ভারত-পাকিস্তান চলমান উত্তেজনার মধ্যেই এবার আরও এক ভয়ানক দুঃসংবাদের সম্মুখীন নয়াদিল্লি। তুরস্কের একটি যুদ্ধজাহাজ পাকিস্তানের করাচি বন্দরে ভিড়েছে, যা ভারতের জন্য ব্যাপক কূটনৈতিক ও সামরিক উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। পাকিস্তান নৌবাহিনী রোববার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তুর্কি নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ ‘টিসিজি বুয়ুকাদা’ করাচি বন্দরে নোঙর করেছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া বলছে, করাচি বন্দরে তুরস্কের যুদ্ধজাহাজ ভেড়ার ঘটনাকে পাকিস্তান দু-দেশের মধ্যে সমুদ্র নিরাপত্তা ও কৌশলগত সম্পর্ক জোরদারের অংশ বললেও ভারত এতে সন্তুষ্ট নয়। বিশেষ করে বর্তমান প্রেক্ষাপটে তুরস্কের এমন পদক্ষেপে ভারত উদ্বিগ্ন।
খবরে বলা হয়, তুরস্ক ও পাকিস্তানের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা অনেকদিনের পুরোনো হলেও, এই জাহাজের আগমন এমন এক সময়ে ঘটলো যখন পহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক চরম উত্তেজনার পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই প্রেক্ষাপটে তুরস্কের যুদ্ধজাহাজের উপস্থিতিকে ভারত গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
পাকিস্তান নৌবাহিনীর ডিরেক্টরেট জেনারেল পাবলিক রিলেশনস (DGPR) জানিয়েছে, করাচি বন্দরে পৌঁছানোর পর তুর্কি যুদ্ধজাহাজটিকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়। কয়েকদিন করাচি বন্দরে অবস্থানকালে তুর্কি নাবিকরা পাকিস্তান নৌবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে যৌথ কার্যক্রম ও অনুশীলনে অংশ নেবেন। এই সহযোগিতা পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সামুদ্রিক সম্পর্ক আরও জোরদার করবে বলে আশা প্রকাশ করেছে দুপক্ষ।
গত কয়েক বছরে তুরস্ক ও পাকিস্তানের মধ্যে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক উল্লেখযোগ্যভাবে গভীর হয়েছে। তুর্কি প্রতিরক্ষা কোম্পানিগুলো পাকিস্তানের সাবমেরিন আপগ্রেড প্রকল্পে সহায়তা করছে। পাশাপাশি ড্রোনসহ নানা ধরনের সামরিক সরঞ্জাম পাকিস্তানে সরবরাহ করছে তুরস্ক।
এছাড়া দুই দেশের মধ্যে নিয়মিত যৌথ সামরিক মহড়া অনুষ্ঠিত হয়। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়েছে Atatürk-XIII নামের একটি যৌথ মহড়া, যেখানে উভয় দেশের বিশেষ বাহিনী অংশ নেয়। তবে সম্প্রতি করাচিতে তুরস্তের সামরিক বিমান অবতরণের পর দুঃশ্চিন্তায় পড়েছে নয়াদিল্লি।
বিভিন্ন প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, তুরস্ক পাকিস্তানে অস্ত্র সরবরাহ করছে। যদিও তুরস্ক এই দাবি অস্বীকার করে বলেছে, তাদের সামরিক বিমানের পাকিস্তানে অবতরণ ছিল কেবল জ্বালানি গ্রহণের জন্য, অস্ত্র সরবরাহের অভিযোগ ভিত্তিহীন।
ভারতের দিক থেকে বিষয়টি বেশ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে এমন এক সময়ে যখন পহেলগামের সন্ত্রাসী হামলায় পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ভারত কড়া অবস্থান নিয়েছে। ইতোমধ্যে ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কূটনৈতিক ও কৌশলগত পদক্ষেপ নিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে করাচি বন্দরে তুর্কি যুদ্ধজাহাজের উপস্থিতি আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দক্ষিণ এশিয়ায় ভূরাজনৈতিক টানাপড়েনে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে তুরস্কের ভূমিকা এখন থেকে আরও বেশি নজরে থাকবে। বিশেষ করে পাকিস্তানের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতার পটভূমিতে এই ধরনের পদক্ষেপ ভারতীয় প্রতিরক্ষা ও কূটনৈতিক মহলে চিন্তার কারণ হয়ে উঠতে পারে।
মন্তব্য করুন