ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১১ জুলাই ২০২৫, ০২:৩৪ পিএম
আপডেট : ১১ জুলাই ২০২৫, ০২:৩৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বিয়ের ৩১ বছর পর দাখিল পাস করলেন সাংবাদিক দম্পতি

সাংবাদিক দম্পতি কাইসার হামিদ ও রোকেয়া আক্তার। ছবি : সংগৃহীত
সাংবাদিক দম্পতি কাইসার হামিদ ও রোকেয়া আক্তার। ছবি : সংগৃহীত

‘বয়স কেবল একটি সংখ্যা’—এই বাক্যটির জীবন্ত উদাহরণ হয়ে উঠেছে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরের সাংবাদিক মুহাম্মদ কাইসার হামিদ (৫১) ও সাংবাদিক মুছাম্মৎ রোকেয়া আক্তার (৪৪) দম্পতির মাধ্যমে। দুজনই দাখিল (এসএসসি সমমান) পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সমান নম্বর জিপিএ ৪ দশমিক ১১ পেয়ে সাফল্য অর্জন করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ হলে উত্তীর্ণ হওয়ার খবর পেয়ে যেন আনন্দের বন্যা বইছে এই দম্পতির মাঝে।বাবা-মায়ের এমন সাফল্যে খুশির জোয়ারে ভাসছেন ছেলে-মেয়েরাও।

মুহাম্মদ কাইসার হামিদ দৈনিক নয়াদিগন্ত এবং মুছাম্মৎ রোকেয়া আক্তার দৈনিক বাংলাদেশ বুলেটিন পত্রিকার কুলিয়ারচর প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত আছেন। কাইসার হামিদের বাড়ি কুলিয়ারচর উপজেলার পশ্চিম গোবরিয়া গ্রামে। মুছাম্মৎ রোকেয়া আক্তার জেলার কটিয়াদী উপজেলার দক্ষিণ লোহাজুরী গ্রামের মেয়ে। তারা দুজনে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে করেন আজ থেকে ৩১ বছর আগে অর্থাৎ ১৯৯৪ সালের ১৬ মার্চ। এ দম্পতির পাঁচ সন্তান, সবাই পড়াশোনা করছেন।

এদিকে বিয়ের ৩১ বছর পর একসঙ্গে দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করায় এ দম্পতিকে অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকসহ সরাসরি শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। কেউ কেউ মিষ্টিমুখ করাতেও দেখা গেছে।

দম্পতির শিক্ষাজীবনের এই নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে নরসিংদী জেলার বেলাব উপজেলার বিন্নাবাইদ দারুল উলুম দাখিল মাদ্রাসা থেকে। ওই মাদ্রাসা থেকে তারা দুজন বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা-এর অধীনে কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচর উপজেলার লক্ষ্মীপুর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজ কেন্দ্রে দাখিল (এসএসসি সমমান) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে এ সফলতা অর্জন করেছেন।

পড়াশোনা মাঝপথে থেমে যাওয়া এই দম্পতির জীবনে এসএসসি পরীক্ষা যেন দ্বিতীয় সূচনা। তাদের এই যাত্রা শুধু তাদের নিজেদের জন্যই নয়; বরং সমাজের বহু মানুষকে নতুন করে ভাবতে শেখাবে—‘শিখতে কোনো বয়স লাগে না।’

এদিকে পরিবারের অন্য সদস্যরা উচ্চশিক্ষিত হলেও তারা দুজন মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস না করায় তাদের মনে দুঃখ ছিল। অদম্য ইচ্ছা আর মানসিক শক্তির জোরে এবার তারা সেই দুঃখ ঘুচিয়েছেন।

সাংবাদিকতার পাশাপাশি কাইসার হামিদ সাহিত্যচর্চা এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনেরও একজন সক্রিয় কর্মী। কবিতা লেখেন। এরই মধ্যে বিভিন্ন পত্রিকা ও সাময়িকীতে তার শতাধিক কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। বই পড়া ও ছবি তোলা তার শখ। স্থানীয়ভাবে সামাজিক উন্নয়ন, শিক্ষা বিস্তারসহ নানামুখী উন্নয়নের সঙ্গে তিনি সক্রিয়ভাবে জড়িত রয়েছেন। এসএসসি পাস না করেও তিনি বেসরকারি বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার ও অফিসার পদে কাজ করেছেন। তাকে নিয়ে শুধু গর্বই নয়, অহংকার করে এলাকাবাসী। এ ছাড়া তিনি দেশের বিভিন্ন পত্রিকায় প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

মুহাম্মদ কাইসার হামিদ কালবেলাকে বলেন, সক্রিয় সাংবাদিকতার বয়স ৩২ বছর পেরিয়েছে। সমাজ থেকে অনেক ভালো কিছু পেয়েছি। কেবল কষ্ট ছিল পড়াশোনা নিয়ে। স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই একই কষ্ট। বাইরে গেলে পড়াশোনার প্রসঙ্গ এলে চুপ থাকতে হতো। অনেকে ইচ্ছা করে খোঁচা দিতেন। এসএসসি পাস না করে সাংবাদিকতা করছেন কীভাবে, অনেকে প্রশ্ন তুলতেন।

