কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:০৪ পিএম
আপডেট : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৪:১৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

৩০ বছর ধরে ছেলের অপেক্ষায় ফিলিস্তিনি মা

ধ্বংস হয়ে যাওয়া বাড়ির পাশে তাঁবু খাটিয়ে আশ্রয় নিয়েছে গাজার একটি পরিবার। ছবি : সংগৃহীত
ধ্বংস হয়ে যাওয়া বাড়ির পাশে তাঁবু খাটিয়ে আশ্রয় নিয়েছে গাজার একটি পরিবার। ছবি : সংগৃহীত

তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে ছেলের অপেক্ষা করছেন ফিলিস্তিনি এক মা। ছেলে ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি। তাকে যখন গ্রেপ্তার করা হয় মা নাজাত তখন শক্ত স্বামর্থ একজন গৃহিণী। ছেলের অপেক্ষা করতে করতে বৃদ্ধ হয়েছেন। ঠিকমতো হাঁটতেও পারছেন না, দৃষ্টিশক্তিও ক্ষীণ হয়েছে। তবুও ছেলের অপেক্ষা ফুরায়নি।

১৯৯২ সালে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এক কর্মকর্তাকে মারার কারণে কারাবন্দি হন দিয়া এল আঘা। ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ইসরায়েলি কারাবাসে থাকা ১৮ জন ফিলিস্তিনি বন্দির একজন তিনি।

মা নাজাত তার ফেরার আশা অনেকটা ছেড়েই দিয়েছিলেন। তবে শনিবার ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ বিরতির শর্ত অনুযায়ী, ইসরায়েলি বন্দিদের বিনিময়ে যেসব ফিলিস্তিনি বন্দিকে ফিরিয়ে দেবার কথা ছিল, সেই তালিকায় ছিল দিয়ার নামও৷ ছেলের নাম এই তালিকায় দেখে মায়ের খুশি আর বাঁধ মানছে না।

ইসরায়েলি বোমা হামলায় ঘরবাড়ি সব হারিয়েছেন। থাকছেন খোলা আকাশের নিচে। তবুও বন্দি ছেলে ফিরে আসবে, সেই আনন্দে গাজার বিধ্বস্ত রাস্তাঘাট হাতড়ে বেড়াচ্ছেন নাজাত৷ যদি কিছু পাওয়া যায়, যা দিয়ে ছেলেকে স্বাগত জানাতে পারেন তিনি।

নাজাত বলেন, ‘আমি গাজার ওমার আল মুখতার স্ট্রিটে হাঁটতে হাঁটতে ভাবছিলাম, কীই বা দিতে পারি আমার ছেলেকে? জামা-কাপড়ে ভরে ফেলি ব্যাগ, টুথপিকও ভরেছিলাম ব্যাগে।’

১২ ঘণ্টা ধরে গাজার ইউরোপিয়ান হাসপাতালে বন্দি বিনিময়ের স্থানে অপেক্ষা করেন নাজাত। কিন্তু ৬২০ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে ফেরত পাঠালেও নাজাতের ছেলে দিয়াকে পাঠায়নি ইসরায়েল। দেশটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, বাকি বন্দিদের মুক্ত করার আগে অবশিষ্ট ইসরায়েলি বন্দিদেরও মুক্ত করা হবে এমন নিশ্চয়তা চায় তারা।

এই খবর পাওয়ার মুহূর্ত থেকে নিজের আবেগ সামলাতে পারছেন না দিয়ার মা নাজাত। তিনি বলেন ‘আমি সব কিছু তার জন্য প্রস্তুত করেছি, তবুও সে মুক্তি পেলো না৷ আমাকে তারা বাধ্য করে বাসায় ফিরে যেতে, কিন্তু আমি চাইছিলাম সেখানেই বসে থাকি, যত দিন না দিয়া মুক্তি পায়।’

নাজাত হিসেব করে দেখেছেন, তার ছেলের বয়স সদ্য ৫০ পেরিয়েছে। এত দীর্ঘ সময় বন্দি থাকতে থাকতেই দিয়া তার বাবা ও বোনকে হারিয়েছে। কারাগারে তাকে ডাকা হয় ‘বন্দিদের অধ্যক্ষ’ নামে৷ তবে এই কারাগারের অধ্যক্ষের একজন আপন মানুষ এখনো পৃথিবীতে বেঁচে আছেন। তিনি হলেন তার মা।

যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় আশা ছাড়ছেন না নাজাত। ইসরায়েলি হামলায় ভেঙে পড়া তার বাসার গায়ে এখনো ঝুলছে একটি সাইনবোর্ড, যার গায়ে লেখা ‘এটা বন্দি দিয়া জাকারিয়া এল আঘার বাসস্থান।’

হামাস সাম্প্রতিক সময়ে যেভাবে ইসরায়েলি বন্দিদের ফেরত পাঠিয়েছে, তাকে জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক আইনবিরোধী বলে আখ্যা দিয়েছে৷ ইসরায়েলের মতে, এভাবে ফেরত পাঠানো বন্দিদের জন্য রীতিমতো অসম্মানজনক ছিল৷ তাই তারা শর্ত দিয়েছে এভাবে বন্দীদের স্টেজে তুললে যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাতিল করবে ইসরায়েল।

তিন ধাপের যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী, আরো ৬৩ জন জিম্মি বন্দি থাকার কথা গাজায়, যাদের মুক্তি দেয়ার কথা আছে এই চুক্তিতে৷ তাদের মধ্যে অন্তত ৩০ জন বন্দির জীবিত থাকার কথা জানা গেছে৷

সূত্র : ডয়েচে ভেলে

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সিএলএম বিভাগে চাকরি দিচ্ছে বিকাশ

ঢাকায় তাপমাত্রা নেমে ১৭ ডিগ্রি, বাড়ছে শীতের অনুভূতি

৪৫তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ, উত্তীর্ণ ১৮০৭

আজ থেকে লাগাতার কর্মবিরতিতে প্রাথমিকের সাড়ে ৩ লাখ শিক্ষক

সিনিয়র মেডিকেল অফিসার পদে নিয়োগ দিচ্ছে সেভ দ্য চিলড্রেন

প্রেমিক যুগলকে জিম্মি করে চাঁদা আদায়, অতঃপর...

আরএফএলে বড় নিয়োগ, দ্রুত আবেদন করুন

দাঁড়িপাল্লার কাছে নারী সমাজ নিরাপদ নয় : খায়রুল কবির খোকন

রাজধানীতে আজ কোথায় কী

বৃহস্পতিবার রাজধানীর যেসব এলাকার মার্কেট বন্ধ

১০

২৭ নভেম্বর : আজকের নামাজের সময়সূচি

১১

সড়কের ‘জানাজা’ পড়লেন স্থানীয়রা

১২

হংকংয়ে আবাসিক ভবনে আগুন, নিহত বেড়ে ৪৪

১৩

হোয়াইট হাউসের কাছে ২ জনকে গুলি

১৪

শেখ হাসিনা-জয়-পুতুলের দুর্নীতি মামলার রায় আজ

১৫

বিয়ে করতে গিয়ে ফেঁসে গেলেন এনামুল

১৬

শেখ ফয়েজ গ্রেপ্তার

১৭

দিনভর উত্তাল চট্টগ্রাম

১৮

যুবককে কুপিয়ে হত্যা

১৯

বিয়েতে মাইক বাজানোর শাস্তি বেত্রাঘাত!

২০
X