স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবের পক্ষে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ভোট দিয়েছে ভারত। এই প্রস্তাবকে ‘নিউইয়র্ক ঘোষণা’ বলা হচ্ছে। ফ্রান্স উত্থাপিত এ প্রস্তাবটি বিপুল সমর্থনে গৃহীত হয়—১৪২টি দেশ পক্ষে, ১০টি দেশ বিপক্ষে এবং ১২টি দেশ বিরত থাকে।
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে এ ভোটাভুটি হয়।
ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ভারতসহ সব উপসাগরীয় আরব দেশগুলো প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট দেয়। বিপক্ষে ভোট দিয়েছে ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র, আর্জেন্টিনা, হাঙ্গেরি, মাইক্রোনেশিয়া, নারু, পলাউ, পাপুয়া নিউগিনি, প্যারাগুয়ে এবং টোঙ্গা। প্রস্তাবটির শিরোনাম ছিল—‘প্যালেস্টাইন প্রশ্নের শান্তিপূর্ণ সমাধান এবং দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের বাস্তবায়ন বিষয়ে নিউইয়র্ক ডিক্লারেশনের অনুমোদন’।
এই ঘোষণাটি গত জুলাইয়ে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ফ্রান্স ও সৌদি আরবের সহ-সভাপতিত্বে আয়োজিত একটি উচ্চপর্যায়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বিতরণ করা হয়েছিল। সম্মেলনের লক্ষ্য ছিল—দীর্ঘদিন ধরে স্থবির হয়ে থাকা আলোচনাকে পুনরুজ্জীবিত করা এবং ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের সমাধান খোঁজা।
সাত পৃষ্ঠার ওই ঘোষণায় বিশ্বনেতারা একমত হন যে, ‘গাজায় যুদ্ধের অবসান ঘটাতে, ন্যায়সংগত, শান্তিপূর্ণ ও টেকসইভাবে ইসরায়েল-প্যালেস্টাইন সংঘাতের সমাধান করতে, দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে এবং ফিলিস্তিনি, ইসরায়েলি ও সমগ্র অঞ্চলের মানুষের জন্য একটি উত্তম ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে সমষ্টিগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
এতে আরও বলা হয়, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে গৃহীত ঘোষণাপত্রে একদিকে যেমন ইসরায়েলে ৭ অক্টোবরের হামাসের হামলাকে নিন্দা জানানো হয়েছে, তেমনি গাজায় ইসরায়েলের পাল্টা অভিযানেরও কঠোর সমালোচনা করা হয়েছে। হামাসের ওই হামলায় প্রায় ১২০০ জন নিহত হন এবং ২৫০ জনেরও বেশি মানুষকে জিম্মি করা হয়েছিল। অপরদিকে, ইসরায়েলি অভিযানে গাজায় ব্যাপক বেসামরিক হতাহত, অবকাঠামো ধ্বংস এবং অবরোধ ও অনাহারের মাধ্যমে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
ঘোষণায় ইসরায়েলি নেতৃত্বকে দ্বিরাষ্ট্র সমাধানে প্রকাশ্য অঙ্গীকার করার আহ্বান জানানো হয়েছে, যাতে একটি সার্বভৌম ও টেকসই ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। একইসঙ্গে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও উসকানি বন্ধ করা, বসতি স্থাপন ও ভূমি দখল কার্যক্রম বন্ধ করা, সংযুক্তিকরণ পরিকল্পনা থেকে সরে আসা এবং বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতার অবসান ঘটানোর দাবি জানানো হয়েছে।
এতে ফিলিস্তিনি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের প্রতি পুনরায় সমর্থন জানানো হয়। সতর্ক করে বলা হয়, দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের পথে কার্যকর পদক্ষেপ ও শক্তিশালী আন্তর্জাতিক নিশ্চয়তা না থাকলে সংঘাত আরও তীব্র হবে এবং আঞ্চলিক শান্তি অধরাই থেকে যাবে।
ঘোষণায় আরও জোর দিয়ে বলা হয়েছে, ‘গাজার যুদ্ধ এখনই শেষ হতে হবে।’ গাজাকে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে একে পশ্চিম তীরের সঙ্গে একীভূত করার আহ্বান জানানো হয়। একইসঙ্গে দখলদারিত্ব, অবরোধ, ভৌগোলিক সংকোচন কিংবা জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি গ্রহণযোগ্য নয় বলে স্পষ্ট করা হয়।
গত সপ্তাহে ফিনল্যান্ড এই প্রস্তাবে যোগ দেয় এবং একে বছরের সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা বলে উল্লেখ করে। তবে দেশটি এখনো ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। অন্যদিকে ফ্রান্স ও বেলজিয়াম ঘোষণা দিয়েছে, তারা ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে।
এদিকে চলতি মাসের ২২ তারিখে রিয়াদ ও প্যারিসের সভাপতিত্বে সাধারণ পরিষদের অধিবেশন বসতে যাচ্ছে। সেখানে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো ফিলিস্তিনের স্বীকৃতি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বর্তমানে সাধারণ পরিষদের ১৯৩টি দেশের মধ্যে ১৪৯টি দেশই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয়।
মন্তব্য করুন