ইরানের গোয়েন্দা মন্ত্রী এসমাইল খাতিব জানিয়েছেন, খুব শিগগিরই ইসরায়েলের গোপন ও স্পর্শকাতর নথিপত্র প্রকাশ করা হবে।
একইসঙ্গে তিনি এসব দলিলকে ‘অমূল্য সম্পদ’ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, নথিগুলো ইরানের আক্রমণাত্মক অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে। তবে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রমাণ হাজির করেননি।
রোববার (৮ জুন) ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসমাইল খাতিব এ কথা বলেন। খবর টাইমস অব ইসরায়েল।
সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, তেহরানের হাতে এসেছে হাজার হাজার গোপন নথি, এমন বলা হলেও এটি একটি ‘আন্ডারস্টেটমেন্ট’ মাত্র। তার দাবি, এই নথিগুলোর মধ্যে রয়েছে ইসরায়েলের পারমাণবিক স্থাপনা, প্রতিরক্ষা সক্ষমতা, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তেলআবিবের সম্পর্কসংক্রান্ত গোপন তথ্য।
ইরানি রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমগুলোও খবরে জানিয়েছে, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এক বিশাল তথ্যভাণ্ডারের দখল নিয়েছে। যদিও এসব দাবির পক্ষে কোনো তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি।
খাতিব বলেন, এই নথিপত্র হস্তান্তর একটি দীর্ঘমেয়াদি ও কঠোর নিরাপত্তা-নির্ভর প্রক্রিয়া ছিল। স্বাভাবিকভাবেই, স্থানান্তরের পদ্ধতি গোপন রাখা হবে, তবে নথিগুলো খুব শিগগিরই প্রকাশ করা হবে।
ইসরায়েল এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে এই তথাকথিত ‘তথ্য ফাঁস’ ২০২৩ সালে ইসরায়েলের একটি পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্রে সাইবার হামলার সঙ্গে সম্পর্কিত কি না, তা স্পষ্ট নয়।
এর আগে ২০১৮ সালে ইসরায়েলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দাবি করেছিলেন, মোসাদের এক অভিযানে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সংক্রান্ত একটি বিশাল আর্কাইভ উদ্ধার করা হয়েছে, যা থেকে ইরানের আগের চেয়ে বেশি পারমাণবিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকার প্রমাণ মিলেছিল।
এই ঘটনাটি এমন এক সময়ে সামনে এলো, যখন ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ মীমাংসার আলোচনায় অগ্রগতি থমকে আছে। ওয়াশিংটন ইরানকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম থেকে সরে আসার আহ্বান জানালেও, ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বুধবার এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ থেকে সরে আসা ইরানের স্বার্থের শতভাগ বিরুদ্ধে।
তিনি আরও বলেন, আমেরিকার উদ্ধত নেতারা বারবার বলছে, আমাদের পারমাণবিক কর্মসূচি থাকা উচিত নয়- কিন্তু তারা কে? আমাদের জন্য এটি নির্ধারণ করার।
অন্যদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামরিক হুমকির মধ্যেও কূটনৈতিক সমাধানকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ইসরায়েলের পরিকল্পিত হামলা ঠেকাতে তিনি হস্তক্ষেপ করেন বলেও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে তথ্য এসেছে।
পশ্চিমা দেশগুলো অভিযোগ করেছে, ইরান এমন মাত্রায় ইউরেনিয়াম পরিশোধন করছে, যা পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় মাত্রার খুব কাছাকাছি। যদিও তেহরান বারবার দাবি করেছে, তাদের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ ও বেসামরিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে।
জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা আইএইএ সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইরান গোপনে পারমাণবিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে এবং চলতি সপ্তাহেই আইএইএ-এর বোর্ড অব গভর্নরস ইরানকে তিরস্কার করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইরান এমন এক সময়ে ইসরায়েলের ‘গোপন নথিপত্র’ প্রকাশের ঘোষণা দিয়েছে, যখন মধ্যপ্রাচ্যে নিরাপত্তা উত্তেজনা চরমে। এই ঘোষণায় নতুন করে কূটনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হতে পারে। তবে এসব নথি সত্যিই কতটা গোপন এবং প্রমাণযোগ্য, তা এখনই স্পষ্ট নয়।
মন্তব্য করুন