লেবাননের বৈরুতে ইসরায়েলের ড্রোন হামলায় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাসের উপপ্রধান সালেহ আল-আরৌরি নিহত হয়েছেন। তার গুপ্তহত্যার ঘটনা ইসরায়েল ও হামাসের যুদ্ধ অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা পেরিয়ে মধ্যপ্রাচ্যর অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ার যে শঙ্কা এতদিন ছিল তা আরও বাড়িয়ে তুলেছে। বুধবার (৩ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
মঙ্গলবার লেবাননের বৈরুতের দক্ষিণে দাহিয়েহ এলাকায় ইসরায়েলের ড্রোন হামলায় আল-আরৌরি তিনি ছাড়াও এই হামলায় আরও পাঁচ হামাস সদস্য নিহত হয়েছেন। নিহত আল-আরৌরি হামাসের পলিট ব্যুরোর একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি সংগঠনটির সামরিক বিষয়ে গভীরভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। গত নভেম্বরে কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার সাময়িক যুদ্ধবিরতি ও বন্দিবিনিময় চুক্তির একজন প্রধান আলোচক ছিলেন তিনি। এর আগে ইসরায়েলের অধিকৃত পশ্চিম তীরে হামাসের কার্যক্রমের নেতৃত্ব দিয়েছেন ৫৭ বছর বয়সী আল-আরৌরি।
দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলি নাগরিকদের ওপর প্রাণঘাতী হামলার জন্য আল-আরৌরিকে দায়ী করে আসছে ইসরায়েল। তবে হামাসের এক কর্মকর্তা বলেছেন, গাজা যুদ্ধের ফলাফল ও হামাসের হাতে বন্দি ইসরায়েলিদের মুক্তি নিয়ে কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন তিনি।
হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়াহ ইসরায়েলি এই হামলার নিন্দা করেছেন। তিনি বলেন, ‘এটি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। লেবাননের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন। হামাসকে পরাজিত করা যাবে না।’
হামাসের পলিট ব্যুরোর সদস্য ইজ্জাত আল-শারক এই হামলাকে কাপুরুষোচিত গুপ্তহত্যা বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, আবারও প্রমাণিত হলো গাজা উপত্যকায় শত্রুরা তাদের আক্রমণাত্মক লক্ষ্য অর্জনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।
এ ছাড়া আল-আরৌরিকে হত্যার প্রতিবাদে ইসরায়েলের সঙ্গে বন্দিবিনিময় চুক্তি সম্পর্কিত আলোচনা স্থগিত করেছে হামাস। সৌদি আরবভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল আরাবিয়ার বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে জেরুজালেম পোস্ট। গত নভেম্বরে সাত দিনের যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিনিময়ে ১১০ ইসরায়েলি বন্দিকে হামাস মুক্তি দিলেও এখনো তাদের হাতে শতাধিক বন্দি আছেন।
এ ছাড়া আল-আরৌরিকে হত্যার সমুচিত জবাব দেওয়ার কথা জানিয়েছেন হামাসের মিত্র হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ। গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে লেবাননের দক্ষিণ সীমান্তজুড়ে ইসরায়েলের সাথে প্রায় প্রতিদিনই গুলি বিনিময় করছে হিজবুল্লাহ। আল-আরৌরির হত্যাকাণ্ডের পর পর মঙ্গলবার মার্জের আশপাশে ইসরায়েলি সেনাদের নিশানা করে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার কথা জানিয়েছে সংগঠনটি।
এখনো এই হামলার দায় স্বীকার করেনি ইসরায়েল। অবশ্য এই ধরনের হামলার ক্ষেত্রে এমন নীতিই অবলম্বন করে আসছে তেল আবিব। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর উপদেষ্টা মার্ক রেগেভ মার্কিন নিউজ চ্যানেল এমএসএনবিসিকে বলেছেন, এই হামলা থেকে পরিষ্কার যে এটা লেবাননের ওপর হামলা না। এটা হামাস নেতৃত্বের বিরুদ্ধে কৌশলগত হামলা।
ইসরায়েলের সামরিক মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বলেছেন, ইসরায়েলি বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। তারা যে কোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
হামাস ও হিজবুল্লাহর প্রধান সমর্থক ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি বলেছেন, আল-আরৌরির হত্যাকাণ্ড নিঃসন্দেহে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের ধমনিতে আরেকটি ঢেউ জাগিয়ে তুলবে। দখলদার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রেরণা জোগাবে। এই লড়াই শুধু ফিলিস্তিনেই নয়, মধ্যপ্রাচ্য ও বিশ্বের সব স্বাধীনতাকামীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে।
অন্যদিকে আল-আরৌরিকে হত্যার প্রতিবাদে অধিকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লা ও অন্যান্য শহরে ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে। শত শত ফিলিস্তিনি এই ধর্মঘট পালন করছেন। তারা ‘প্রতিশোধ’, ‘প্রতিশোধ’ বলে স্লোগান দিচ্ছেন।
এ ছাড়া গাজায় ইসরায়েলি হামলা বন্ধ না হলে লোহিত সাগরে জাহাজে হামলা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে ইরান-সমর্থিত ইয়েমানের হুতি বিদ্রোহী গোষ্ঠী। এমনকি হুতি সদস্যরা মঙ্গলবার দক্ষিণ লোহিত সাগরে দুটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ড।
মন্তব্য করুন