গাজায় যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির এ হামলায় চার শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। দেশটি ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামীদের সংগঠন হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে। তবে এবার দেশটির বিরুদ্ধে নিজের দেশের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম হারেৎজ ভয়ংকর অভিযোগ তুলেছে।
বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) আনাদোলু এজেন্সির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজ বুধবার প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে, গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়নে হামাস নয়, ইসরায়েল বাধা দিয়েছে। পত্রিকাটির সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, ইসরায়েলই চুক্তি বাস্তবায়ন এবং বন্দিদের মুক্তিতে বাধা দিচ্ছে, হামাস নয়।
গত মঙ্গলবার থেকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজা উপত্যকায় বিমান হামলা চালিয়ে ৪০০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং শত শত মানুষকে আহত করেছে। এই হামলার মাধ্যমে জানুয়ারি মাসে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি এবং বন্দি বিনিময় চুক্তি ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
ইসরায়েলি সরকারের দাবি, হামাস বারবার যুদ্ধবিরতি বর্ধিত করা এবং ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্ত করার সকল প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় এই হামলা পুনরায় শুরু করা হয়েছে। তবে হারেৎজ এ দাবিকে মিথ্যা বলে আখ্যায়িত করেছে। তারা বলছে, এটি স্পষ্ট করে বলতে হবে যে, এটি একটি মিথ্যা। চুক্তি ভঙ্গ করেছে ইসরায়েল, হামাস নয়।
হারেৎজের মতে, চুক্তির ১৬তম দিনে দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা শুরু হওয়ার কথা ছিল, যার মাধ্যমে অবশিষ্ট সকল বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু ইসরায়েল তা করতে অস্বীকৃতি জানায়। এছাড়াও যুদ্ধবিরতির ৪২ থেকে ৫০তম দিনের মধ্যে গাজা ও মিসরের সীমান্তে ফিলাডেলফি করিডোর থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে ইসরায়েল।
হারেৎজ আরও উল্লেখ করেছে যে, ইসরায়েল গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে এবং সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ করে দিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত, যেমন বিদ্যুৎ মন্ত্রীর গাজায় সীমিত পরিমাণ বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত, চুক্তিতে ইসরায়েলের প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করে। চুক্তি অনুযায়ী, দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা চলাকালীন মানবিক সহায়তা প্রবেশ অব্যাহত রাখার কথা ছিল।
চুক্তির প্রথম ধাপ মার্চের শুরুতে শেষ হলেও নেতানিয়াহু দ্বিতীয় ধাপের আলোচনায় যেতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি চুক্তির প্রথম ধাপ বর্ধিত করতে চান। অন্যদিকে, হামাস এই শর্তে আলোচনা চালিয়ে যেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে এবং ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতির শর্ত মেনে দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা শুরু করার দাবি জানিয়েছে। এরমধ্যে গাজা থেকে ইসরায়েলের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার এবং যুদ্ধ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা অন্তর্ভুক্ত।
হারেৎজ নেতানিয়াহুর এই দাবিকেও সমালোচনা করেছে যে, হামাস মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফের যুদ্ধবিরতি বর্ধিত করার সকল প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। পত্রিকাটির মতে, হামাসের কাছে উইটকফের প্রস্তাবগুলো আসে ইসরায়েলের চুক্তির অংশ মেনে না চলার কারণে। তাই হামাসের উইটকফের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানকে যুদ্ধ পুনরায় শুরু করার কারণ হিসেবে চিত্রিত করা একটি অসৎ ম্যানিপুলেশন ছাড়া কিছুই নয়।
এছাড়াও নেতানিয়াহুর এই দাবিকেও ‘আরেকটি মিথ্যা’ বলে আখ্যায়িত করেছে হারেৎজ জানিয়েছে, গাজায় পুনরায় হামলা চালানো হয়েছে বন্দিদের, জীবিত ও মৃত, মুক্ত করার জন্য। পত্রিকাটির মতে, এটি আরেকটি মিথ্যা। সামরিক চাপ বন্দিদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ, এবং অবশ্যই ইসরায়েলি সৈন্য ও গাজাবাসীর জীবনও বিপন্ন করে, পাশাপাশি গাজার অবশিষ্ট অংশও ধ্বংস করে।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের বর্বর সামরিক অভিযানে প্রায় ৫০ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যার বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া এ হামলায় এক লাখ ১২ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছে। গত নভেম্বরে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।
এছাড়াও গাজায় যুদ্ধের জন্য ইসরায়েল আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতের (আইসিজে) সামনে গণহত্যার মামলার মুখোমুখি হয়েছে।
মন্তব্য করুন