পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ ভারতের অন্যতম সাহসী মুখ ছিলেন কর্নেল সোফিয়া কুরেশি। কিন্তু সেই বীর সেনাকর্মকর্তাকে ঘিরেই বিতর্কে জড়ালেন মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রী ও বিজেপি নেতা বিজয় শাহ।
কর্নেল সোফিয়ার ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ করে তাকে ‘জঙ্গিদের বোন’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। এরপর থেকেই দেশজুড়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক ও নিন্দার ঝড়।
বুধবার (১৪ মে) সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যায়, ইন্দোরে গত সোমবার (১২ মে) এক জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে এই বিতর্কিত মন্তব্য করেন বিজয় শাহ।
কংগ্রেস তার বক্তৃতার একটি ভিডিও প্রকাশ করে। ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, সিঁদুর মুছে আমাদের বোন-মেয়েদের অসম্মান করেছে জঙ্গিরা। আমরা পালটা জবাব দেওয়ার জন্য তাদের বোনকেই পাঠিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, পেহেলগামে জঙ্গিরা ধর্ম জানতে জামাকাপড় খুলে পরীক্ষা করেছে। তারপর গুলি করে হত্যা করেছে। প্রধানমন্ত্রী মোদি তো নিজে যুদ্ধ করতে পারবেন না, তাই জঙ্গিদের সম্প্রদায়েরই বোনকে পাঠিয়েছেন তাদের শিক্ষা দিতে।
বিজেপি নেতার এই বক্তব্য ঘিরে কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেস তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তৃণমূল এক বিবৃতিতে বলেছে, এটাই বিজেপির আসল রূপ- ধর্মান্ধতা ও বিদ্বেষ। তারা এতটাই অন্ধ হয়ে গেছে যে একজন বীর সেনা কর্মকর্তাকেও তার ধর্মের কারণে অপমান করছে। অবিলম্বে বিজয় শাহকে মন্ত্রিত্ব থেকে বরখাস্ত করা উচিত। বিজেপির যদি ন্যূনতম লজ্জা থাকে, তবে কর্নেল সোফিয়া এবং সশস্ত্র বাহিনীর কাছে ক্ষমা চাইবে।
কংগ্রেসও একই সুরে বলেছে, সোফিয়া কুরেশি কেবল ভারতের গর্বই নন, তিনি সশস্ত্র বাহিনীর সম্মান। তাকে নিয়ে এমন কুরুচিকর মন্তব্য দেশ ও সেনাবাহিনীর অপমান। বিজয় শাহ নিজেকে মোদির ঘনিষ্ঠ দাবি করেন, এখন বিজেপি কি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে? নাকি তাকে পুরস্কৃত করা হবে?
যদিও বিতর্ক ঘনিয়ে ওঠার পর মন্ত্রী বিজয় শাহ দাবি করেন, তার বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে। তবে ভিডিওতে কারও নাম না নিলেও কর্নেল সোফিয়াকেই ইঙ্গিত করেছেন বলেই দাবি করেছে কংগ্রেস।
প্রসঙ্গত, কাশ্মীরের পেহেলগামে কথিত সন্ত্রাসী হামলার জবাবে পাকিস্তানে অভিযান চালায় ভারত, যার নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন সিঁদুর’। এতে পাকিস্তানে অন্তত ৩৫ জন নিহত হয়। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান চালায় ‘বুনিয়ানুম মারসুস’ অভিযান। পরে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ১০ মে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয় দুই দেশ। যুদ্ধের ৮৭ ঘণ্টার সেই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে উভয় পক্ষই নিজেদের বিজয়ী বলে দাবি করে আসছে।
এই প্রেক্ষাপটে কর্নেল সোফিয়াকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা রাজনৈতিক বিতর্ক শুধু ধর্মীয় বিদ্বেষকেই উসকে দিচ্ছে না, বরং প্রশ্ন তুলছে—যুদ্ধের নেপথ্য বীরদের সম্মান নিয়েও।
মন্তব্য করুন