ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় আট মাসের বেশি সময় ধরে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি সেনারা। উপত্যকায় দীর্ঘ সময় অভিযান চালানোর পরও নিজেদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি তারা। এমন পরিস্থিতিতে পদত্যাগের হুমকি দিয়েছেন ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সদস্য বেনি গান্টজ।
শুক্রবার (০৭ জুন) আনাদোলু এজেন্সির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শনিবার (০৮ জুন) ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সদস্য বেনি গান্টজ জরুরি সরকার ব্যবস্থা থেকে পদত্যাগ করতে পারেন। গাজা উপত্যকায় ‘বিজয়ের জন্য’ সুস্পষ্ট পরিকল্পনা তৈরির নির্ধারিত মেয়াদ গত মাসে শেষ হওয়ার পর তিনি এ হুমকি দিয়েছেন।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কান জানিয়েছে, গাজায় নির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রণয়নে ব্যর্থতার কারণে গান্টজ পদত্যাগপত্র জমা দিতে পারেন। তার এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে চাপ দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি তাকে তার পদে বহাল থাকার অনুরোধ জানিয়েছে।
কান জানিয়েছে, ইসরায়েলি জিম্মিদের পরিবারও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামীদের সংগঠন হামাসের সঙ্গে বন্দিদের বিনিময় চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত পদত্যাগ না করার আহ্বান জানিয়েছেন।
গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় যুদ্ধ শুরু হয়। এরপর ১১ অক্টোবর ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভায় যোগ দেন গান্টজ। তিনি গত ৪ জুনের মধ্যে গাজা উপত্যায় বিস্তৃতভাবে যুদ্ধপরবর্তী পরিকল্পনা তৈরির আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন। এ সময়ের মধ্যে পরিকল্পনা তৈরি না হলে পদত্যাগের হুমকি দিয়েছিলেন তিনি।
এর আগে গাজায় যুদ্ধ বন্ধে তিন স্তরের প্রস্তাবনা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মার্কিন প্রেসিডেন্টের এ পরিকল্পনা মেনে নিলে জোট ভাঙার হুমকি দিয়েছেন দেশটির কট্টর ডানপন্থি দুজন মন্ত্রী। দেশটির অর্থমন্ত্রী বেজালের স্মাটরিচ ও নিরাপত্তাবিষয়কমন্ত্রী ইতামার বেন-গিভির বলেন, তারা হামাসকে নির্মূলের আগে কোনো ধরনের চুক্তির বিরোধী।
গত শনিবার (০১ জুন) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী স্মাটরিচ বলেন, প্রস্তাবিত রূপরেখা মেনে নিলে এবং হামাসকে নির্মূল না করে ও জিম্মিদের না ফিরিয়ে যুদ্ধের পরিসমাপ্তি হলে সরকারে থাকব না।
অর্থমন্ত্রীর মতো একই সুরে কথা বলেছেন নিরাপত্তামন্ত্রী বেন-গিভির। তিনি বলেন, এ চুক্তির অর্থ হলো যুদ্ধের অবসান এবং হামাসকে নির্মূলের লক্ষ্য থেকে সরে আসা। এটি একটি বেপরোয়া চুক্তি। এ চুক্তিতে ইসরায়েলের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়ার চেয়ে ক্ষমতাসীন জোট ভেঙে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন তিনি।
গত ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে প্রবেশ করে নজিরবিহীন হামলা চালিয়ে ১২০০ ইসরায়েলিকে হত্যার পাশাপাশি প্রায় ২৫০ ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিককে গাজায় বন্দি করে নিয়ে আসে হামাস। একই দিন হামাসকে নির্মূল এবং বন্দিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী এই সংগঠনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে ইসরায়েল। গত নভেম্বরে সাতদিনের যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিনিময়ে ১১০ ইসরায়েলি বন্দিকে হামাস মুক্তি দিলেও এখনো তাদের হাতে শতাধিক বন্দি আছেন।
অন্যদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৩৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। তাদের অধিকাংশ নারী ও শিশু। এ ছাড়া এ পর্যন্ত ৭৭ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছে।
মন্তব্য করুন