক্রেনের ৯৮ বছর বয়সী বৃদ্ধা লিদিয়া লোমিকোভস্কা। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিভীষিকা দেখেছেন। এরপর বিশ্ব শান্ত হলে বুকভরা আশা নিয়ে পার করেছেন জীবনের শ্রেষ্ঠ কিছু সময়। কিন্তু কে জানত, জীবনের শেষ মুহূর্তে এসে তাকে আবারও যুদ্ধের মুখোমুখি হতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যে একা প্রায় ১০ কিলোমিটার হেঁটে লিদিয়া আলোচনায় এসেছেন। রাশিয়ার অধিকৃত অঞ্চল থেকে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে তিনি এ অসাধ্য সাধন করেন।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউক্রেনের পুলিশ তাকে খুঁজে পান। এরপর এ নারীর করুণ কাহিনী বিশ্বকে জানাতে একটি ভিডিও তৈরি করে তারা।
সেখানে দেখা যায়, লিদিয়া আশ্রয়কেন্দ্রের একটি শয্যায় বসে আছেন। তার মাথায় একটি স্কার্ফ বাঁধা। গায়ে অপেক্ষাকৃত বড় মাপের একটি কোট। হাতে একটি কাঠের লাঠি।
ইউক্রেনের পুলিশ জানায়, এ নারী পূর্ব ইউক্রেনের দোনেৎস্ক অঞ্চলের ওসেরেন এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। সেখানে হামলা করে রাশিয়া। দিন-রাত বোমা ফেলা হয়। শহরটি ধ্বংসস্তূপ এবং ধুলায় পরিণত হয়।
এ অবস্থায় স্বজনদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন তিনি। রাশিয়ার হামলার মাত্রা আরও বাড়তে থাকে। পুরোপুরি দখল হয়ে যায় তার গ্রামটি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অভিজ্ঞতায় তিনি বুঝতে পারেন, তাকে এলাকা ত্যাগ করতে হবে।
সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর আর অপেক্ষার সময় ছিল না। তিনি বলেন, আমি একটি লাঠি ও কাঠের টুকরো নিয়ে হাঁটা শুরু করি। আমার পা আমাকে বহন করতে চাইছিল না। কিন্তু আমাকে যেতেই হতো।
তিনি আরও বলেন, এভাবে হাঁটতে হাঁটতে কখনো আমি ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে গেছি। ঘাসের ওপর শুয়েছিলাম। এরপর আবার হেঁটেছি।
সে সময়ের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, আমার মাথার ওপর রাশিয়ার যুদ্ধবিমানগুলো উড়ছিল। আর্টিলারি থেকে গোলা ছোড়া হচ্ছিল। দুপক্ষের গোলাগুলির মধ্যেও হাঁটা থামাইনি।
একপর্যায়ে তিনি অব্যাহত যুদ্ধের মধ্যে ইউক্রেন–নিয়ন্ত্রিত এলাকায় পৌঁছেছেন। সেখানে ইউক্রেনের পুলিশের আশ্রয় পেয়েছেন।
ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি ইউক্রেনের সেনাবাহিনী ওই নারীকে দেখতে পায়। তারপর তাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পুলিশ তাকে একটি আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যায়। তবে এ যাত্রার সঠিক দিনক্ষণ জানায়নি তারা।
এদিকে ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ লিদিয়ার নাতনি স্বিতলানাকে খুঁজে পেয়েছে। তার সঙ্গে ভিডিও কলে যোগাযোগ করে বিবিসি। নাতনী জানান, দীর্ঘদিন ধরে দাদিকে খুঁজছিলেন তারা। যুদ্ধের মধ্যে দাদিকে ফিরে পেয়ে ভীষণ খুশি হয়েছেন। দাদিকে আর হারাতে চান না।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রুশ বাহিনী। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই অভিযানের নির্দেশ দিয়েছিলেন। গত দুই বছর ধরে চলমান এই অভিযানে এরই মধ্যে নিহত হয়েছেন হাজার হাজার রুশ এবং ইউক্রেনীয় সেনা।
মন্তব্য করুন