ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যাকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় ত্রাণ সংস্থা ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের (ডব্লিউসিকে) সাত কর্মী নিহত হয়েছেন। এরপর থেকে সংস্থাটি গাজায় কার্যক্রম স্থগিত করেছে। সংস্থাটির কার্যক্রম স্থগিত হওয়ায় পরিবারের খাবার নিয়ে হতভম্ব হয়ে পড়েছেন অনেক ফিলিস্তিনি পরিবার। বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। কেবল ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন নয়, তাদের সঙ্গে কাজ করা আরেকটি মার্কিন ত্রাণ সংস্থা আনেরাও তাদের কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে। কেননা ইসরায়েলি হামলায় স্থানীয় কর্মী ও তাদের পরিবারগুলো বাড়তে থাকা ঝুঁকির মুখে পড়ছেন। এ দুই সংস্থা গাজায় প্রতি সপ্তাহে অন্তত ২০ লাখ খাবারের প্যাকেট সরবরাহ করে থাকে।
জাতিসংঘের সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, ইসরায়েলের কঠোর অবরোধ, ত্রাণ প্রবেশে বাধা ও চলমান সহিংসতায় গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দার মধ্যে প্রায় ১১ লাখ দুর্ভিক্ষের মুখে রয়েছেন। ডব্লিউসিকের ত্রাণ কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ায় সাইপ্রাস থেকে গাজায় ত্রাণ আসার একটি করিডোরের কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে গেছে। গাজার উত্তরাংশে ত্রাণ দুর্ভিক্ষ এড়াতে গত মাসে ডব্লিউসিকে করিডোরটি স্থাপনে সহায়তা করেছিল।
গত সোমবার রাতে ত্রাণ সরবরাহের জন্য নির্ধারিত একটি উপকূলীয় সড়ক দিয়ে ডব্লিউসিকের একটি গাড়িবহর দক্ষিণের দিকে যাচ্ছিল। এ সময় তারা ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার কবলে পড়ে। এর কিছুক্ষণ আগে সংস্থাটি একটি বার্জ থেকে শতাধিক টন খাদ্য সহায়তা নামিয়ে দিয়ের আল বালাহর একটি গুদামে স্থানান্তর করেছিল।
স্থানান্তর করা ওই বার্জটি গাজা উপকূলে ৪টি জলযানের সাহায্যে এসেছিল। তবে ত্রাণকর্মীদের ওপর হামলার পর ২৪০ টন খাদ্য ত্রাণবাহী জাহাজ সাইপ্রাসে ফিরে গেছে।
নরওয়ে শরণার্থী কাউন্সিল জানিয়েছে, ওয়াল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের সঙ্গে যা হয়েছে তাতে ত্রাণ পুরো পদ্ধতি হুমকির মুখে পড়েছে। এখন এ ব্যবস্থা খাদের কিনারে এসে দাঁড়িয়েছে।
সংস্থাটি এ হামলার বিষয়ে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীকে অভিযুক্ত করেছে। তাদের দাবি, ইসরায়েল জেনেবুঝেই তাদের লোগোসংবলিত গাড়িতে হামলা করেছে। তারা ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করেই বের হয়েছিল। হামলায় নিহত ত্রাণকর্মীদের মধ্যে ব্রিটিশ, পোলিশ, অস্ট্রেলীয়, ফিলিস্তিনি ও যুক্তরাষ্ট্র-কানাডার একজন দ্বৈত নাগরিক রয়েছেন।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর চিফ অব স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারজি হালেভি এ ঘটনাকে গুরুতর ভুল হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তারা রাতের অন্ধকারে ত্রাণবহরটিকে শনাক্ত করতে পারেননি বলেও জানানো হয়েছে।
নরওয়ে শরণার্থী কাউন্সিলের মহাসচিব ও জাতিসংঘ মানবিকবিষয়ক সাবেক প্রধান জ্যান এগল্যান্ড জানান, ওয়াল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের কার্যক্রম বন্ধ করা মানে গাজায় আরও দুর্ভিক্ষ, মৃত শিশু এবং পুষ্টিহীনতা ও মহামারি চরম আকার ধারণ করা।
মন্তব্য করুন