ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় গণহত্যা চালানোর অভিযোগে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দায়ের করা বহুল আলোচিত মামলার রায় দিয়েছেন জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে)। বিশ্ব আদালতের এই রায়কে দক্ষিণ আফ্রিকা, ফিলিস্তিন স্বাগত জানালেও ভালোভাবে নেয়নি ইসরায়েল।
শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) স্থানীয় সময় দুপুরে নেদারল্যান্ডের হেগ শহরে অবস্থিত আইসিজে দক্ষিণ আফ্রিকার দায়ের করা এ মামলার রায় দিয়েছেন। সাময়িক এই রায়ে গাজায় গণহত্যা ঠেকানোসহ ইসরায়েলকে ছয়টি নির্দেশনা বাস্তবায়নের আদেশ দিয়েছেন বিশ্ব আদালত।
আইসিজের রায় ঘোষণার পর পর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দেশ বা পক্ষ তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এই প্রতিবেদনে তাদের প্রতিক্রিয়াসমূহ তুলে ধরা হয়েছে—
দক্ষিণ আফ্রিকা
বিশ্ব আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এ গণহত্যা মামলাটি দায়ের করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। দ্রুত রায়ের জন্য দেশটি আদালতকে ধন্যবাদ জানিয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকা বলেছে, তারা আদালতের এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে। তাদের প্রত্যাশা, আদালতের আদেশের ব্যত্যয় হয় এমন কাজ ইসরায়েল করবে না।
দক্ষিণ আফ্রিকা আরও বলেছে, এতদিন ফিলিস্তিনি জনগণ যে ন্যায়বিচারের খোঁজ করছিল সে ক্ষেত্রে আদালতের এ রায় একটি বড় ধরনের মাইলফলক হয়ে থাকবে। এ ছাড়া গাজার ফিলিস্তিনিদের অধিকার রক্ষায় বৈশ্বিক বিভিন্ন ফোরামে কাজ অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
ফিলিস্তিন
আইসিজে মানবতার পক্ষে রায় দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ আল মালিকি। আদালতের রায়কে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, আইসিজের বিচারকরা তথ্য-প্রমাণ ও আইনের মূল্যায়ন করেছেন। তারা মানবতা ও আন্তর্জাতিক আইনের পক্ষে রায় দিয়েছেন।
হামাস
ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস বিশ্ব আদালতের এ রায়কে গুরুত্বপূর্ণ আখ্যা দিয়ে স্বাগত জানিয়েছে। সংগঠনটি বলছে, এ রায় বিশ্ব থেকে ইসরায়েলকে বিচ্ছিন্ন করতে অবদান রাখবে। এক বিবৃতিতে হামাস জানায়, আইসিজের এ রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি যা ইসরায়েলকে বিচ্ছিন্ন করতে এবং গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অপরাধ প্রকাশ্যে নিয়ে আসতে অবদান রাখবে।
ইসরায়েল
ফিলিস্তিনের পক্ষে যাওয়ায় আইসিজের এই রায়েকে ভালোভাবে নেয়নি ইসরায়েল। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, গাজায় যুদ্ধবিরতির আবেদন প্রত্যাখ্যান আদালতের সঠিক সিদ্ধান্ত। তবে গণহত্যা নিয়ে আলোচনা করা উচিত হয়নি।
তিনি বলেন, যুদ্ধ থামানোর নির্দেশ দেওয়া হলে ইসরায়েলেকে আত্মরক্ষার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হতো। ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা করছে বলে নিছক দাবিটি কেবল মিথ্যাই নয়, এটি গর্হিত। এই বিষয়ে আদালতের আলোচনার ইচ্ছা এমন একটি কালিমা যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম গেলেও মুছে যাবে না।
এর আগে গত ডিসেম্বরে গাজায় গণহত্যা চালানোর অভিযোগ এনে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আইসিজেতে মামলাটি করে দক্ষিণ আফ্রিকা। এ মামলার ওপর চলতি মাসের শুরুর দিকে আইসিজেতে দুদিনের শুনানি হয়।
শুনানিতে দক্ষিণ আফ্রিকা আন্তর্জাতিক আদালতের কাছে ৯টি আরজি জানায়। এসবের মধ্যে গাজায় ইসরায়েলের সব ধরনের সামরিক কার্যক্রম বন্ধে জরুরি ভিত্তিতে নির্দেশ দিতে আবেদন জানিয়েছিল দেশটি। তবে আদালত এই ধরনের কোনো নির্দেশ দেননি। এ ছাড়া ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার যে অভিযোগ দক্ষিণ আফ্রিকা এনেছে সেটি নিয়েও কোনো রায় দেননি আদালত। এ বিষয়ের ওপর রায় দিতে কয়েক বছর সময় লাগতে পারে।
মন্তব্য করুন