

আজীবন ফিলিস্তিনের পক্ষে লড়াই করেছেন তিনি। নিরীহ ফিলিস্তিনিদের জন্য তার ত্যাগ সারা বিশ্বে পেয়েছে আলাদা স্বীকৃতি। এবার তিনি নিজ দেশে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। বলছিলাম আয়ারল্যান্ডের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ক্যাথরিন কনলির কথা।
দেশটির সদ্য সমাপ্ত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইতিহাস গড়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ক্যাথরিন। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের অভিজ্ঞতা ও জনবান্ধব ভাবমূর্তি নিয়ে তিনি জনগণের আস্থা অর্জন করেছেন। এই নির্বাচনে তার জয় কেবল রাজনৈতিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত নয়; বরং আয়ারল্যান্ডের সামাজিক চেতনায় নতুন উত্থানও নির্দেশ করছে।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর, ক্যাথরিন কনোলিকে অনেকেই ‘ফিলিস্তিনপন্থি’ বলে আখ্যা দিচ্ছেন। কিন্তু বিষয়টি মোটেই নতুন নয়, কারণ কনোলি বহু বছর ধরেই ফিলিস্তিনের প্রতি আয়ারল্যান্ডের নীতিতে একধরনের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি রাখার আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন। তিনি গলওয়ে থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। এসময় ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি দখল নীতি ও গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলার বিরুদ্ধে সরব থেকেছেন।
২০২১ সালে, আয়ারল্যান্ডের সংসদে তিনি একটি প্রস্তাব সমর্থন করেছিলেন যেখানে ইসরায়েলের দখল নীতিকে সরাসরি আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে দাবি করেন কনলি। ওই সময়েও তিনি আরও বলেন, যখন ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়, তখন নীরব থাকা মানে সংঘটিত অপরাধকে সহযোগিতা করা।
অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, আয়ারল্যান্ডের রাজনীতিতে এমন স্পষ্ট ফিলিস্তিনপন্থি অবস্থান নেওয়া একটি বিরল ঘটনা। কিন্তু দেশটির বড় একটি অংশ—বিশেষত তরুণ প্রজন্ম কনোলির ফিলিস্তিনের প্রতি এই দৃঢ় অবস্থানের সঙ্গে পুরোপুরি একমত।
কনোলি প্রায়ই মানবাধিকার সংস্থা ও আন্তর্জাতিক ফোরামে ফিলিস্তিনিদের দুরবস্থা নিয়ে জোরালো বক্তব্য দিয়েছেন। পাশাপাশি গাজায় মানবিক সহায়তা পাঠানো এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞার আহ্বানও জানিয়েছেন একাধিকবার। এমনকি গত বছর তিনি এক বক্তৃতায় বলেন—যে শিশুরা প্রতিদিন গাজায় ধ্বংসস্তূপের মধ্যে বড় হচ্ছে, তাদের জন্য আমাদের নৈতিক দায়িত্ব আছে। আমাদের সবার উচিত বৈশ্বিকভাবে গাজার পাশে দাড়ানো।
তবে সমালোচকরা বলছেন, তার এই অবস্থান আয়ারল্যান্ডের পররাষ্ট্রনীতিতে একধরনের ভারসাম্যহীনতা আনতে পারে। কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে কনোলি আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে ফিলিস্তিন প্রশ্নে খুব বেশি সক্রিয় হলে আয়ারল্যান্ড-ইসরায়েলের মধ্যকার বিদ্যমান সম্পর্কের টানাপোড়েন বাড়তে পারে। ফলে অভ্যন্তরীণভাবে এটি একধরনের অস্বস্তিও তৈরি করতে পারে তার জন্য।
সবকিছুর পরও, আয়ারল্যান্ডের জনমতের একটা বড় অংশ মনে করে, তার নির্বাচিত হওয়া দেশটির ঐতিহাসিক সহানুভূতিই একটি সফল প্রতিফলন। কারণ দেশটি একটা সময় পর্যন্ত নিজেও দখল ও বঞ্চনার অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছে। ফলে অনেকেই বলছেন, কনোলির ফিলিস্তিনপন্থি অবস্থান আসলে আয়ারল্যান্ডের নিজস্ব ইতিহাস ও মানবিক মূল্যবোধেরই এক প্রাকৃতিক সম্প্রসারণ।
মন্তব্য করুন