ফিলিস্তিনের গাজায় হামাসের হাতে জিম্মি ছিলেন মিয়া শেম নামের এক ইসরায়েলি তরুণী। জিম্মিদশায় তিনি ধর্ষণের শিকার হওয়ার আতঙ্কে তটস্থ থাকতেন। কিন্তু তার ভাগ্য বেশ ভালো। গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ২০২৩ সালের নভেম্বরে প্রথম যুদ্ধবিরতির সময় প্রায় ১০০ জিম্মি মুক্তি দিয়েছিল হামাস। সে সময় মাত্র ৫৫ দিনের মাথায় মিয়াও মুক্তি পান। মুক্তির পর ধর্ষণভীতি থেকে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন এ তরুণী।
কিন্তু নিজ বাড়িতেই ওই তরুণীর জীবনে নেমে আসে বিভীষিকা। পরিচিতজনের কাছে ধর্ষণের শিকার হন মিয়া। এ ধরনের ঘৃণ্য অপরাধের ভুক্তভোগী হয়ে তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। কারণ, নিজ বাড়িকে তিনি পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ স্থান ভাবতেন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস। সে সময় অন্যদের সঙ্গে তাকেও অপহরণ করা হয়। ২২ বছরের মিয়া সেদিন ইসরায়েলে নোভা মিউজিক ফেস্টিভ্যালে উপস্থিত ছিলেন। নাচে-গানে আনন্দে মাতোয়ারা ছিলেন তিনি। হঠাৎ যেন সেখানে জাহান্নাম নেমে আসে। ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠনটির যোদ্ধারা ফেস্টিভ্যালে হামলে পড়ে। তাদের গুলিতে আহত হন মিয়া। হাতে গুলিবিদ্ধ মিয়াকে সেখান থেকে ধরে গাজায় নিয়ে আসে হামাস।
চ্যানেল ১২ কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মিয়া বলেন, যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়া সারা জীবনে সবসময়ই আমার সবচেয়ে বড় ভয় ছিল। বন্দিদশার আগে, বন্দিদশায় এবং বন্দিদশার পরে আমি ভয়ে থাকতাম। অবশেষে আমার বাড়িতে, আমার সবচেয়ে নিরাপদ জায়গায় এটা আমার সাথে ঘটল।
ইসরায়েলে বেশ কিছু দিন ধরে গাজার সাবেক জিম্মির ধর্ষণের শিকার হওয়া নিয়ে আলোচনা চলছিল। গত মার্চে পুলিশ সে দেশের সুপরিচিত এক ফিটনেস ট্রেইনারকে গ্রেপ্তার করে। পরে তিনি ছাড়াও পান। কিন্তু ধর্ষণের অভিযোগে তিনি এখনো অভিযুক্ত। মিয়া অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিতে লড়াই করছেন।
এমন আলোচনার মুখে প্রকাশ্যে আসেন মিয়া। তিনি বলেন, আমি সত্য বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি সেই ব্যক্তি নই যার লুকানোর দরকার আছে।
আরও অভিযোগ উঠেছে, অভিযুক্ত কৌশলে মিয়াকে ড্রাগ সেবন করিয়ে ধর্ষণ করেন। পুলিশ এ নিয়েও তদন্ত করছে। ধারণা করা হচ্ছে, প্রশিক্ষক ডেট-রেপ ড্রাগ ব্যবহার করে মিয়াকে ফাঁদে ফেলেন।
মিয়া শেম জানান, তার প্রশিক্ষক হলিউডের একজন প্রযোজকের সঙ্গে দেখা করিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। জানান, তার গাজার জিম্মিদশার অভিজ্ঞতা নিয়ে চলচ্চিত্র হতে পারে। প্রশিক্ষকের জোরাজুরিতে রাজি হন মিয়া।
প্রথমে একটি হোটেলের লবিতে প্রযোজকের সঙ্গে দেখা করিয়ে দেওয়ার কথা বলেন প্রশিক্ষক। কিন্তু পরে মিয়ার নিজ বাড়িতে ভেন্যু ঠিক করা হয়। ঘটনার দিন মিয়ার সঙ্গে এক বন্ধু ছিলেন। কিন্তু গোপনে কথা বলার অজুহাতে বন্ধুকে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে বলা হয়। বন্ধু বেরিয়ে যাওয়ার পর মিয়ার আর কিছু মনে নেই।
মিয়া বলেন, আমার সব স্মৃতি ঝাপসা। তবে আমার সঙ্গে যা হয়েছে তা আমার শরীর মনে রেখেছে। আমাকে উলঙ্গ করা হয়। তখন আমি ঝাপসা চোখে প্রশিক্ষককে দেখি। ওই সময় ঘরে আরও এক ব্যক্তির উপস্থিতি টের পাই।
মিয়া এতটাই অবচেতন হয়ে পড়েন যে তার স্বাভাবিক হতে বেশ কয়েক দিন সময় লাগে। স্বজনরা জানান, গাজার জিম্মিদশা থেকে ফেরার সময়ের চাইতে ধর্ষণের শিকার হয়ে তিনি বেশি ভেঙে পড়েছেন। সম্ভবত তাকে ড্রাগ সেবন করিয়ে ধর্ষণ করা হয়।
মন্তব্য করুন