বিশ্বব্যাংক (World Bank) একটি আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থা, যা উন্নয়নশীল দেশগুলোর উন্নয়ন কাজের জন্য ঋণ ও অনুদান দেয়। বিশ্বব্যাংকের আনুষ্ঠানিক লক্ষ্য হলো বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য বিমোচন। বিশ্বব্যাংক সারা বিশ্বের ১৮৯টি সদস্য রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা। এর সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে।
১৯৪৪ সালের জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হ্যাম্পশায়ারের ব্রেটন উডস নামক স্থানে জাতিসংঘ মুদ্রা ও অর্থবিষয়ক সম্মেলন হয়। ওই সম্মেলনে দুটি প্রতিষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত হয়। তা হলো আইএমএফ এবং পুনর্গঠন ও উন্নয়নের জন্য আন্তর্জাতিক ব্যাংক বা বিশ্বব্যাংক। এ সম্মেলনে আরও অনেক দেশের প্রতিনিধিত্ব থাকলেও দরকষাকষিতে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের সুস্পষ্ট প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয়। ঐতিহ্যগতভাবে আইএমএফের প্রধান নির্বাচিত হন ইউরোপীয় দেশগুলো থেকে আর বিশ্বব্যাংকের প্রধান নির্বাচিত হন যুক্তরাষ্ট্র থেকে।
১৯৬৮ সালের আগে বিশ্বব্যাংক যেসব পুনর্গঠনমূলক এবং উন্নয়নমুখী ঋণ দিত সেগুলো তুলনামূলক কম ছিল। ওই সময় আর্থিক রক্ষণশীলতা নীতি গৃহীত হয় এবং ঋণ পেতে দেশগুলোকে কঠিন সব শর্ত পূরণ করতে হতো। তবে পরে বেশি হারে ঋণ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অতি শিগগিরই অনুভূত হয়।
প্রথম দেশ হিসেবে বিশ্বব্যাংকের ঋণ নেয় ফ্রান্স। ব্যাংকের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জন ম্যাকক্লয় অন্য দুটি ঋণ আবেদনকারী দেশ পোল্যান্ড ও চিলির চেয়ে ফ্রান্সকে বেশি সক্ষম মনে করেছিলেন। ফ্রান্স যে পরিমাণ অর্থের আবেদন করেছিল, তার অর্ধেক (২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) দেওয়া হয়েছিল; তাও কঠিন শর্তের অধীনে। শর্ত ছিল ঋণ পরিশোধকালে দেশটি অন্য যে কোনো ঋণদাতার চেয়ে বিশ্বব্যাংকের ঋণ পরিশোধে অগ্রাধিকার দেবে। এ ছাড়া দেশটির তৎকালীন বাজেটে ব্যাপক কাটছাঁট করতে হয়েছিল। বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি দল কঠোর নজরদারির মধ্যে ফ্রান্সের অর্থনৈতিক কার্যকলাপ অবলোকন করছিল। তাদের মূল লক্ষ্য ছিল দেশটি বিশ্বব্যাংকের শর্তগুলো সঠিকভাবে পালন করছে কিনা। এ ছাড়া ঋণ অনুমোদনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ফরাসি সরকারকে আদেশ দিয়েছিল যে, সরকারে যেসব কমিউনিস্ট সদস্য রয়েছে তাদের সবার আগে বিদায় করতে হবে। ফরাসি সরকার তাদের কোয়ালিশন সহযোগী কমিউনিস্ট পার্টি অব ফ্রান্সের সব সদস্যকে সরকার থেকে বিতাড়ন করতে বাধ্য হয়। এ পদক্ষেপের ঘণ্টাখানেকের মধ্যে ফ্রান্সের ঋণ অনুমোদন করা হয়।
সংগঠনটির আর্টিকেলস অব এগ্রিমেন্ট অনুযায়ী, বৈদেশিক বিনিয়োগ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে সহজতর করা এবং পুঁজির বিনিয়োগ নিশ্চিত করা, এ দুটি উদ্দেশ্য হবে বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রধান নিয়ামক। দুটি প্রতিষ্ঠান নিয়ে বিশ্বব্যাংক গঠিত—পুনর্গঠন ও উন্নয়নের জন্য আন্তর্জাতিক ব্যাংক ‘ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংক ফর রিকনস্ট্রাকশন এবং ডেভেলপমেন্ট (আইবিআরডি)’ আর আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ‘ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইডিএ)’। বিশ্বব্যাংক বিশ্ব ব্যাংক গোষ্ঠী মোট চারটি সদস্যের মধ্যে একটি। অন্য তিনটি প্রতিষ্ঠান হলো- ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন, বহুপাক্ষিক বিনিয়োগ গ্যারান্টি সংস্থা বা মিগা ও ‘ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর সেটেলমেন্ট অব ইনভেস্টমেন্ট ডিসপিউটস (আইসিএসআইডি)’।
বিশ্বব্যাংকের প্রধান হচ্ছে প্রেসিডেন্ট। তিনি পুরো বিশ্ব ব্যাংক গোষ্ঠীর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরিচালনা পর্ষদের সভা এবং ব্যাংকের সার্বিক ব্যবস্থাপনা প্রেসিডেন্টের ওপর ন্যস্ত থাকে। ঐতিহ্যগতভাবে, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট সবসময় যুক্তরাষ্ট্র দ্বারা মনোনীত এবং মার্কিন নাগরিক হয়ে থাকে। প্রেসিডেন্টের মেয়াদ হয় ৫ বছর। বর্তমানে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ডেভিড ম্যালপাস। ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট হচ্ছে এর প্রধান ব্যবস্থাপক যারা ব্যাংকের বিভিন্ন অঞ্চল, সেক্টর, নেটওয়ার্ক এবং কর্মকাণ্ডের দায়িত্ব পালন করেন। ব্যবস্থাপনা পর্ষদে দুজন নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট, তিনজন সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ২৪ জন ভাইস প্রেসিডেন্ট রয়েছেন।
মন্তব্য করুন