কাঁটাতারের বাধা অতিক্রম করে তথাকথিত ‘শত্রু’ দেশে বন্ধুত্ব আর ভালোবাসা ছড়ালেন এক পাকিস্তানি ভ্লগার। ৩০ দিনের ‘বন্ধুত্বের’ সফরে আবরার হাসান পাড়ি দিয়েছেন ভারতের সাত হাজার কিলোমিটার পথ। এই দীর্ঘ সফরে তিনি আবিষ্কার করেন, যেখানেই তিনি পা রেখেছেন, দুই দেশের বৈরিতাপূর্ণ সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও তাকে পরম মমতায় বরণ করে নেওয়া হয়েছে।
এনডিটিভি জানায়, আবরার এপ্রিলের ৩ তারিখে তার যাত্রা শুরু করেন। এর আগে বহুবার আবেদন করেও ভারতের ভিসা জোটেনি তার।
নানা জটিলতার পর ভিসা পেয়ে ভারতে এসে মোটরসাইকেলে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়িয়েছেন আবরার। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দিল্লি, হরিয়ানা, রাজস্থান, মুম্বাই, কেরালাসহ বিবিধ জায়গার ভিডিও আপলোড করেছেন। ইউটিউবে তার চ্যানেলের নাম ‘ওয়াইল্ডলেন্স বাই আবরার’।
এ ভ্রমণে আবরারের সঙ্গী ছিল বিএমডব্লিউ ট্রেইল মোটরসাইকেল। চলতি পথের দৃশ্য হেলমেটে লাগানো ক্যামেরায় রেকর্ড করেন। এ ছাড়া তার প্রফেশনাল ক্যামেরাও রয়েছে।
ভারতের সৌন্দর্য মুগ্ধ করেছে আবরারকে। কেরালা ভ্রমণের ভিডিওতে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘কেরালা অবশ্যই ভ্রমণ করার মতো একটি জায়গা। কেরালাকে কেন ঈশ্বরের নিজের দেশ বলা হয়, বুঝতে পেরেছি। কেরালার ব্যাকওয়াটার এখানকার অসাধারণ জায়গাগুলোর মধ্যে অন্যতম।’
রাজস্থান নিয়েও তিনি চমৎকার অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন। রাজস্থান ভারতের সবচেয়ে বড় রাজ্য। জায়গাটি ‘রাজাদের আবাসস্থল’ হিসেবে পরিচিত। এ ছাড়া এখানে রয়েছে অজস্র নয়নাভিরাম দুর্গ, প্রাসাদ, মন্দির ও মসজিদ।
মার্চের ১৪ তারিখে তিনি লিখেছেন, ‘ভারতের উত্তর থেকে দক্ষিণে এত সব বৈচিত্র্যময় দৃশ্য! প্রতিদিন আমি নতুন কিছু দেখি এবং স্থানীয় মানুষের বন্ধুসুলভ আচরণ আমার অভিজ্ঞতাকে আরও সুন্দর করে তোলে।
এসব পোস্টে অসংখ্য ফলোয়ার কমেন্ট করেছেন। একজন লিখেছেন, আপনার ভারত সিরিজের সব ভিডিও আমার খুব ভালো লেগেছে। তবে সবচেয়ে ভালো লেগেছে পাঞ্জাব। আমি ওটা দুইবার দেখেছে। এমন ভালো কাজ চালিয়ে যান।
ভারত-পাকিস্তানের বৈরিতা
১৯৪৭-এ দেশভাগের দুই মাসের মাথায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে প্রথম যুদ্ধ হয়। যুদ্ধের কারণ ছিল কাশ্মীর। ১৯৬৫ সালে কাশ্মীর নিয়ে আরও বড় পরিসরে যুদ্ধ হয়। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের কাছ থেকে বাংলাদেশের স্বাধীন হওয়ার যুদ্ধে সহায়তা করতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে ভারত। ১৯৯৯ সালে পাকিস্তানি সেনা এবং জঙ্গিরা কার্গিল পর্বতে ভারতের একটি সামরিক চৌকি দখল করে নেয়।
২০০৮ সালে মুম্বাইয়ের প্রধান রেলওয়ে স্টেশন, বিলাসবহুল একটি হোটেল এবং একটি ইহুদি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে ৬০ ঘণ্টা ধরে চলা জঙ্গি হামলায় ১৬৬ জন নিহত হন। ভারতের অভিযোগ, ওই হামলার পেছনে রয়েছে পাকিস্তানি গ্রুপ লস্কর-ই-তৈয়বা। ২০১৯ সালে কাশ্মীরের পুলওয়ামায় একটি সামরিক কনভয়ে আত্মঘাতী হামলায় অন্তত ৩৪ সেনাসদস্য নিহত হন। পাকিস্তানভিত্তিক নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জয়শ-ই-মোহাম্মদ এই হামলার দায় স্বীকার করে।
এসব ঘটনা ছাড়াও আরও বহুবার বিবিধ বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তবে এমন বৈরী সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও একজন ভ্লগারের মাধ্যমে দুই দেশের মানুষের ভালোবাসা আবার যেন খানিকটা প্রাণ ফিরে পেল বলে মন্তব্য নেটিজেনদের।
মন্তব্য করুন