তিনি বলেন, কুলিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া ইসলাম লুনার অনুপ্রেরণায় ও তার ছোট ভাই মো. আবদুল খালেকের সহযোগিতায় বিন্নাবাইদ দারুল উলুম দাখিল মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে এসএসসি পাসের পরিকল্পনা করেন। সেই অনুযায়ী দুজনে ভালো প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দেন।

পরীক্ষায় পাস করতে পেরে আনন্দিত রোকেয়া আক্তার বলেন, ‘অল্প বয়সে বিয়ে হয়। পরে সন্তান। এ কারণে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। এই কষ্ট প্রায় তিন যুগ বয়ে বেড়াতে হয়েছে। আমরা দুজনই কষ্ট দূর করার উপায় খুঁজতাম। এটা বুঝতে পারি, কষ্ট দূর করতে হলে পরীক্ষা দিয়ে পাস করার বিকল্প নেই। সে কারণেই সাহস করে পরীক্ষা দিলাম এবং ফল পেলাম।’

বিলম্বে হলেও মা-বাবা এসএসসি পাস করায় খুশি সন্তানেরাও। দ্বিতীয় সন্তান জেসমিন সুলতানা বলেন, ‘মা-বাবা দুজনই এসএসসি পাস করার বিষয়টি তাদের ভাই-বোনদের অনেক আনন্দ দিচ্ছে।’

বিন্নাবাইদ দারুল উলুম দাখিল মাদ্রাসার কম্পিউটার ল্যাব সহকারী আলতাফ হোসেন মানিক বলেন, ‘এই দম্পতির অধ্যবসায় আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। আমরা তাদের মঙ্গল কামনা করি।’

এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম হায়দার বলেন, সাংবাদিক দম্পতি এ বছর আমাদের কলেজ থেকে এসএসসি সমমান দাখিল পরীক্ষা দিয়ে ভালো ফল অর্জন করেছেন। প্রায় শেষ বয়সে এসে সংসার সামলেও তারা দুজন যে নজির গড়েছেন, এটা দেশবাসীর কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তাদের সাফল্যে আমরা খুবই খুশি।

লক্ষ্মীপুর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবিহা ফাতেমাতুজ্-জোহরা সাংবাদিক দম্পতির এ সাফল্যকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, শিক্ষা কখনো থেমে থাকে না। বয়স বাধা নয়, মনোবলই আসল। এই বয়সে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়াটা খুব বিরল ও অনুপ্রেরণামূলক। তাদের দেখে অনেকেই নতুন করে পড়াশোনার সাহস পাবেন। আমি তাদের মঙ্গল কামনা করি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রাকসু নির্বাচন : মনোনয়নপত্র বিতরণের সময় বাড়ল, পেছাবে ভোটের তারিখ

এসএ২০ লিগের নিলামে বাংলাদেশের ২৩ ক্রিকেটার

জবি বাংলা বিভাগের এক শিক্ষককে বহিষ্কার, ক্যাম্পাসে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা 

ছোট পর্দায় আসছে জনপ্রিয় তুর্কি সিরিজ ‘সুলতান আব্দুল হামিদ’

অবৈধ মোবাইল দিয়ে বন্দিরা আমাকে কল করেন : কারা মহাপরিদর্শক

বুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশি প্রযোজকের সিনেমা

শেখ হাসিনার সরকার শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে : শামা ওবায়েদ 

অভিজ্ঞতা ছাড়াই চাকরি দিচ্ছে রকমারি ডটকম, বেতন ৩০ হাজার

জীবিকার তাগিদে বের হয়ে প্রাণ হারালেন রফিকুল

হঠাৎ অসুস্থ একই স্কুলের ২২ ছাত্রী

১০

কয়েকটি ইসলামি দলের সঙ্গে জোট নিয়ে আলোচনা হচ্ছে : সালাহউদ্দিন 

১১

দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানোয় পরিবহনমন্ত্রীকে জরিমানা!

১২

নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেটে হামলাকারীদের কী সাজা হতে পারে

১৩

গকসু নির্বাচন : প্রথম দিনে ১৩টি মনোনয়নপত্র বিতরণ

১৪

ববির আবেগঘন পোস্ট

১৫

খুলনায় নদী থেকে বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার

১৬

প্রয়োজনে কেয়ামত পর্যন্ত অডিট বন্ধ থাকবে : এনবিআর চেয়ারম্যান

১৭

১ বলে ১৩ রান নিলেন ভারতের তারকা ওপেনার

১৮

ডাকসু নির্বাচন / প্রচারণার প্রথম দিনই শিবিরের ব্যানার ভাঙচুর

১৯

হিজাব বিতর্কে ভিকারুননিসার সেই শিক্ষিকা বরখাস্ত

২০
X