কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমেই উত্তেজনা বাড়ছে। এর জেরে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে ভারত। দেশটির এ পদক্ষেপকে ‘যুদ্ধের উসকানি’ বলে উল্লেখ করেছে। এমন পরিস্থিতিতে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথের সঙ্গে ফোনালাপ করেছেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং।
বৃহস্পতিবার (০১ মে) ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনার মধ্যেপ্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। এর একদিন আগেই ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসেন।
এই দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ের মন্ত্রীদের টেলিফোন সংলাপ এমন এক সময়ে হয়েছে যখন পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলওসি) গোলাগুলি চলছে। কুপওয়ারা, উরি ও অখনুর সেক্টরে এই অপ্ররোচিত হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী।
সূত্র জানায়, রাজনাথ সিং ও পিট হেগসেথের মধ্যকার আলোচনায় আঞ্চলিক নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা এবং চলমান উত্তেজনার শান্তিপূর্ণ সমাধানের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা হয়। দুই মন্ত্রীই স্থিতিশীলতা বজায় রাখার গুরুত্বের ওপর জোর দেন।
এদিকে পাকিস্তানি সম্প্রচারমাধ্যম জিও টিভি জানিয়েছে, কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর ভারতের সঙ্গে চলমান সীমান্ত উত্তেজনার মধ্যেই বড় পরিসরে সামরিক মহড়া শুরু করেছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সামরিক এই মহড়ায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা ও সৈনিকরা তাদের পেশাদার সামরিক দক্ষতা প্রদর্শন করেন। এই মহড়ার মূল লক্ষ্য হলো— শত্রুর যে কোনো ধরনের আগ্রাসনের মুখে কঠোর ও কার্যকর জবাব নিশ্চিত করা।
এই সামরিক মহড়া এমন একসময় শুরু হলো, যখন লাইন অব কন্ট্রোল (এলওসি) বরাবর কিয়ানি ও মন্ডল সেক্টরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ‘অকারণে’ গুলি চালানোর জবাবে পাকিস্তানি বাহিনী একটি ভারতীয় চৌকি ধ্বংস করে। ইসলামাবাদ দাবি করেছে, তাদের পাল্টা হামলায় ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের চক্রপুত্রাসহ একাধিক বাংকার ধ্বংস হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে এক সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত হয়। ভারত হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করলেও এ বিষয়ে তারা কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করেনি।
এই হামলার ঘটনার জেরে ভারত কূটনৈতিক ও কৌশলগত পদক্ষেপ নেয়— সিন্ধু নদীর পানি চুক্তি স্থগিত, পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিল এবং ওয়াঘা-আটারি সীমান্ত বন্ধ করা হয়।
পাকিস্তান পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ভারতের কূটনৈতিক ও সামরিক উপদেষ্টাদের বহিষ্কার করে, ভারতীয় নাগরিকদের (শিখ তীর্থযাত্রী ছাড়া) ভিসা বাতিল করে এবং সীমান্তের নিজ অংশ বন্ধ করে দেয়।
ইসলামাবাদ স্পষ্টভাবে জানায়, তারা এই হামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় এবং তারা একটি বিশ্বাসযোগ্য ও স্বচ্ছ আন্তর্জাতিক তদন্তে অংশ নিতে আগ্রহী। এদিকে নিরাপত্তা সূত্রগুলো বলছে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী যেকোনো পরিস্থিতিতে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সদা প্রস্তুত এবং আগ্রাসনের জবাবে শক্ত প্রতিক্রিয়া জানাতে সক্ষম।
মন্তব্য করুন