চার দিন ধরে চলা টানটান উত্তেজনার পর ভারত ও পাকিস্তান শেষমেশ যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছেছে। তবে এই স্বল্পমেয়াদি সংঘাত দক্ষিণ এশিয়ার আকাশে এক ঐতিহাসিক মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। যুদ্ধবিমানের মুখোমুখি লড়াইয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে পশ্চিমা প্রযুক্তির শ্রেষ্ঠত্বের দাবি, আর উত্থান ঘটেছে চীনা উদ্ভাবনের।
এর আগে সংঘাত শুরু হয় ৭ মে দিবাগত রাতে। স্থানীয় সময় রাত ১টা ৫ মিনিট থেকে ১টা ৩০ মিনিটের মধ্যে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে বিমান হামলা চালায় ভারতীয় বিমানবাহিনী (আইএএফ)।
জবাবে পাল্টা প্রতিরোধে নামে পাকিস্তান। দেশটির দাবি, এ অভিযানে তারা রচনা করেছে এক নজিরবিহীন ইতিহাস- ফরাসি নির্মিত অত্যাধুনিক রাফাল যুদ্ধবিমানকে ভূপাতিত করেছে তাদের নিজস্ব চীনা প্রযুক্তির জে-১০সি ফাইটার জেট ব্যবহার করে।
সোমবার (১২ মে) পাকিস্তানের সম্প্রচারিত চ্যানেল জিও নিউজ ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধবিমান নিয়ে এক বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, এ ঘটনায় বৈশ্বিক সামরিক ভারসাম্যে বড় ধরনের প্রতিফলন ঘটেছে।
উল্লেখ্য, রাফাল যুদ্ধবিমান একটি ৪.৫ প্রজন্মের বহুমুখী যুদ্ধবিমান, যার মূল্য প্রায় ১২০ মিলিয়ন ডলার। বিপরীতে, জে-১০সি একই প্রজন্মের হলেও এর মূল্য মাত্র ৪০ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু শুধু দামে নয়, সংঘাতে পারফরম্যান্সেও রাফালের চেয়ে এগিয়ে থেকেছে জে-১০সি।
বিশ্লেষকদের মতে, জে-১০সির হাতে রাফালের পতন সামরিক প্রযুক্তির জগতে একটি মোড়বদলের বার্তা বহন করে। কৌশলগত দৃষ্টিকোণ থেকে পাকিস্তানের এ জয় প্রযুক্তির ব্যবহারে কার্যকারিতা ও কৌশলগত দক্ষতার মিলনকে নির্দেশ করে।
রাফাল ভূপাতিত হওয়ার খবরে ফরাসি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ডাসল্ট এভিয়েশনের শেয়ার মূল্য একদিনেই ৬ শতাংশ পড়ে যায়, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সংকটকে তুলে ধরে। বিপরীতে, জে-১০সির নির্মাতা চীনের এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রি করপোরেশন অব চায়নার শেয়ারমূল্য শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জে ৩৮ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। বাজার প্রতিক্রিয়া প্রমাণ করে- বিশ্বের আস্থা এখন আর কেবল পশ্চিমের দিকে ঝুঁকে নেই।
এদিকে এই সংঘাত আরও একটি বাস্তবতা সামনে নিয়ে এসেছে- ‘প্রথমে লক, প্রথমে কিল’ মতবাদ। (যুদ্ধ জয়ের জন্য দামি প্ল্যাটফর্ম নয়, বরং ‘কে আগে দেখে, আগে আঘাত হানে’- এই দক্ষতাই আধুনিক যুদ্ধে মূল নিয়ামক) অত্যাধুনিক রাফালের বহুল প্রচারিত মেটিওর ক্ষেপণাস্ত্রকে টেক্কা দিয়েছে জে-১০সিতে ব্যবহৃত মাত্র ১ লাখ ডলারের চীনা পিএল-১৫ ক্ষেপণাস্ত্র।
এমনকি এ লড়াই কেবল যুদ্ধবিমান বনাম যুদ্ধবিমান নয়, বরং পুরো ‘কিল চেইন’-এর ওপর নির্ভর করেছে- রাডার, ডেটালিঙ্ক, সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন ও ক্ষেপণাস্ত্র গাইডেন্স ইত্যাদি।
পাকিস্তানি পাইলটদের কৌশল, প্রশিক্ষণ ও পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণও এই সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। একাধিক সামরিক বিশ্লেষক বলছেন, এটি শুধু যন্ত্রের জয় নয়, বরং প্রশিক্ষণ, ধৈর্য ও চূড়ান্ত মুহূর্তে কৌশলগত দিকনির্দেশনার সফল প্রয়োগের ফল।
এ ঘটনার পর অনেক উন্নয়নশীল দেশ তাদের যুদ্ধবিমান অধিগ্রহণের কৌশল পুনর্বিবেচনা করছে। রাফাল, ইউরোফাইটার টাইফুন ও এফ-১৬-এর মতো পশ্চিমা জেটগুলোর বিকল্প হিসেবে এখন জে-১০সি কার্যকর একটি সমাধান হিসেবে বৈধতা পাচ্ছে।
মন্তব্য করুন