ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা কার্যকর হলেও, দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এই প্রেক্ষাপটে ভারতের অভ্যন্তরে চিরুনি অভিযানে নেমেছে নরেন্দ্র মোদি সরকার।
সন্দেহ করা হচ্ছে, পাকিস্তানের হয়ে দেশীয় নাগরিকরাই ভারতের সামরিক তথ্য পাচার করছে। একের পর এক দেশের নাগরিককে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে গ্রেপ্তার করছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।
পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে এখন পর্যন্ত ১০ জনের বেশি ভারতীয় নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রয়েছেন ইউটিউবার, ব্যবসায়ী ও নিরাপত্তা কর্মী। সর্বশেষ গুজরাটের কচ্ছ জেলার এক বাসিন্দা শাহদেব সিং গোহিলকে গ্রেপ্তার করেছে ভারতের সন্ত্রাসবিরোধী স্কোয়াড (এটিএস)। গোহিল পেশায় একজন স্বাস্থ্যকর্মী।
শনিবার (২৪ মে) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গোহিল ২০২৩ সালে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ‘অদিতি ভরদ্বাজ’ নামে পরিচয় দেওয়া এক পাকিস্তানি এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগে আসে। ওই এজেন্টের অনুরোধে গোহিল ভারতীয় বিমানবাহিনী এবং সীমান্ত রক্ষী বাহিনী -এর বিভিন্ন স্থাপনার ছবি ও ভিডিও পাঠায়।
ভারতের সন্ত্রাসবিরোধী স্কোয়াড কর্মকর্তা কে সিদ্ধার্থ জানান, অভিযুক্ত গোহিল একটি ভুয়া পরিচয়ের মাধ্যমে সিমকার্ড কিনে হোয়াটসঅ্যাপে সক্রিয় হয়ে পড়ে এবং সেই নম্বর থেকেই পাকিস্তানভিত্তিক যোগাযোগ চালিয়ে যায়।
ফরেনসিক বিশ্লেষণে নিশ্চিত হওয়া গেছে, ওই নম্বর ব্যবহার করে যে তথ্য পাঠানো হয়েছে, তা পাকিস্তান থেকে পরিচালিত হচ্ছিল। গোহিলকে তার কাজের জন্য ৪০ হাজার রুপি প্রদান করা হয়েছিল।
গুপ্তচরবৃত্তির পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জাতীয়তাবাদী নীতির অংশ হিসেবে ভারত সরকার অবৈধ বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা অভিবাসীদের ধরপাকড় জোরদার করেছে। অভিযোগ উঠেছে, তাদের বাংলাদেশে ‘পুশইন’ করা হচ্ছে।
শুধু তা-ই নয়, রোহিঙ্গাদের আটক করে মিয়ানমারের জলসীমায় ফেলে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে বলে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদন বলছে। জাতিসংঘ ইতোমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে।
প্রসঙ্গত, গত মাসের ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে এক বন্দুক হামলায় ২৬ জন ভারতীয় পর্যটক নিহত হওয়ার পর, পাকিস্তানকে দায়ী করে পাল্টা আক্রমণ চালায় ভারত। ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামের ওই অভিযানে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর ও ভেতরদেশীয় এলাকায় হামলা চালায় ভারতীয় সেনা।
জবাবে পাকিস্তানও ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর ও সীমান্তবর্তী অঞ্চলে হামলা চালায়। পরিস্থিতি যখন ভয়াবহ পারমাণবিক উত্তেজনার দিকে এগোচ্ছিল, তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় দুই দেশ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়।
তবে এই যুদ্ধবিরতির মধ্যেও দুই দেশের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিশেষত, গুপ্তচরবৃত্তি ও তথ্য পাচার ইস্যুকে ঘিরে ভারতের কঠোর অবস্থান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে নতুন করে চাপ সৃষ্টি করেছে।
মন্তব্য করুন